তবে ঘাতক ইসমাইল নিজেকে আড়ালে রাখতে পারেননি। পতেঙ্গা থানা পুলিশ খুনের পাঁচদিন পর লিটনের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
খুনের রহস্য উদঘাটনকারী পতেঙ্গা থানার এস আই মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, লিটনকে খুনের পর তার লাশ বস্তাবন্দি করে রেখেছিল ইসমাইল। ঈদের দিন বিকেলে আমরা তার মরদেহ মাইজপাড়ার একটি ভবনের ছাদ থেকে উদ্ধার করি। এরপর বিভিন্ন সূত্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইসমাইলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। ইসমাইল পতেঙ্গার কয়লারহাট বাজারে তার শ্বাশুড়ির বাসায় আত্মগোপন করেছিল।
ইসমাইলের বাড়ি সুনামগঞ্জ উপজেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কাপনা গ্রামে। আর লিটনের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কালাপানি গ্রামে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জবানবন্দিতে ইসমাইল জানান, একসাথে গাঁজা খেতে গিয়ে দুজনের পরিচয় হয়। ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে তার কাছ থেকে ২০০ টাকা ধার নেন লিটন। টাকা খুঁজলে লিটন ইসমাইলকে গালিগালাজ করত। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এবং পাওনা টাকা আদায়ে ইসমাইল লিটনকে খুনের পরিকল্পনা করে ৮০ টাকা দিয়ে একটি ছোরা কিনেন।
২১ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে লিটনকে গাঁজা খাওয়ার জন্য ডেকে নেয় ইসমাইল। তারা দুজন গাঁজা খাওয়ার জন্য মাইজপাড়ার ঢাকাইয়াদের বাড়ির দোতলার উপর ছাদে উঠে যান। সেই ভবনের পাশে একই মালিকের টিনের ঘরে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে ইসমাইল ও তার স্ত্রী।
ছাদে উঠে ইসমাইল লিটনকে গাঁজার পুরিয়া দেয়। লিটন গাঁজা তৈরি করার সময় ইসমাইল নিচে নেমে ঘর থেকে ছোরা নিয়ে আসে। এরপর দুজনের গাঁজা খাওয়া শুরু করে, তবে ইসমাইল কম খায়। দুই ঘন্টা গাঁজা সেবনের পর লিটন যখন নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখন ইসমাইল তার শরীর টিপে দেয়ার কথা বলেন। এই সুযোগে রাত ১১টার দিকে ইসমাইল লিটনের গলায় ছোরা দিয়ে টান দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় লিটন।
এরপর লিটনের মরদেহ কোমড় পর্যন্ত একটি কালো পলিথিনে ঢুকিয়ে আরেকটি সাদা পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেন ইসমাইল। তবে পা দুটো বের হয়েছিল। বৃষ্টি আসায় রক্ত গড়িয়ে পড়ে ছাদে। ইসমাইল বৃষ্টিতে ভিজে ছাদের উপর স্তূপ থেকে কংক্রিট সরিয়ে লিটনের মরদেহে সেখানে ঢুকিয়ে রেখে আবারও কংক্রিট চাপা দেন। লিটনের পকেট থেকে ৩৩০ টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে ইসমাইল নেমে যান।
পরদিন রাত ২টার দিকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি ও তার রক্তাক্ত গেঞ্জি, রুমাল, সিগারেটের প্যাকেট নিজের ঘরে এনে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখেন ইসমাইল। এর পরদিন মোবাইল ছাড়া বাকি সবকিছু মাইজপাড়ায় একটি পুকুরের মধ্যে ফেলে দেন। ২৩ জুন সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে সিম ফেলে দিয়ে মোবাইলটি বিক্রি করে দেন ইসমাইল। ২৭ জুন (মঙ্গলবার) রাতে পুলিশ ইসমাইলকে গ্রেফতার করে।
এই ঘটনায় লিটনের স্ত্রী লাকি বেগম তালুকদার বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। জবানবন্দি দেয়ার পর ইসমাইলকে আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৭
আরডিজি/টিসি