ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কষ্ট ভুলে মিলনের আনন্দে বাড়ি ফেরা

মো.মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪১ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
কষ্ট ভুলে মিলনের আনন্দে বাড়ি ফেরা কষ্ট ভুলে মিলনের আনন্দে বাড়ি ফেরা

চট্টগ্রাম: কর্ণফুলী ইপিজেডে বিদেশি একটি কারখানায় কাজ করেন বরিশাল জেলার ভান্ডারিয়া থানার বাসিন্দা মো.নজরুল ইসলাম। ঈদ উপলক্ষ্যে দশদিন বন্ধ থাকবে কারখানা। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কাজ করেছেন। ফলে টিকেট নিতে পারেননি। কিন্তু বাড়ি যেতে হবে। তাই সরাসরি চলে এসেছেন চট্টগ্রাম স্টেশনে।

শুধু নজরুল নয়, এভাবে বরিশাল, চাঁদপুর, নোয়াখালী জেলার হাজার হাজার যাত্রী স্ট্যান্ডিং টিকেট নিয়ে স্টেশনে এসেছেন। যারা কর্মসূত্রে বন্দর নগরীতে বসবাস করেন।

কিন্তু তাদের স্বজনরা রয়েছেন জন্মস্থানে।  তাদের সঙ্গে মিলিত হতে যে কোন ধরনের কষ্ট সহ্য করতে প্রস্তুত তারা।
  

চট্টগ্রাম স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে তেমনটাই জানালেন নজরুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ট্রেনে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবো কিনা জানি না। দাঁড়িয়ে হলেও বাড়ি যেতে হবে।

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কষ্টে বাড়ি ফেরা

কষ্ট সহ্য করে বাড়ি ফিরছেন, স্বজনদের কাছে পেলে কেমন লাগবে এমন প্রশ্নের উত্তরে নজরুল বলেন, আপনজনদের কাছে পাব। এটাই তো বড় সুখ। স্বজনদের কাছে পেলে সব কষ্ট ভুলে যাই।

চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নোয়াখালীর মো.আবদুল কাইয়ুম। বাবা চাকরি করেন আমীন জুট মিলে। মা ও ছোট ভাই থাকে গ্রামের বাড়িতে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে স্টেশনে এসে স্ট্যান্ডিং টিকেট নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রেনের ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ যাত্রী দেখা যাচ্ছে। সিট পাব কিনা জানি না। দাঁড়িয়ে বা ছাড়ে হলেও যেতে হবে।

পরিবারের সদস্য বাড়িতে অপেক্ষা করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা গেলেই ঈদের কেনাকাটা শুরু হবে। তাই যে কোন মূল্যে বাড়ি যেতে হবে।

বাড়িতে ফেরার আনন্দে উদ্বেলিত হলেও ইপিজেজে একটি বিদেশি কারখানার শ্রমিক মো.সুজনের মনে কষ্ট। কারণ বোনাস পেলেও পুরো মাসের বেতন পাননি। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে ঈদের সুখানন্দে সবই ভুলে গেছেন তিনি।

‘ঈদের সবাই চায় একটু ভালভাবে থাকবে। আমরা ছোট চাকরি করি। আমাদের পরিবারের মানুষজনও নিশ্চয় আশা করে আছেন। কিন্তু আমরা সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবো কিনা জানি না। এরপরও সবাই একসঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবো এটাই আমাদের কাছে বড়। ’

বিকেল সোয়া ৫টায় চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় মেঘনা এক্সপ্রেস। এই ট্রেনে বরিশাল জেলার যাত্রীই বেশি। চাঁদপুর থেকে লঞ্চে বরিশাল পৌঁছেন। ট্রেন ধরতে নির্দিষ্ট সময়ে স্টেশনে আসলেও বৃহস্পতিবার সঠিক সময়ে ছাড়তে পারেনি মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন।

স্বজনদের কাছে যেতে কষ্ট সহ্য করে বাড়ি ফিরছেন

নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন না ছাড়ায় উদ্বেগ জানিয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জিআরপি থানার ওসি মো.শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সোয়া পাঁচটায় ট্রেন ছাড়ার কথা। কিন্তু এখনো ইঞ্জিন আসেনি। বিষয়টি নিয়ে টেনশনে আছি।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে চুরির ঘটনা ঘটে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ট্রেনে যাত্রী সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য ট্রেনে ছাদে যাত্রী উঠা বন্ধ করতে পারলেও এটাতে সম্ভব হয় না। এভাবে বেশিক্ষণ থাকলে যাত্রীদের জিনিসপত্র চুরি হতে পারে।

পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুবর্ণ এক্সপ্রেস প্রতিদিন সকাল সাতটায়, মহানগর গোধূলী বিকেল ৩টায়, চট্টলা এক্সপ্রেস সকাল সোয়া ৮টায়, মহানগর এক্সপ্রেস বেলা সাড়ে ১২টায়, সোনার বাংলা বিকেল ৫টায় এবং তূর্ণা এক্সপ্রেস রাত ১১টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যাবে।

পাহাড়িকা সকাল সোয়া ৯টায়, উদয়ন এক্সপ্রেস রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে সিলেটের উদ্দেশ্যে, মেঘনা এক্সপ্রেস বিকেল সোয়া পাঁচটায় চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে এবং বিজয় এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ছেড়ে যাবে।

কর্ণফুলী এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় ও ঢাকা মেইল এক্সপ্রেস রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে, সাগরিকা এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৭টায় চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে, ময়মনসিংহ এক্সপ্রেস বিকেল সাড়ে ৩টায় বাহাদুরাবাদ’র উদ্দেশ্যে ও জালালাবাদ এক্সপ্রেস রাত সাড়ে ৯টায় সিলেটের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
এমইউ/টিসি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।