ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মাদক-জুয়া নিয়ে পরীক্ষার মুখে ১৬ ওসি

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৭
মাদক-জুয়া নিয়ে পরীক্ষার মুখে ১৬ ওসি সিএমপি

চট্টগ্রাম: বন্দরনগরীতে মাদক স্পট ও বিক্রেতা, জুয়ার আসর এবং অসামাজিক কাজের স্থানগুলো বন্ধ করা নিয়ে ১৬ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) পরীক্ষার মুখে ফেলেছেন সিএমপি কমিশনার।  প্রত্যেক থানার ওসিদের যে কোনভাবে নিজ নিজ এলাকায় এসব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।  এর মধ্য দিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতা প্রমাণের নির্দেশ দিয়েছেন নগর পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

সূত্রমতে, নগরীতে প্রত্যেক থানাভিত্তিক মাদক স্পট ও বিক্রেতা এবং জুয়ার আসরের আলাদা তালিকা তৈরি করেছে সিএমপি।   অসামাজিক কাজ হয় থানাভিত্তিক এমন স্পটেরও আলাদা তালিকা করা হয়েছে।

সিএমপির তালিকা অনুযায়ী নগরীতে মাদক স্পট আছে ৪৭৫টি।   মাদক বিক্রেতা আছেন ৫৩০ জন।

  জুয়ার আসর আছে ৩২টি।   অসামাজিক কার্যকলাপ হয় ৪২টি স্পটে।

গত ১৩ জুলাই সিএমপির মাসিক অপরাধ সভায় প্রত্যেক থানার ওসিকে নিজ নিজ এলাকার তালিকা দেয়া হয়েছে।   এছাড়া চারটি জোনভিত্তিক আলাদা তালিকা নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছেও দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) সালেহ মো.তানভীর বাংলানিউজকে বলেন, মাদক ও জুয়া এবং অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।   প্রত্যেক থানার ওসিদের বলেছি মাদক ও জুয়ার স্পট এবং অসামাজিক কার্যকলাপের স্থানগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হবে।

‘ওসিদের কার্যক্রম আমরা মনিটরিং করবো।   প্রতি সপ্তাহে রিভিউ হবে কার পারফরম্যান্স কি ধরনের।   সেটার উপর ভিত্তি করে ওসিদের দক্ষতা মূল্যায়ন হবে।   যার পারফরম্যান্স খারাপ হবে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন কমিশনার স্যার।   এটা ওসিদের জন্য একটা পরীক্ষা বলা যেতে পারে। ’

সূত্রমতে, মাসিক অপরাধ সভায় সিএমপি কমিশনার মো.ইকবাল বাহার ১৬ থানার ওসিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, এই কাজে গাফেলতি প্রমাণ হলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা তিনি নেবেন।

সিএমপির তালিকা অনুযায়ী নগরীতে সবচেয়ে বেশি মাদকের আসর আছে কোতয়ালী থানায়।   মাদক স্পটের সংখ্যা ১৩৫টি।   এছাড়া একটি জুয়ার আসর ও দুইটি অসামাজিক কাজের স্পট আছে।

দক্ষিণ জোনের অধীন সদরঘাট থানায় ১৬ স্পটে মাদক বিক্রি হয়।   তিনটি জুয়ার আসরও আছে।

চকবাজার থানায় চারটি মাদক স্পট এবং একটি অসামাজিক কাজ হয় এমন স্পট আছে।

বাকলিয়া থানায় ৮টি স্পটে নিয়মিত মদ, গাঁজা, ইয়াবা বিক্রি হয়।   সেখানে সেবনের আসরও বসায় মাদকসেবীরা।

উত্তর জোনের অধীনে খুলশী থানা এলাকায় মাদকের আসর আছে ৩২টি।   নগরীতে সবচেয়ে বেশি অসামাজিক কাজ হয় খুলশী থানা এলাকায়।   এখানে ১৩টি গেস্ট হাউজ ও হোটেলকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

চান্দগাঁও থানায় ২৯টি স্পটে চলে মাদক বিক্রি।   নিয়মিত জুয়ার আসর বসে তিনটি স্পটে।

বায়েজিদ বোস্তামি থানায় ২৬টি স্পটে মাদকের ব্যবসা, ১টি স্পটে জুয়া এবং ১টি স্পটে অসামাজিক কাজ হয়।

পাঁচলাইশ থানায় ১৮টি স্পটে নিয়মিত মদ-ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি হয়।

পশ্চিম জোনের ডবলমুরিং থানায় ১৬টি স্পটে মাদক বিক্রি, ১টি স্পটে জুয়ার আসর বসে।   চারটি স্পটে চলে অসামাজিক কাজ।

হালিশহর থানায় ১৭টি স্পটে মাদক বিক্রি, ৭টি স্পটে জুয়া এবং ৮টি স্পটে অসামাজিক কাজ হয়।

পাহাড়তলী থানায় ২৪টি মাদক স্পট, ৪টি জুয়ার আসর আছে।   ৬টি স্পটে অসামাজিক কাজ হয়।

বন্দর জোনের পতেঙ্গা থানায় সবচেয়ে বেশি মাদকের স্পট আছে।   পতেঙ্গায় ৫৫টি স্পটে নিয়মিত মদ-গাঁজা, ইয়াবা বিক্রি হয়।   ২টি স্পটে জুয়ার আসর বসে।   আর চারটি স্পটে অসামাজিক কাজ হয়।

কর্ণফুলী থানায় ২৮টি স্পটে মাদক বিক্রি হয়।   একটি স্পটে জুয়া এবং একটি স্পটে অসামাজিক কাজ হয়।

ইপিজেড থানায় ১২টি স্পটে মাদক বিক্রি, ৬টি স্পটে জুয়া এবং ২টি স্পটে অসামাজিক কাজ হয়।

বন্দর থানা এলাকায় ২৯টি স্পটে প্রকাশ্যে চলে মাদক বিক্রি।   তিনটি স্পটে জুয়ার আসর বসে।

পুলিশ সূত্রমতে, নগরীতে প্রায় সব মাদক স্পটের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা জড়িত।   তিন ধরনের আসর থেকে কয়েকটি থানায় নিয়মিত টাকার ভাগ যাওয়ার তথ্যও আছে সিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে।

রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশের ছত্রছায়ায় চলা এসব অবৈধ কাজ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বন্ধ করতে পারেন কি না সেটি পরীক্ষার বিষয়, বলছেন নগর পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর এক থানার ওসি বাংলানিউজকে বলেন, মাদক স্পটগুলোর পেছনে রাজনৈতিক ছত্রছায়া আছে।   জুয়ার আসরের পেছনে কোন কোন সংগঠন আছে সেটা জানলে মানুষ চমকে উঠবে।   এই অবস্থায় এককভাবে ওসিদের উপর দায়িত্ব এসেছে।   বিষয়টা আসলেই আমাদের জন্য কঠিন পরীক্ষার।

সূত্রমতে, নগরীতে দুই ধরনের জুয়ার আসর হয়।   প্রভাবশালী বিভিন্ন সংগঠনের তত্তাবধানে বিভিন্ন ক্লাব-গেস্ট হাউজে বসে জুয়ার আসর।   আবার বাস টার্মিনাল, জনবহুল এলাকায়ও জুয়ার আসর বসে।   নিম্নবিত্তের লোকজনের আনাগোনা থাকে সেসব জুয়ার আসরে।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) সালেহ মো.তানভীর বাংলানিউজকে বলেন, জুয়া এবং হাউজির মধ্যে পার্থক্য আছে।   কিছু কিছু হাউজি সম্ভবত বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদন নিয়ে চলে।   কিন্তু জুয়া তো একেবারেই নিষিদ্ধ।   এটা আমরা চলতে দিতে পারি না।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৭
আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।