ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

গভীর রাতে জনস্রোত গরীব-মধ্যবিত্তের মার্কেটে

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৭
গভীর রাতে জনস্রোত গরীব-মধ্যবিত্তের মার্কেটে   গভীর রাতে জনস্রোত গরীব-মধ্যবিত্তের মার্কেটে (ছবি: উজ্জল ধর, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম)

চট্টগ্রাম: প্রবেশপথের সামনে রাস্তায় কিংবা আইল্যান্ডের উপর দাঁড়িয়ে সামনের গলির দিকে তাকালে মনে হবে যেন ভেতরে চলছে সদ্য বড় কোন রাজনৈতিক দলের জনসভা।  চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ।  বয়সে বৃদ্ধ, তরুণ-যুবক, কিশোর, বিভিন্ন বয়সের নারী তো আছেই, সদ্য কথা বলতে শেখা সন্তানটি থেকে কোলের দুগ্ধপোষ্য শিশুও আছে।  কেউ ঢুকছে, কেউ বের হচ্ছে। 

গভীর রাতে এমন চিত্র দেখা গেছে নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, তামাকমুণ্ডি লেইন, নিউমার্কেট, হকার মার্কেটকে ঘিরে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায়, যে মার্কেটগুলো গরীব-মধ্যবিত্তের মার্কেট হিসেবে পরিচিত।   তবে প্রচার যা-ই থাকুক, এসব মার্কেটের দোকানগুলোতে এখন যে শুধু নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তের দেখা মেলে তা-ই নয়, উচ্চবিত্তের ভিড়ও এসব মার্কেটে প্রচুর।

  আর ঐতিহ্যবাহী নিউমার্কেট তো আছেই উচ্চবিত্তের চাহিদা পূরণের জন্য।

গভীর রাতে মার্কেটে জনস্রোত নিয়ে একটি চমকপ্রদ মন্তব্য করেছেন তামাকমুণ্ডি লেইনের ক্যাঙ্গারু জুতার দোকানের কর্মচারি মো.তুষার।

 

‘আপনি শুধু গেইটে এসে দাঁড়াবেন।   তারপর আর হাঁটতে হবে না।   ঠেলতে ঠেলতে আপনাকে ভেতরে নিয়ে যাবে।   পাঞ্জাবি কিনতে চাইলে দেখবেন দোকান আপনার সামনে।   জুতা কিনতে চাইলে দেখবেন ধাক্কা খেয়ে আপনি জুতার দোকানের সামনে এসে পৌঁছেছেন। ’

বরাবরের মতো নিউমার্কেটে পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ আর জুয়েলারির দোকানের সামনে দেখা গেছে প্রচণ্ড ভিড়।   নতুন অনেক মার্কেট গড়ে উঠলেও ব্যতিক্রমী ও মানসম্পন্ন শাড়ি এবং পাঞ্জাবির জন্য ক্রেতারা এখনো নিউমার্কেটেই আসছেন বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।  

রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিউমার্কেট থেকে বাজার সেরে বের হন আর্ন্তজাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাফুল হক।   তিনি বাংলানিউজকে বলেন, দিনে একেবারে সময় পাই না।   সেজন্য সন্ধ্যার পর শপিং করতে এসেছি।   প্রতিবছরই আমি, আব্বু, আম্মু সবাই ইফতারির পর শপিং করতে বের হই।   আর শপিংয়ের ক্ষেত্রে আমরা নিউমার্কেটকেই বেছে নিই।  

গভীর রাতে নিউ মার্কেটে ঈদের কেনাকাটায় ক্রেতাদের জনস্রোত।  ছবি : উজ্জ্বল ধর

নিউমার্কেটের বাঙালি বাবু নামে একটি দোকান থেকে পাঞ্জাবি কিনে বের হওয়া অর্নিবাণ ধর বাংলানিউজকে বলেন, সন্ধ্যার পর ঠাণ্ডা মাথায় শপিং করতে পারি।   রোজা রেখে দিনের বেলা শপিং করতে ইচ্ছা হয় না।   সেজন্য আসি না।

তামাকমুণ্ডি লেইনের প্রেসিডেন্ট পাঞ্জাবির দোকানের কর্মচারি মো.হারুন বাংলানিউজকে বলেন, ২০ রোজা থেকে মানুষের ভিড় শুরু হয়েছে।   এর আগ পর্যন্ত এমন ভিড় ছিল না।  

তামাকমুণ্ডি লেইনের ক্যাঙ্গারু জুতার দোকানের কর্মচারি মো.তুষার বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ১৫ রোজার পর থেকে মানুষ আস্তে আস্তে মার্কেটে আসতে শুরু করেছে।   তবে বৃষ্টি পড়লে সন্ধ্যার পর মানুষ তেমন থাকে না।

‘অনেকেই তো চাকরি করেন, সবাই তো আর ব্যবসা করেন না।   তারা বেতন-বোনাস পেয়েছেন।   এরপর মার্কেটে আসছেন।   চাঁদ রাত পর্যন্ত মানুষের ভিড় থাকবে। ’ বলেন তুষার।

‍তামাকমুণ্ডি লেইন, রিয়াজউদ্দিন বাজার ঘিরে প্রায় সাড়ে তিন’শ মার্কেট আছে।   প্রত্যেক মার্কেটেই সমান ভিড় দেখা গেছে।   শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, বাচ্চাদের পোশাক, জুতা, পাঞ্জাবি, শার্ট-টি শার্ট, প্যান্টসহ সব ধরনের দোকানেই মানুষের ভিড় লেগে আছে।

গরীব মানুষের মার্কেট হিসেবে পরিচিত রিয়াজউদ্দিন বাজারের বিপরীতের জহুর হকার মার্কেট।  রাত ১টায় গিয়ে সেখানে রীতিমতো মানুষের ঢল দেখা গেছে।   এ্যালিগেন্স প্যান্টের দোকানের মালিক মিলন দাশ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে সস্তায় ভাল জিনিস আছে।   সেজন্য মানুষ হকার মার্কেটে বেশি আসছে।   বড় বড় মার্কেট, শপিংমলগুলোতে ঝাড়বাতি লাগিয়ে একটু আধুনিক করে একই জিনিস বেশি দামে বিক্রি করে।   মানুষ শুধু শুধু একই পোশাক বাড়তি দামে কিনবে কেন।

মধ্যরাতে নিউ মার্কেটে ক্রেতাদের স্রোত।  ছবি উজ্জ্বল ধর

হকার মার্কেটে বড়দের শার্ট-প্যান্টের একটি দোকানের মালিক মো.বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, তামাকমুণ্ডি লেইন, হকার মার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, নিউমার্কেট মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার দোকান আছে।   প্রতিদিন সন্ধ্যার পর এক থেকে দেড় লাখ লোক মার্কেটে আসছে।  

নগরীর মোজফফর নগর এলাকা পাঁচ বছরের মেয়ে এবং কোলের শিশু নিয়ে তামাকমুণ্ডি লেইনে কেনাকাটা করতে এসেছেন আকলিমা বেগম।   ভিড়ের চাপে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়েছেন একটি দোকানের সামনে রাখা চেয়ারে।

আকলিমা বাংলানিউজকে বলেন, সেহেরি খেয়ে ঘুমাতে যায়।   আবার দুপুরের আগে উঠে ইফতার বানাতে হয়।   ইফতারির আগে মার্কেটে আসার সুযোগ নেই।   সেজন্য রাতে এসেছি।   এত মানুষ, আসলে মার্কেটে ঢুকতেই কষ্ট হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০২১৬ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭

আরডিজি/টিসি   

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।