ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

২৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি, খাতুনগঞ্জে ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫১ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৭
২৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি, খাতুনগঞ্জে ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি আড়তে পানি ঢুকে খাতুনগঞ্জে ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ছবি: উজ্জ্বল ধর, বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ২৩২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। সঙ্গে ছিল জোয়ার, পাহাড়ি ঢল ও উজান বেয়ে আসা পানি। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরীর জনজীবন।

ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-আসাদগঞ্জের নিচতলার আড়ত ও দোকানে পানি ঢুকে পড়েছে। আসাদগঞ্জ ও খাতুনগঞ্জের প্রধান সড়কের ওপর ছিল হাঁটুপানি।

জোয়ারের পানি আটকানোর জন্য সামনে-পেছনে ইট-সিমেন্টের বাঁধ দিলেও শেষ রক্ষা হয়নি। অনেকে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন পানি সেচে।

থাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ দাবি করেন, বৃহত্তর খাতুনগঞ্জের নিচতলার প্রায় সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেই পানি ঢুকে গেছে। প্রাথমিক হিসাবে ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পোষানো কঠিন।

পেঁয়াজের আড়তে হাঁটুপানি।  ছবি: উজ্জ্বল ধর, বাংলানিউজ

খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ইদ্রিস আলী বাংলানিউজকে জানান, পেঁয়াজ-রসুন-আদা পচনশীল পণ্য। এবার পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ তিনটি পণ্য। পানিতে ভিজে যাওয়া এসব পণ্য একদিকে পচন ধরেছে, অন্যদিকে বাজারে ক্রেতা না থাকায় দামও কমে গেছে। ফলে ক্ষতির পাল্লাটা দিন দিন ভারী হচ্ছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গত দুই বছরে খাতুনগঞ্জে জোয়ারের সময় দুই ফুট পানির উচ্চতা বেড়েছে। প্রতিবছর যদি এক ফুট করে পানির উচ্চতা বাড়ে তবে কয়েক বছরে খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্য লাটে উঠবে।

গোসাইলডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মো. আজম বাংলানিউজকে বলেন, বাপদাদার ভিটেমাটি এখানে। এত পানি আগে দেখিনি। গাড়ির গ্যারেজে যখন হাঁটুপানি হলো তখনি দ্রুত গাড়ি বের করে নিয়েছি। রান্নাঘরে পানি, বসার ঘরে পানি, শোবার ঘরে পানি। চারদিকে পানি থই থই করছে।

সরকারি কমার্স কলেজ, এক্সেস রোড, শান্তিবাগ, বেপারিপাড়া, ছোটপুল, হালিশহর, ষোলশহর, প্রবর্তক, বাকলিয়া, চকবাজার, চান্দগাঁও, মোহরা সব জায়গাতেই হাঁটু থেকে কোমরপানি। এসব এলাকার কোথাও কোথাও নৌযানে করে যাত্রী পারাপার হতে দেখা গেছে। কোথাও আবার ভ্যানগাড়িতে কাঠের বেঞ্চ (টুল) বসিয়ে উপরে প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হয়েছে।

ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় কোমর-পানি।  ছবি: উজ্জ্বল ধর, বাংলানিউজ

শুধু সড়ক নয়, বাড়িঘর, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দির, শিশুপার্ক বাদ যায়নি কিছুই। যথারীতি আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালও হয়ে পড়ে পানিবন্দী। হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসএম মোরশেদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা হাসপাতালের চারপাশে অস্থায়ী একটি বাঁধ দিয়েছিলাম যাতে পানি ঢুকতে না পারে। এত বেশি বৃষ্টি হলো, এত বেশি উচ্চতায় জোয়ার এলো সেই বাঁধ উপচে হাঁটুপানি হয়ে গেল হাসপাতালের নিচতলায়। রোগীদের আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আসবাবপত্র সব ভিজে গেল। অন্যান্য ফ্লোরের রোগী, স্বজন, ডাক্তারদের আসা-যাওয়ায় যথেষ্ট দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা প্রাকৃতিক সমস্যা। এটি আড়াল করার সুযোগ নেই। জলাবদ্ধতা থেকে চট্টগ্রামকে মুক্ত করতে হলে সরকারকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হবে। বরাদ্দ দিতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।    

অতি ভারী বৃষ্টিপাত, ভূমিধসের শঙ্কা

১৬৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি, দুর্ভোগ নগরবাসীর

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, আপডেট ১৮৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৭

এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।