ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আপাতত চাকায় তালা, আসছে ফুটো

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
আপাতত চাকায় তালা, আসছে ফুটো সড়কে অবৈধভাবে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং (ফাইল ছবি)

চট্টগ্রাম: সড়কে অবৈধভাবে যত্রতত্র গাড়ি রেখে যানজট সৃষ্টি করেন যারা, তাদের জন্য দুঃসংবাদ আসছে।  ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের জন্য দুঃসংবাদ হলেও নগরবাসীর জন্য অবশ্য আশার সঞ্চার হওয়ার মতো একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। 

অবৈধভাবে গাড়ি রাখা বন্ধে ঢাকার মতো বন্দরনগরীতেও ‘হুইল লক’ পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে সিএমপি।   নিয়ম না মেনে রাখা গাড়ি দেখলেই ট্রাফিক সার্জেন্টরা চাকায় লাগিয়ে দেবেন বিশেষ ধরনের লকার।

  নির্ধারিত অংকের জরিমানা গুণে খুলতে হবে সেই লকার।

হুইল লক পদ্ধতির পর চাকা ফুটো করে দেওয়ার চিন্তাভাবনাও করছেন সিএমপির শীর্ষ কর্মকর্তারা।

সূত্রমতে, গত ১৩ জুলাই সিএমপির মাসিক অপরাধ সভায় হুইল লক পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে।   বিশেষ ধরনের এই হুইল লক পাওয়া যায় ঢাকায়।   প্রতিটির দাম ১৫ হাজার টাকা।   প্রাথমিকভাবে ২০টি হুইল লক কেনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে ট্রাফিক বিভাগের দুজন কর্মকর্তাকে।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) দেবদাস ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, অনেকেই আছেন যারা ব্যস্ত সড়কে, দোকানের সামনে, নো পার্কিং জোনে গাড়ি রেখে চলে যান।   ঘন্টার পর ঘন্টা সেই গাড়ি সরানোর কথা নেই।   এতে সড়কে গাড়ির স্বাভাবিক চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়।   যানজট সৃষ্টি হয়।   ডিএমপি অনেক আগেই হুইল লক পদ্ধতি চালু করেছে।   আমরাও করছি।

‘হুইল লক বিশেষ পদ্ধতির তালা।   এটা অর্ডার দিয়ে বানাতে হয়।   আশা করি সামনের সপ্তাহে পাব।   তালাগুলোতে বিশেষ ধরনের রঙ ব্যবহার করা হবে।   তারপর এই সিস্টেমে কাজ শুরু করব। ’

ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, নগরীতে সকাল, দুপুর এবং সন্ধ্যায় তিন ধাপে বড় ধরনের যানজটের সৃষ্টি হয়।   সকালে ‍অফিস ও স্কুলগামী যানবাহনের জন্য যানজট হয়।  

সকাল ১১টার পর থেকে নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে রাখা হয় প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাস।   নগরীর বিভিন্ন সড়কে এক কিলোমিটার-দুই কিলোমিটার জুড়ে রাখা হয় ব্যক্তিগত যানবাহন।   অন্তত দুপুর ২টা পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক যানজট সৃষ্টি হয় নগরীতে।

এরপর সন্ধ্যায় অফিস ফেরত মানুষ এবং যানবাহনের চাপে সৃষ্টি হয় যানজট।   রাতে যানজট হয় বিভিন্ন অভিজাত হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও কমিউনিটি সেন্টারের সামনে অবৈধভাবে রাখা গাড়ির জন্য।

ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা আরও জানান, ভাঙাচোরা সড়ক, উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি যানজট সৃষ্টির সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে অবৈধ পার্কিং।

অবৈধ পার্কিং বন্ধ করা গেলে নগরীতে যানজট অর্ধেকে নেমে আসবে বলে মত দিয়েছেন দেবদাস ভট্টাচার্য।

‘অবৈধ পার্কিং বন্ধের জন্য প্রথমদিকে আমরা প্রাইভেট কার-মাইক্রোবাসে হুইল লক পদ্ধতি প্রয়োগ করব।   এরপর আস্তে আস্তে সব যানবাহন এমনকি মোটরসাইকেলের জন্যও এটা প্রয়োগ হবে।   চাকা ফুটো করে দেওয়ার একটা পদ্ধতি নিয়েও আমাদের মধ্যে আলাপ চলছে।   এটাও বাস্তবায়ন করব। ’

তিনি বলেন, হুইল লকের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের দরকার নেই।   আমাদের ট্রাফিক সার্জেন্টরাই এটা করতে পারবে।   আইন অনুযায়ী এটা ট্রাফিক বিভাগের এখতিয়ার।  

‘আমরা যানজট কমাতে চাই।   এজন্য মানুষকে সচেতন করতে চাই।   আইন মানতে বাধ্য করতে ‍চাই।   আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্যই হুইল লক পদ্ধতি চালু করছি। ’ বলেন দেবদাস

তবে হুইল লক পদ্ধতির অপব্যবহার যাতে না হয় সেজন্য ট্রাফিক বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত উপ কমিশনার এবং সহকারী কমিশনাররা সচেষ্ট থাকবেন বলে জানিয়েছেন দেবদাস ভট্টাচার্য।

এদিকে ১৮ জুলাই থেকে নগরীতে শুরু হয়েছে অবৈধ পার্কিং বিরোধী পাঁচদিনের বিশেষ অভিযান।   উত্তর ও বন্দর জোনে একজন করে সহকারী কমিশনারের নেতৃত্বে সার্জেন্টরা নগরীতে ঘুরে ঘুরে অবৈধভাবে পার্ক করা গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছেন।  

এছাড়া ১ আগস্ট থেকে রুট পারমিট আছে এমন গাড়ির তালিকা তৈরির কাজ শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দেবদাস ভট্টাচার্য।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশের একজন এডিসি এবং মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধি নিয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।   তারা রুট পারমিট আছে এমন গাড়ির তালিকা করবে।   সেগুলোতে আমরা বিশেষ ধরনের রঙ লাগিয়ে দেব।   এর বাইরে যেসব যানবাহন থাকবে সেগুলো আমরা জব্দ করব।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭

আরডিজি/টিসি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।