ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

১০০০ হাজার টাকার ‘দাম’ ১১৫০ !

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৪ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৭
১০০০ হাজার টাকার ‘দাম’ ১১৫০ ! নতুন টাকা কিনছেন ক্রেতারা

চট্টগ্রাম: ঈদে নতুন কাপড়ের মতো প্রায় সমান চাহিদা নতুন টাকারও। ঈদের দিন বাড়ির ছোটরা সালাম দিতেই তাদের হাতে চকচকে নোট তুলে দেওয়াটা এখন যেন রেওয়াজই হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ঘরফেরত মানুষ কাপড়-চোপড়ের পাশাপাশি খুঁজতে থাকেন নতুন টাকাও।

আর এ চাহিদাকে পুঁজি করে নগরীর নিউমার্কেট খ্যাত বিপনী বিতানের নিচ থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ কার্যালয় পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন দোকানি বসেছেন নতুন টাকার পসরা নিয়ে। এখান থেকে পুরোনো টাকা দিয়ে নতুন টাকা কেনেন ক্রেতারা।

আর একটু খোলাসা করে বললে এখানে টাকা যেন বিক্রি হয় পণ্য হিসেবেই।

গত ৮ জুন থেকে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও নতুন টাকা বিতরণ শুরু করা হয়।

২২ জুন পর্যন্ত এই নোট বিতরণ করা হয়। এই ১৪ দিনে চট্টগ্রামে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার নতুন টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তিনটি কাউন্টার ছাড়াও এবি ব্যাংক ইপিজেড শাখা, সাউথইস্ট ব্যাংক হালিশহর শাখা, ইসলামী ব্যাংক বহদ্দার শাখা, পূবালী ব্যাংক কুলগাঁও শাখা (অক্সিজেন মোড়) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পাহাড়তলী শাখা ব্যাংক চলাকালীন সময়ে টাকা বিতরণ করে। মহিলাদের সুবিধার্থে ইসলামী ব্যাংক পটিয়া শাখাও নতুন টাকা বিতরণ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, একজন পুরানো টাকার বিনিময়ে শুধুমাত্র একবার ২, ৫, ১০, ২০ ও ৫০ টাকার একটি করে বান্ডিল (প্রতিটিতে ১০০টি করে নোট) অর্থাৎ মোট ৮ হাজার ৭০০ টাকা সংগ্রহ করতে পেরেছেন।

তবে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা নতুন নোটের সিংহভাগই আদায় করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মূলত তারাই নগরীর নিউমার্কেট খ্যাত বিপনী বিতানের নিচ থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ কার্যালয় পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে নতুন নোট নিয়ে বসেছেন।

মো. হারুন নামের একজন বিক্রেতা প্রায় দুই যুগ ধরে ঈদের আগে এখানে নতুন নোট বিক্রি করে আসছেন। এবারও প্রায় দুই লাখ টাকার নতুন নোট সংগ্রহ করেছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।

হারুন বাংলানিউজকে জানান, প্রতিটি নোটের বান্ডিলে থাকে ১০০ পিস নতুন নোট। তারা দু’টাকার নতুন নোটের বাণ্ডিল বিক্রি করছেন ২৫০ টাকায়। অর্থাৎ ৫০ টাকা বেশি দামে। পাঁচ টাকার নোটের বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা দরে। ১০ টাকার নোটের বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে ১১৫০ টাকায়। ২০ টাকার এক বাণ্ডিল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১৫০ টাকায়। ৫০ টাকার প্রতি বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ১৫০ টাকা করে।

ইকবাল হোসেন নামের একজন বিক্রেতা বলেন, চাহিদামতো নতুন নোট সংগ্রহ করা যায়নি বলে আমাদের ব্যবসা আগের চেয়ে খারাপ যাচ্ছে। মানুষ দিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে তো আর বেশি টাকা সংগ্রহ করা যায় না।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বিক্রেতা বলেন, চাহিদামতো নতুন নোটও সংগ্রহ করা যাচ্ছে না এখন। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তার কাছ থেকে নোটগুলো পাইকারি দামে আমরা কিনি। প্রতিদিন সকালে তারা এসে আমাদের কাছে নতুন নোটগুলো বিক্রি করেন। তাদের ১০ ও ২০ টাকার নোটে প্রতি হাজারে প্রায় ১০০ টাকা লাভ দিতে হয়। তবে অন্য নোটে প্রতি হাজারে ৫০-৬০ টাকা হারে লাভ দিলে হয়। এই খরচ বাদ দিয়ে আমরা প্রতি বান্ডিলে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে লাভ করি।

নতুন নোট কিনতে আসা সাইফুল ইসলাম নামের একজন বলেন, ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে নতুন নোট সংগ্রহ করা অনেক ঝক্কি ঝামেলার। তাই এখন থেকে নতুন নোট কিনে নিলাম। বাড়ির ছোটদের তো ঈদ সেলামি না দিয়ে উপায় নেই।

ক্রেতাদের এমন চাহিদাই এ ব্যবসা কাগজে কলমে অবৈধ হলেও যেনো একে দিয়েছে ‘অলিখিত বৈধতা’।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৬

টিএইচ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।