যাত্রীদের অভিযোগ, রমজান মাসে ইফতারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে নিম্নমানের খাবার খেতে বাধ্য করা হচ্ছে যাত্রীদের। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
নির্ধারিত মূল্যেই ইফতারের প্যাকেট ও অন্যান্য খাবার বিক্রি করা হচ্ছে দাবি করলেও লোকসান এড়াতে ইফতারের প্যাকেট কম করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুবর্ণ এক্সপ্রেস বিরতিহীন ট্রেন হওয়ায় কোথাও থামে না।
যাত্রীদের অভিযোগ, মোট যাত্রীর অর্ধেকেরও কম ইফতার প্যাকেট সরবরাহ করা হয় ট্রেনে। ফলে ইফতারের সময় ক্যান্টিন থেকে সরবরাহ করা চড়া দামের কাকলেট, চিকেন-পাউরুটি, চিপস ইত্যাদি দিয়ে ইফতার করতে হচ্ছে যাত্রীদের।
গত সোমবার (১৯ জুন) ঢাকা থেকে সূবর্ণ ট্রেনে চট্টগ্রাম এসেছেন ব্যবসায়ী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ট্রেনের ‘ঘ’ বগির ৪৪ নম্বর সিটে আমি বসেছিলাম। কিন্তু আমার দুই সারি সামনে থাকতেই ইফতারের প্যাকেট শেষ বলে জানায় ট্রেনের খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী।
তিনি বলেন, ক্যান্টিনের সেলফে ইফতারের প্যাকেট থাকলেও সেগুলো নিজেদের জন্য সংরক্ষিত বলে জানায়। আমি ক্যান্টিনে গিয়ে অনেক অনুরোধ করেও এক প্যাকেট ইফতার সংগ্রহ করতে পারিনি। বাধ্য হয়ে অপ্রচলিত ও অপছন্দের খাবার কিনে ইফতার করতে হয়েছে।
আরেকজন যাত্রী জানান, শুধু ‘ঘ’ বগিই নয়, অন্যান্য বগিতেও অধিকাংশ যাত্রী ইফতার প্যাকেট কিনতে পারেননি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ১৫ টাকার পানি ২০, ২২ টাকার সেজান জুস ৩০ টাকায় এবং এককাপ কফি ২০ টাকা ( প্লাস্টিক কাপে পরিবেশন করা হয়, যা মোটেও স্বাস্থ্য সম্মত নয়) বিক্রি করা হচ্ছে। বাড়তি মূল্য পরিশোধের পরও ইফতারের সময় ৭০ টাকায় একপিস ভেজিটেবল কাকলেট ও দুই পিস রুটি কিনে খেতে হবে?
খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাবিব বাণিজ্য বিতানের বিরোদ্ধে ঠাণ্ডা, বাসি ও নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ অনেক পুরানো উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতীতে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রীর আসন সংখ্যা ৮৯৯। কিন্তু খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাবিব বাণিজ্য বিতান অর্ধেক যাত্রীর জন্যও ইফতারের প্যাকেট করেননি।
মেসার্স হাবিব বাণিজ্য বিতানের মালিক মো.মামুন হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, নির্দিষ্ট মূল্যে ইফতারের প্যাকেট ও অন্যান্য খাবার বিক্রি করা হচ্ছে। আমার কর্মীরা বেশি দাম নিচ্ছে কিনা সেটি আমি খতিয়ে দেখব। রমজানের শুরু থেকে যাত্রী কম হওয়ার ইফতারের প্যাকেট কম করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইদকে সামনে রেখে যাত্রী বেড়েছে। ফলে এ ধরনের সমস্যা হয়েছে।
নিম্নমানের খাবারের বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে ট্রেনে এখন চুলা জ্বালানো যায়না। ফলে খাবার গরম থাকে না। এছাড়া সরকারি (রেল কর্তৃপক্ষের) ওভেন ব্যবহার করতে হয়। সেটি অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে। যান্ত্রিক বিভাগের কর্মচারীদের টাকা দিয়ে মেরামত করার পর আরেকজন আসলে তাকেও টাকা দিতে হয়। সরকারি কাজ বোঝেন তো।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম আবদুল হাই বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও তারা অস্বাস্থ্যকর ও নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৭
এমইউ/টিসি