আড়াই লাখ টন চালের মধ্যে প্রথম দফায় ২০ হাজার টন চাল নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এসেছিল ‘এমভি ভিসাদ’ নামের বড় জাহাজটি। এরপর শিপিং এজেন্ট কর্তৃপক্ষ চালের নমুনা পরীক্ষা, কাস্টমস ছাড়পত্র সংগ্রহ, বন্দরের জেটিতে বার্থিং (জাহাজ ভেড়ানোর) অনুমতি নিলেও বহির্নোঙরে চাল খালাসের উপযোগী ছোট জাহাজ (লাইটার) না পাওয়ায় দ্রুততম সময়ে খালাসের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
বন্দর কর্তৃপক্ষ, শিপিং এজেন্ট ও খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রোববার (১৬ জুলাই) থেকে উত্তাল বহির্নোঙরে বড় জাহাজের পাশে ছোট (লাইটার) জাহাজ ‘এমভি জুপিটার’ বেঁধে দেড় হাজার টন চাল খালাস করা হচ্ছে। যাতে বড় জাহাজটির ড্রাফট ( জাহাজের পানির নিচের অংশ) কমে বন্দরের ৮ নম্বর জেটিতে আনার উপযোগী ৮ দশমিক ৫ মিটারের নিচে নেমে আসে।
জেটিতে জাহাজ ভিড়ানোর পর সেখান থেকে ক্রেনের সাহায্যে চালগুলো ইয়ার্ডে অথবা সরাসরি ট্রাকে নামানো হবে। এরপর চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকার সরকারি খাদ্য গুদামগুলোতে মজুদ করা হবে সেই চাল।
‘এমভি ভিসাদ’র এজেন্ট ইউনি শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার আমরা কাস্টমস ডিউটি জমা দিয়ে চাল খালাসের ছাড়পত্র সংগ্রহ করেছি। ওই দিনই লাইটার জাহাজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) কাছে তিন হাজার টন চাল লাইটারিংয়ের জন্য জাহাজ চাওয়া হয়। সেই হিসাবে আমরা সোমবার বিকেলে বড় জাহাজটি বন্দর জেটিতে আনার জন্য বার্থিং সিডিউল নিয়ে রাখি। কিন্তু ডব্লিউটিসি দেড় হাজার টন ধারণক্ষমতার একটি লাইটার শিপ দিলেও তা ক্লিংকারবাহী হওয়ায় চাল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়। তাই জাহাজটি বাতিল করে দেওয়া হয়। এরপর ‘জুপিটার’ নামের লাইটারটি দেওয়া হয়েছে। তা-ও ছোট, দেড় হাজার টন খালাস করা যাবে হয়তো।
তিনি জানান, সরকার জরুরিভিত্তিতে চাল আমদানি করেছে। কিন্তু চাল খালাসের জন্য ডব্লিউটিসিসহ সবার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে দ্রুততম সময়ে চাল গুদামে চলে যেত। ইতিমধ্যে আমরা মঙ্গলবার সকালে বড় জাহাজটি জেটিতে আনার জন্য বার্থিং শিডিউল পিছিয়ে দিয়েছি।
ডব্লিউটিসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশীদ বাংলানিউজকে জানান, খাদ্য অধিদপ্তরের চাল খালাসের জন্য একটি জাহাজ কোম্পানিকে লাইটার শিপ সরবরাহের জন্য বলা হয়েছে। তারা একটি জাহাজ বহির্নোঙরে পাঠিয়েছিল। কিন্তু খোলা পণ্য হিসেবে না এনে চালগুলো আনা হয়েছে বস্তাভর্তি করে। তাই লাইটারটি উপযোগী না হওয়ায় বাতিল করা হয়েছে। পরবর্তীতে আরেকটি জাহাজ দেওয়া হয়েছে।
খাদ্য অধিদপ্তরের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক জহিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, চাল যতক্ষণ ট্রাকে লোড করা হবে না ততক্ষণ আমরা চালান বুঝে নেওয়ার সুযোগ নেই। সেই হিসেবে আমরা এখনো চাল বুঝে পাইনি। আশাকরি, মঙ্গলবার বহির্নোঙরে থাকা বড় জাহাজ এবং লাইটারিং করা ছোট জাহাজ জেটিতে ভিড়বে। এরপর ট্রাকে চাল খালাস করা হবে।
তিনি জানান, চট্টগ্রামের হালিশহর ও দেওয়ানহাটে খাদ্য অধিদপ্তরের দুটি সেন্ট্রাল স্টোরেজ ডিপো (সিএসডি) আছে। এখানে ধারণক্ষমতা প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিকটন। চট্টগ্রাম ছাড়াও ভিয়েতনাম থেকে আনা চাল সিলেট ও ঢাকা বিভাগের খাদ্য গুদামে পৌঁছে দেওয়া হবে। সেখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ দেওয়া হবে।
কতটি ট্রাক প্রস্তুত রাখা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খাদ্য অধিদপ্তর সড়ক, রেল ও নৌপথে পণ্য পরিবহনের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় পরিবহনের ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছে।
সর্বশেষ ভিয়েতনাম থেকে দ্বিতীয় চালানে আরেকটি বড় জাহাজ ‘এমভি প্যাক্স’ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এসে পৌঁছেছে সোমবার (১৭ জুলাই)। সংশ্লিষ্টদের ধারণা প্রথম চালানের জাহাজ থেকে চাল খালাসে দীর্ঘসূত্রতার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারলে দ্বিতীয় চালানের জাহাজটি থেকে দ্রুততম সময়ে চাল খালাস করা সম্ভব হবে।
**ভিয়েতনাম থেকে এলো আরও ২৭ হাজার টন চাল
**ভিয়েতনামের ২০ হাজার টন চাল বহির্নোঙ্গরে পৌঁছেছে
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৭
এআর/এমইউ/আইএসএ/টিসি