ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পানিবন্দি এসপি অফিস-থানা, কাজকর্ম লাটে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
পানিবন্দি এসপি অফিস-থানা, কাজকর্ম লাটে অস্ত্রাগার থেকে নারী কনস্টেবলের বের হওয়ার দৃশ্য (ছবি: সংগৃহীত)

চট্টগ্রাম: এক নাগাড়ে বৃষ্টি হলেই পানি উঠে যায় বন্দরনগরীর হালিশহরে জেলা পুলিশ লাইনে।  সেখানে জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) বর্তমান কার্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।  কার্যালয়ে থাকলে আটকে থাকেন এসপিসহ জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।  আর বাইরে থাকলে অফিসে আর যেতে পারেন না।  পানিতে জেলা পুলিশের ব্যারাক, অস্ত্রাগার, রেশন স্টোর, যানবাহন সব তলিয়ে যায় পানির নিচে। 

শুধু এসপির অফিস কিংবা জেলা পুলিশ লাইন নয়, বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়ে বন্ধ হয়ে যায় নগরীর চার থানার কার্যক্রমও।  থানাগুলো হচ্ছে বাকলিয়া, বন্দর, পতেঙ্গা ও হালিশহর।

 

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের স্থায়ী কার্যালয় হচ্ছে নগরীর নাসিরাবাদে।   পুরনো সেই ভবনটি ভেঙে চারতলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে গত মার্চে।

  এজন্য মার্চ থেকে জেলা পুলিশ লাইনে অস্থায়ী কার্যালয়ে বসছেন এসপিসহ ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা।   জেলা পুলিশের মাসিক অপরাধ সভা, কল্যাণ সভা, সমন্বয় সভাসহ সার্বিক কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে এই কার্যালয়েই।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, একটানা ১৫-২০ মিনিট, সর্বোচ্চ আধাঘণ্টা বৃষ্টি হলেই জেলা পুলিশ লাইনে পানি ঢুকে যায়।   এর সঙ্গে জোয়ারের পানি এলে নিচতলায় এক বুক সমান পানি হয়।  

সূত্রমতে, রোববার (২৩ জুলাই) মাত্র সকাল থেকেই প্লাবিত হয়ে পড়ে জেলা পুলিশ লাইন।   এক বুক সমান পানিতে তলিয়ে গেছে অস্ত্রাগার।   অস্ত্রগুলো মেঝে থেকে তুলে খাঁচায় রাখতে হয়েছে।  

রেজাউল মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, কোন সদস্য যদি ডিউটিতে যান, তবে তার জন্য অস্ত্র বরাদ্দ করতে হয়।   পানি মাড়িয়ে অস্ত্র নিয়ে সেটা তাকে দেয়া এবং এন্ট্রি করা এসব কাজ কার্যত আর করা যায় না।

জেলা পুলিশের রিজার্ভ অফিসে হাঁটু পানি থেকে কোমর সমান পানি উঠে যাওয়ায় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সেখানেও কার্যক্রম বন্ধ ছিল।   পুলিশ সদস্যদের বদলি, পদায়নসহ সার্বিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে পানির জন্য।  

রেজাউল মাসুদ জানান, এমটি স্টোরে শ’খানেক যানবাহন আছে।   যানবাহনের অর্ধেক ঘন্টার পর ঘন্টা থাকছে পানির নিচে।   এতে ‍চাকাসহ যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।   পুলিশ ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, রেশন স্টোরে পানি ঢুকে নষ্ট হচ্ছে মালামাল।  

‘শুধু একদিন-দুইদিন হলে কোন কথা ছিল না।   বৃষ্টি থাকলে তো পানি ঢুকছেই।   প্রতিদিন জোয়ারের পানিতেও ডুবছে।   মহেশখালের বাঁধ কেটে দেয়ার পর দিন দুইবার জোয়ারের পানি ঢুকছে। ’ বলেন রেজাউল মাসুদ

ছবি: সংগৃহীত

সূত্রমতে, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং জেলা পুলিশ লাইনে প্রতিদিন জোয়ারের সময় কমপক্ষে দুই থেকে তিন ঘন্টা কোনো ধরনের কাজ হয় না। নোংরা, ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি মাড়িয়ে এসময় কেউ কার্যালয়ে ঢুকতে চান না।   আবার কেউ কার্যালয় থেকে বেরও হতে চান না।   কার্যত এসময় বন্ধ থাকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও ‍পুলিশ লাইন।  

রেজাউল মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, শুধু পানি হলে এক বিষয়।   কিন্তু নালা-নর্দমা থেকে যেসব পানি উঠে সেগুলো এত আবর্জনায় ভরা আর দুর্গন্ধ, সেগুলো কেউ মাড়াতে চায় না।   গাড়ি নিয়ে পানির ভেতর দিয়ে ঢোকা এবং বের হওয়া যায় না।  এক ভয়ংকর অবস্থা, ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ এটা কল্পনা করতে পারবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা পুলিশ লাইনের কয়েকজন সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, দোতলায় জেলা পুলিশের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বসেন।   পানি সেখানে না উঠলেও সেখানে অফিস কক্ষগুলো নোংরা হয়ে যায়।   আর ব্যারাকে সদস্যদের থাকার কোন পরিবেশ নেই।   অনেকে চর্মরোগসহ নানা অসুখে আক্রান্ত হচ্ছেন।

এদিকে নগর পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সামান্য বৃষ্টি হলেই বাকলিয়া, বন্দর ও পতেঙ্গা থানায় পানি ঢুকে যায়।   বাকলিয়ায় খোদ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষও পানিতে তলিয়ে যায়।   আর হালিশহর থানার সামনের সড়ক পানিতে প্লাবিত হয়ে যাওয়ায় কার্যত সেটিও পানিবন্দি হয়ে পড়ে।  

বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে প্লাবিত থানাগুলোতে বিচারপ্রার্থী কোন মানুষ ঢুকতে পারেন না।   আসামিদের নিয়ে থানায় আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রেও দুর্ভোগ পোহাতে হয় পুলিশ সদস্যদের।   আর অভিযান পরিচালনাসহ নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ থাকে বলে জানিয়েছে সূত্র।  

শুধু থানা নয় আগ্রাবাদ পুলিশ ফাঁড়িসহ নগরীর বেশ কয়েকটি ফাঁড়ির কার্যক্রমও বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানিতে বন্ধ হয়ে যায় বলে সূত্র জানিয়েছে।

হালিশহর থানার ওসি মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হালিশহর থানা একটু উঁচুতে।   থানার ভেতরে পানি ঢোকে না।   তবে থানার আশপাশে আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বিডিআর মাঠ, ট্রাংক রোডে পানি উঠে যায়।   এসময় আমরা থানা থেকে বেরুতে পারি না।   মানুষজনও থানায় ঢুকতে ‍পারে না।

পানিতে প্লাবিত হয়ে চার থানার কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টির কথা স্বীকার করে নগর পুলিশের উপ কমিশনার (সদর) ফারুক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বন্দর থানার নতুন ভবনের কাজ চলছে।   ডিসেম্বরে নতুন ভবন বুঝে পাব।   বাকলিয়া থানার জন্য আমরা একটা বাসা ভাড়া নিয়েছি।   খুব দ্রুত শিফট হবে।   নতুন থানার বরাদ্দ পেয়েছি।   এই অর্থবছরে কাজ শুরু হবে।

‘পতেঙ্গা থানার নতুন ভবনের বরাদ্দও পাওয়া গেছে।   সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু হবে।   হালিশহর থানা নিয়ে একটু সমস্যা আছে।   আমরা জমি খুঁজছি।   কিন্তু এখনও পাইনি।   জমি পেলে তারপর বরাদ্দের বিষয়টি সুরাহা হবে। ’ বলেন ফারুক

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭

রডিজি/টিসি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।