ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

যে বাড়ির দরজা গরিবদের জন্য খোলা সেহেরিতে

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৭
যে বাড়ির দরজা গরিবদের জন্য খোলা সেহেরিতে মোহাম্মদ হাসান ওয়ারেস আমেরিকা থেকে ছুটে আসেন গরিবদের সেহেরি খাওয়ার তদারকির জন্য। ছবি: উজ্জ্বল ধর, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: রাত তিনটা। চার শতাধিক মানুষ লাইনে বসা। সবার হাতে পৌঁছে যাচ্ছে সাদা ভাত ও ঘন ডাল ভর্তি প্লেট। বালতি হাতে একজন কর্মী সবার পাতে তুলে দিচ্ছেন আলু দিয়ে রান্না করা মাংস। খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন নারী-পুরুষ সবাই।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) ভোররাতে ‘ওয়ারেস মোহছেনা টাওয়ার’র চিত্র এটি। নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন কবি নজরুল ইসলাম সড়কের বাড়িটি প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাসান ওয়ারেসের।

তিনি ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর রমজানে গরিব-দুঃখীদের সেহেরি ও ইফতার খাইয়ে আসছেন। আমেরিকার নাগরিকত্ব পাওয়া হাসান এখন প্রতি রমজানে ছুটে আসেন শুধু গরিব অতিথিদের খাওয়াতে।
 

সেহেরির প্লেট অতিথিদের হাতে তুলে দিতে দিতে কথা বলেন বাংলানিউজের সঙ্গে। সহজ-সরল মানুষটির সাফ কথা, প্রচারের জন্য নয় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এ কাজ করছেন। আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েত ও দুবাইতে আমার ব্যবসা আছে। আমি থাকি আমেরিকাতে। আমার পাঁচ মেয়ে, তিন ছেলে। আমার বড় ছেলে কুয়েতের ব্যবসা দেখে। মেজ ছেলে দুবাইর ব্যবসা দেখা শোনা করে। ছোট ছেলে কুয়েতে আমেরিক‍ান একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আমি যত গরিবদের জন্য খরচ করছি, ততই আমার উন্নতি হচ্ছে। আমাদের গ্রাম সৈয়দপুরে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি হাসপাতাল গড়েছি।

একপর্যায়ে বললেন, ছোটবেলায় বাবাকে হারাই। কিন্তু বাবার দাবি ছিল আল্লাহ যখন পয়সা-কড়ি দেবে তখন যেন গরিবদের খেয়াল রাখি। আমি আমৃত্যু গরিবদের বন্ধু হয়ে থাকতে চাই। আমার অবর্তমানে আমার ছেলেরা গরিবদের পাশে থাকবে।

প্রতিটি সেহেরি রাত, প্রতিটি ইফতার সন্ধ্যা আমাদের জন্য ঈদের খুশি বয়ে আনে।  বললেন সৈয়দা শাহিনূর বেগম।  ছবি: উজ্জ্বল ধর, বাংলানিউজ

বোয়ালখালির বাসিন্দ‍া হাসান ওয়ারেসের এ মহৎ উদ্যোগে সঙ্গী হয়েছেন স্ত্রী সৈয়দা শাহিনূর বেগমও। বাংলানিউজকে হাসতে হাসতে তিনি বললেন, ‘গরিব রোজাদারদের সেহেরি খাওয়াতে দেশে আসি। এতে আমরা খুশি। প্রতিটি সেহেরি রাত, প্রতিটি ইফতার সন্ধ্যা আমাদের জন্য ঈদের খুশি বয়ে আনে।

মোহাম্মদ জয়নাল বাবুর্চি জানালেন, বৃহস্পতিবার সেহেরির জন্য ৫০ কেজি চালের ভাত, ৩০ কেজি গরুর মাংস দিয়ে আলু এবং ঘন ডাল রান্না করা হয়েছে। যা দিয়ে আনুমানিক ৪০০ মানুষ পেট ভরে সেহেরি খেতে পারবে। যদি মানুষ বেশি আসেন তবে আবার রান্না হবে। পুরো রমজানের জন্য চাল, ডাল, আলু, ছোলা সব একসঙ্গে কেনা হয়েছে। কাঁচাবাজারই শুধু নিয়মিত কেনা হচ্ছে।  

রান্নাবান্না, পরিবেশন, ধোয়া-মোছা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সাতজন স্টাফ, পাঁচজন বাবুর্চি ও তিনজন নিরাপত্তাকর্মী।

পটিয়ার শান্তিরহাট এলাকার বাসিন্দা মো. হোসেন (৪৬) বিশাল সসপান (পাত্র) থেকে ভাত বেড়ে রাখছিলেন প্লেটে। বাংলানিউজকে ব্যস্ততার ফাঁকেই বললেন, ১৭ বছর ধরে রমজান এলেই এখানে চলে আসি। এটা নেশার মতো হয়ে গেছে। মালিক বেতন দেন। কিন্তু বেতন না দিলেও এ মাসে এ কাজই করতাম। এত আনন্দ আর কিছুতে পাই না।

তৈলারদ্বীপ এলাকার বাসিন্দা জামাল হোসেন (৬০) রাত দেড়টায় এসে হাজির গরিবের বন্ধুর বাড়ির সামনে। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বললেন, আট বছর ধরে এখানে আসি সেহেরি খেতে। ভদ্রলোক বেশ অতিথিপরায়ণ। প্রতিবছর শেষ সেহেরিতে পুরুষদের লুঙ্গি-পাঞ্জাবি এবং নারীদের শাড়ি দেন। উনি মানুষ নন, ফেরেশতা।

খাদির পাঞ্জাবির টানে আসছে মানুষ

ফুটপাতের ঈদবাজারে রীতিমতো ঠেলাঠেলি, যুদ্ধ  

বাংলাদেশ সময়: ০৪২৭ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭

এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।