ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কক্সবাজার বেতারে আরডি’র লাগামহীন দুর্নীতি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৭
কক্সবাজার বেতারে আরডি’র লাগামহীন দুর্নীতি

কক্সবাজার: ‘অতীতেও অনেক কর্মকর্তার নানা অনিয়ম আমরা দেখেছি, কিন্তু এই আরডি অনিয়ম জালিয়াতিতে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। তিন লাখ টাকাও খরচ না করে শিল্পীদের সই নকল করে সাড়ে ১৮ লাখ টাকার বিল করেছেন। এটি তো পুকুর চুরিও নয় সাগর চুরি বলতে হবে’।

কক্সবাজার বেতারের উদ্যেগে অনুষ্ঠিত বহিরাঙ্গন অনুষ্ঠানে অনিয়ম প্রসঙ্গে এভাবেই বললেন, বেতারের নাট্য প্রযোজক জসীম উদ্দিন বকুল। কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ বেতার, কক্সবাজার কেন্দ্রের বহিরাঙ্গন অনুষ্ঠান ‘আলোকিত বাংলাদেশ’।

 

জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চাকে বেগবানের পাশাপাশি বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরতে মে মাসে কক্সবাজার, রামু, চকরিয়া ও মহেশখালী উপজেলায় ‘আলোকিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু সরকারের এ রকম মহৎ উদ্যেগ বাস্তবায়নেই পুকুর চুরির মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন কক্সবাজার বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান।

গুটিকয়েক শিল্পীর অংশগ্রহণে দায়সারাভাবে অনুষ্ঠান শেষ করা হলেও শিল্পীদের নামে বেনামে ভুয়া কন্ট্রাক্ট বানিয়ে  প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ টাকা বিল অনুমোদনের জন্য জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে পাঠানো হয়েছে। যার সিংহ ভাগই ভুয়া। এ ঘটনায় শিল্পীদের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্ঠি হয়েছে।

শিল্পীদের অভিযোগ, বাস্তবে লাখ লাখ টাকার ভুয়া বিল করা হলেও অংশ অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের গ্রেড অনুযায়ী এ-১০৫০, বি-৯০০,ও সি-৬২৫ টাকা সম্মানী দেওয়া হচ্ছে। অথচ একই অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বেতারে দেওয়া হচ্ছে ৪০০০,৩৫০০ ও ৩০০০ টাকা করে।  

জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে অনুমোদনের জন্য পাঠানো বিলের তালিকায় দেখা গেছে, কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে অনুষ্ঠিত আলোকিত বাংলাদেশ শীর্ষক বহিরাঙ্গন অনুষ্ঠানে ৬৪ জন একক শিল্পীর ছাড়াও শুধুমাত্র ‘মলকা বানুর বিয়ের হলা’ ‘পরিবানুর বিয়ের হলা’ ‘রাখাইন প্রজাপতি নৃত্যে’ এবং‘ডিজিটাল বাংলাদেশ শীর্ষক নাটিকার জন্য  মোট ১ লাখ ২০ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় দেখানো হয়।

একইভাবে রামু, চকরিয়া ও মহেশখালীসহ চার উপজেলার জন্য ৪ লাখ ৮২ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হলেও শুধুমাত্র রামুতে মলকাবানুর বিয়ের হঁলা ছাড়া আর কোনটির পরিবেশনা অনুষ্ঠানে হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ঠ শিল্পীরা।  

এছাড়াও, চারটি অনুষ্ঠানে একক শিল্পীর তালিকায় (প্রতিটিতে ৬৪ জন করে) শিল্পীর সম্মানী বাবদ ৭ লাখ ৫২ হাজার ৪৫০ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও বাস্তবে ১৫ জনের বেশি একক শিল্পী কোন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেননি। বাকিদের সই নকল করে ভুয়া কন্ট্রাক্ট দেখানো হয়েছে। এমনকি তালিকায় এমন নামও আছে বেতারে যে নামের কোনো অস্থিত্বই নেই। এছাড়াও পোষ্টার,ফেস্টুন ও ব্যানার,মঞ্চ,সাউন্ডসহ সবমিলে চারটি বহিরাঙ্গনের ব্যয় দেখানো হয়, প্রায় সাড়ে ১৮ লাখ টাকা।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার বেতারের নাট্য প্রযোজক স্বপন ভট্ট্রচার্য্য বলেন, নাটক পরিবেশন তো দূরের কথা বহিরাঙ্গনের কোন অনুষ্ঠানেই আমি এবং আমার স্ত্রীর (বণানী চক্রবর্তী) অংশ গ্রহণ ছিলনা। শুনে অবাক হলাম রামু, চকরিয়া ও মহেশখালীতে তিনটি অনুষ্ঠানেই আমাদের অংশ গ্রহণ দেখিয়ে মোটা অংকের বিল বানানো হয়েছে।

কক্সবাজার বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. হাবিবুর রহমান জানান, এ সব অনিয়মের অভিযোগ সঠিক নয়। বিলগুলো তৈরি হচ্ছে।

জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সুকোমল বড়ুয়া বলেন, বেতারের অনেক বিল এসেছে। বিলের সঙ্গে প্রযেজনীয় কাগজ পত্র থাকলে আমাদের করার কিছু থাকেনা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা জুন ২৪, ২০১৭

টিটি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।