শনিবার (২৪ জুন) ভোরে চট্টগ্রাম বন্দরের বহি:নোঙ্গরে গভীর সাগরে একটি কড় কাঠের নৌকা আটক করে র্যাব তল্লাশি চালায়। মায়ের দোয়া নামের ওই নৌকা থেকে ১৫ লাখ ইয়াবা এবং মায়ানমারের পাঁচ নাগরিকসহ ১২ জনকে আটক করে র্যাব।
কাঠের নৌকাটিতে ‘হিনো বাসের’ ইঞ্জিন পেয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লে.কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ।
‘বড় কাঠের নৌকা, ট্রলার যেগুলোকে বলা হয় সেগুলোতে হিনো বাসের ইঞ্জিন লাগানো হচ্ছে।
মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে সাগরে টহল দেয়ার জন্য র্যাবের কাছে একটি দ্রুতগতিসম্পন্ন উদ্ধারকারী নৌযান আছে। নৌযানটি ঘন্টায় ৩০ নটিক্যাল মাইল পাড়ি দিতে সক্ষম। বাসের ইঞ্জিন লাগানোর পর মায়ের দোয়া নৌকাটিও ঘন্টায় ৩০ নটিক্যাল মাইল অতিক্রম করছিল বলে জানিয়েছেন র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লে.কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ।
জানতে চাইলে কোস্টগার্ডের পূর্ব জোনের কমান্ডার ক্যাপ্টেন শহীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে সাগরে টহল দেয়ার জন্য তিন ধরনের বোট আছে। মেটাল শার্ক, টর্নেডো বোট এবং ডিফেন্ডার। প্রত্যেক বোটই ঘন্টায় ৪০ নটিক্যাল মাইল অথবা ৬০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে সক্ষম।
মিফতাহ জানিয়েছেন, সাগর স্বাভাবিক থাকলে গতি থাকে ৩০ নটিক্যাল কিংবা ৪০ নটিক্যাল মাইল। কিন্তু সাগর যখন উত্তাল থাকে তখন গতি কমে যায়। কিন্তু কাঠের নৌকার গতি স্বাভাবিক থাকে। কারণ কাঠের নৌকা হালকা হওয়ায় ঢেউয়ের আঘাতের মধ্যেও গতি ঠিক রাখতে পারে।
র্যাব সূত্রমতে, মায়ের দোয়া নৌযানটিকে কমপক্ষে ৬০ নটিক্যাল মাইল ধাওয়া দিয়ে ধরতে সক্ষম হয়েছে র্যাবের টহল টিম। গতিবেগ প্রায় সমান হওয়ায় তাদের বেগ পেতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ইয়াবা বহনকারীদের নৌকাটি যাতে গতিবেগ কমায় সেজন্য র্যাবকে ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে হয়েছে।
কাঠের নৌকায় বাসের ইঞ্জিন লাগানোর তথ্য প্রথমবারের মতো পাওয়া গেছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন মিফতাহ।
মায়ের দোয়া নৌকা থেকে আটক হওয়াদের মধ্যে আছেন, নজির আহমেদ (৫৫), হাসেম (১৯), ছাদেক (২৫), খায়রুল আমিন (২০), জাফর (৩০), খোকন (২৫), আনিসুর রহমান (১৮)।
এছাড়া মিয়ানমারের নাগরিকদের মধ্যে আছেন ইসমাইল (২০), আব্দুল খালেক (২০), সাদ্দাম হোসেন (১৯), নুর আলম (২৫) এবং সেলিম প্রকাশ মলয় (২০)।
র্যাব অধিনায়ক মিফতাহ জানিয়েছেন, মায়ের দোয়া ট্রলারটিতে করে ছয়বার মায়ানমার থেকে ইয়াবা আনা হয়েছে। প্রথম তিনবারে ১০ লাখ করে ৩০ লাখ ইয়াবা আনা হয়েছে। দুইবার সাগর বেশি উত্তাল থাকায় আনতে পারেনি। ষষ্ঠবারে ১৫ লাখ আনতে গিয়ে আটক হতে হয়েছে।
সর্বশেষ চালানটি মায়ানমার থেকে এনেছে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের নন্দরখীল গ্রামের মো.ফারুক ওরফে বাইট্যা ফারুক। মায়ের দোয়া ট্রলারটির মালিকও ফারুক। তবে সেটি নিবন্ধিত আছে ট্রলারের মাঝি ছাদেকের নামে। তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া ১২ জনের সবাই মাঝিমাল্লা এবং বাহক বলে জানিয়েছেন র্যাব অধিনায়ক মিফতাহ।
‘ফারুকের নেতৃত্বে একটি ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেট আছে। তারা সরাসরি মায়ানমার থেকে ইয়াবা এনে গহিরা, আনোয়ারা, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, খেজুরতলা, হালিশহর, ভাটিয়ারি এবং কুমিরা এলাকায় রাতে খালাস করে। এরপর সেখান থেকে সারাদেশে পাচার হয়। ’ বলেন মিফতাহ
বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৭
আরডিজি/টিসি