ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সেই শিশুদের টাকা দিচ্ছে দেবদূতরা

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২২ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৭
সেই শিশুদের টাকা দিচ্ছে দেবদূতরা হাসপাতালে আসার পর হামে আক্রান্ত কোনো শিশু আর মারা যায়নি।

চট্টগ্রাম: যমের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন ‘একদল দেবদূত’। ‘অজ্ঞাত রোগে’ আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্কে সবাই যখন দূরে দূরে, তখনো পরম মমতায় হাড্ডিসার শিশুদের প্রতি হাত ‍বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তারা। ওষুধ, স্যালাইন, ইঞ্জেকশন থেকে শুরু করে পথ্য পর্যন্ত সব কিছুর নিবিড় তদারকি করেছেন। সময়ে-অসময়ে রাতবিরাতে ছুটে এসেছেন।  

এভাবে একে একে হাসি ফুটিয়ে তুলেছেন নিষ্পাপ শিশুদের মুখে। সেই হাসি ছড়িয়ে পড়েছে মায়ের মুখে, বাবার মুখে।

স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন দেশবাসী। এবার সেই দেবদূতরা ‘মানুষ মানুষের জন্য’ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে কষ্টার্জিত টাকার ভাগ দিচ্ছেন ত্রিপুরাপাড়ার অসহায় মা-বাবার হাতে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ৯ নম্বর শিশুস্বাস্থ্য ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ত্রিপুরা পাড়ার শিশুদের জন্য ৭০ হাজার টাকা দিয়েছেন বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতি।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক, চমেক ‍হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ত্রিপুরা পাড়ার যেসব শিশুকে আমরা চিকিৎসা করেছি তাদের মা-বাবা ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি তারা পান করে খালের পানি। তা-ও না ফুটিয়ে। তারা কখনো টিকা দেয়নি। তারা কখনো রেজিস্টার্ড চিকিৎসক বা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নেননি। তারা খুবই হতদরিদ্র। বাচ্চারা যখন একে একে মারা যাচ্ছিল তখনও তারা ঝাঁড়ফুঁক আর কবিরাজি ওষুধ খাওয়াচ্ছিল। অনেকটা জনবিচ্ছিন্ন ছিল তারা। পরিবারের পুরুষ সদস্যরা কাজ পেলে খাবার জোটে, নয়তো উপোস থাকেন। এককথায় নুন আনতে পান্তা ফুরায় দশা।

চমেকের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সীতাকুণ্ডের ত্রিপুরা পাড়ার ৫৪ জনকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। তাদের সব ওষুধপত্র, খাবার হাসপাতাল থেকে দিয়েছি। এমনকি তাদের বাবা-মা’র খাবার দাবারও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিয়েছে। এখন তাদের যদি আমরা আর্থিক সাহায্য করতে না পারি তবে বাড়ি ফিরে রোগশোক আবার বেড়ে যাবে। তাই নিজেরা চাঁদা দিয়েছি ৭০ হাজার টাকা। আবার হাসপাতালের পরিচালক বি. জেনারেল মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন দিচ্ছেন ৩০ হাজার টাকা। আমরা চাই এসব শিশুর প্রত্যেকের হাতে দেড়-দুই হাজার টাকা হলেও তুলে দিতে।      

ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও শিশু চিকিৎসক সমিতি চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডা. ঝুলন দাশ শর্মা শিশু চিকিৎসকদের কাছ থেকে সংগৃহীত টাকা মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুরে হাসপাতালের পরিচালকের হাতে তুলে দেন।  

হাসপাতালে আসার পর হামে আক্রান্ত কোনো শিশু আর মারা যায়নি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সৈয়দ মেসবাহুল হক, শিশু চিকিৎসক সমিতি চট্টগ্রামের সাবেক সহ সভাপতি ডা. আবুল কালাম আজাদ, চমেক হাসপাতালের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক ডা. বাসনা মুহুরী, শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এনআই খান, ডা. সুভাষ চন্দ্র সূত্রধর প্রমুখ।

ডা. নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, হাসপাতালে আসার পর হামে আক্রান্ত কোনো শিশু আর মারা যায়নি। সবাই ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে। আশাকরি, আগামী কাল বুধবার থেকে কয়েকজন করে ছাড়পত্র দিতে পারব।  

সীতাকুণ্ডের ছয় স্বাস্থ্যকর্মীকে শাস্তিমূলক বদলি

সেই অজ্ঞাত রোগ ছিল 'হাম'

'মারাত্মক অপুষ্টির সঙ্গে সংক্রমণ, দুই শিশু ঝুঁকিতে'

অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শিশুদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ

সীতাকুণ্ডে অজ্ঞাত রোগে একদিনে চার শিশুর মৃত্যু

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৭

এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।