রোববার (২৩ জুলাই) বোয়ালখালী উপজেলা মিলনায়তনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত ৬০তম গণশুনানিতে এ অভিযোগ তুলে ধরেন সেকান্দর আলম বাবর।
তার এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া আখতার বলেন, ঘুষ দেওয়া নেওয়া সমান অপরাধ।
শুধু বাবর নন, এতদিন ধরে নানা সরকারি সংস্থায় সেবা পেতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হওয়া মানুষজন এদিন ভয় ডরহীনভাবে বলেন তাদের অভিযোগ। তুলে ধরেন তাদের কীভাবে হেনস্তা হতে হয়েছে।
এই গণশুনানিতে প্রধান অতিথি ছিলেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ। সঞ্চালনায় ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুকুর রহমান সিকদার।
এসব অভিযোগ শুনে সকল অনিয়ম রোধে একমাসের সময় বেঁধে ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ সরকারি কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ‘এক মাস পর অনিয়ম পাওয়া গেলে কোনো ধরণের শুনানি শোনা হবে না। বিভাগীয় ব্যবস্থা না হয় মামলা দেবে দুদক। ’
এছাড়া তিনি সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব চাওয়া হবে জানিয়ে বলেন, ‘এখনই সাবধান হয়ে যান, নয়তো সোজা জেলে যাবেন। ’
দুদক কমিশনার আগামী মাসের (আগস্ট) ২২ তারিখ বোয়ালখালীতে ‘ফলোআপ সভা’র আয়োজন করা হবে বলে জানান।
নজরুল ইসলাম নামের একজন অভিযোগ করেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের আবাসিক ব্যবস্থা থাকলেও তারা থাকেন না। হাসপাতালে রোগীর প্রেসার মাপেন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা। উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল কর্মকর্তারা চিকিৎসা ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করান। আর চিকিৎসক আসলেও তিনি রোগী না দেখেই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে দেন। অ্যাম্বুলেন ভাড়া নেওয়া হয় ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।
জবাবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রতন কুমার দে বলেন, আবাসিক চিকিৎসকের পদটি বর্তমানে শূন্য রয়েছে। এছাড়া এ পর্যন্ত তার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি।
তিনি এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন জানিয়ে বলেন, অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১০টাকা। এর বেশি নিলে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ করার জন্য বলেন তিনি। এসময় হাসপাতালে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে দুদক কমিনার ব্যবস্থা নিতে বলেন।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বোয়ালখালী জোনাল অফিসের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগীরা। এসময় জেনারেল ব্যবস্থাপক মোবারক উল্লাহ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
এছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, সাব-রেজিষ্ট্রারের কার্যালয়, উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস ও প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগীরা। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিজ নিজ অবস্থান পরিস্কার করেন দপ্তরের কর্মকর্তারা।
এসব অভিযোগ বিবেচনায় নিয়ে শুনানি শেষে দুদক কমিশনার ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ অভিযোগকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে আপনারা সেবা নিবেন। দালাল ধরে কাজ করবেন কেন। পেছনের দরজা দিয়ে নয়, সরাসরি কর্মকর্তাদের কাছে যাবেন। সেবা পাওয়া আপনাদের নাগরিক অধিকার।
২০১৮ সালের মধ্যে বোয়ালখালী উপজেলাকে একটি দুর্নীতি মুক্ত মডেল উপজেলা হিসেবে দেখতে চান জানিয়ে বলেন, ঢাকা থেকে এ উপজেলার সকল কার্যক্রম মনিটরিং করা হবে। অফিসকে দালাল মুক্ত করতে ও নিরীহ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় তার জন্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছবি সম্বলিত নাম ঠিকানা ও পদবী দপ্তরগুলোর সামনে টাঙানোর নিদের্শ দেন। পাশাপাশি "আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত রাখিব’ বার্তাটি সেবাপ্রার্থীদের জন্য দৃশ্যমান স্থানে টানিয়ে রাখতে বলেছেন। এসময় তিনি সেবা গ্রহীতাদের সাথে সংযত ভাষায় আচরণ করার জন্য কর্মকর্তাদের নিদের্শনা দেন।
গণশুনানীতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় দুদক পরিচালক মনিরুজ্জামান, উপ পরিচালক সৈয়দ আহমেদ, সহকারী পরিচালক হুমায়ন কবীর, উপ-সহকারী পরিচালক মো. শফিউল্লাহ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া আখতার, বোয়ালখালী দুদক কমিটি সভাপতি এমএন আলম, সাধারণ সম্পাদক এসএম আফাজুর রহমান, সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
টিএইচ/টিসি