বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমি ও স্বকাল শিশুসাহিত্য সংসদ তিন দিনের এ মেলার আয়োজন করে। বিকেল পাঁচটায় একাডেমি প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন খ্যাতিমান লোকসাহিত্য বিজ্ঞানী ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।
তিনি বলেন, শিল্পসাহিত্যে চট্টগ্রাম অগ্রগামী। চট্টগ্রাম না থাকলে বাংলা সাহিত্যও নেই।
তিনি বলেন, আমাদের পাঠ্যপুস্তক নিয়ে একালে এসময় যে বিভ্রান্তি চলছে, যে অপপ্রয়াস চলছে, দেশবিরোধী জাতি বিরোধী, মানবতাবিরোধী, প্রগতিবিরোধী যে চক্রান্ত চলছে সে সবের উত্তরণে বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে আমাদের শিশুসাহিত্য। আমরা যদি আধুনিক, গণতান্ত্রিক মানবিক, সুন্দর ভাষায় লেখা শিশুসাহিত্য শিশুদের হাতে তুলে দিতে পারি তাহলে আমাদের শিশুদের মানবিক বিকাশ ঘটবে এবং তারা সুন্দর মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে।
কবি আবুল মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন।
আলোচনা করেন চ্যানেল আই’র জেনারেল ম্যানেজার বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক আমীরুল ইসলাম, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন, কবি ও শিশুসাহিত্যিক আসলাম সানী, শিশুসাহিত্যিক খালেক বিন জয়েন উদ্দিন, নাট্যজন ও কবি অভীক ওসমান, বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমির পরিচালক কবি ও শিশুসাহিত্যক রাশেদ রউেফ।
বাচিকশিল্পী আয়েশা হক শিমুর সঞ্চলানায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মেলার আহ্বায়ক কবি অরুণ শীল।
শামসুজ্জামন খান বলেন, বাংলা একাডেমি চেষ্টা করছে শিশুসাহিত্য নিয়ে বই প্রকাশে। এতে করে আমাদের শিশুসাহিত্যে নতুন প্রকাশনা পাবে আমাদের শিশুরা।
ড. অনুপম সেন বলেন, আমাদের মনের মধ্যে একটা শিশু থাকে। আমাদের মনের মধ্যে একটা কিশোর থাকে। সেই কিশোর এবং শিশু হচ্ছে আলোর উৎস। যারা শিশুসাহিত্য চর্চা করেন তারা শিশুমনকে উপলব্ধি করতে পারেন। শিশুমনকে ধারণ করে তারা যে কবিতা লেখেন সেই কবিতাগুলো সব বয়সী মানুষের মনে শৈশবের স্মৃতিকে প্রচণ্ড রকম নাড়া দেয়। আমরা কবিতার পঙক্তিতে, ছন্দে-আনন্দে ফিরে যাই ফেলে আসা শৈশবে।
তিনি বলেন, আমাদের শিশুদের আনন্দের জায়গা কোথায়। তাদের খেলার মাঠ নেই, সাঁতারের জন্য পুকুর নেই, আনন্দময় শৈশব নেই। এসব নিয়ে আমাদের শিশুসাহিত্যকদের ভাবনায় বিষয় রয়েছে।
আবুল মোমেন বলেন, আমাদের শিশুদের সবচেয়ে বড় অভাব অবসর। তাদের অবসরের অবকাশ আমরা রাখি না। আমরা তাদের জন্য বিভীষিকাময় একটা শৈশব তৈরি করছি। ফলে তারা পরিপূর্ণ বিকাশ হতে পারছে না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অসম্পূর্ণ, খণ্ডিত। এখনকার শিক্ষা কেবল পরীক্ষা পাসের জন্য। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
ছড়া ও কিশোরকবিতার পাঠ উৎসব উদ্বোধন করেন খ্যাতিমান ছড়ালেখক আমীরুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন শিশুসাহিত্যিক আসলাম সানী। লেখা পাঠ করেন আনজীর লিটন, আরিফ নজরুল, আহসান মালেক, কাজী মোহিনী ইসলাম, খালেক বিন জয়েন উদ্দীন, চন্দ্রশিলা ছন্দা, তাহমীদ আবরার, নাফে নজরুল, পাশা মোস্তফা কামাল, পীযুষ কান্তি বড়ুয়া, মঈন মুরমালিন, মনি হায়দার, মাহফুজুর রহমান, লোকমান আহম্মদ আপন, শায়লা রহমান তিথি, শিবুকান্তি দাশ প্রমুখ।
‘আমার সৃষ্টি, আমার লেখালেখি’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী, সেলিম সোলায়মান, হাসনাত আমজাদ, উত্তম সেন, সোহাগ পারভেজ, রোকসানা পারভীন সাথী ও মিলন বনিক। সভাপতিত্ব করেন বইমেলা উদযাপন পরিষদ সচিব উৎপল কান্তি বড়ুয়া।
বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৭
এআর/টিসি