ছিনতাই প্রতিরোধ করতে না পারা নিয়ে আক্ষেপ আছে সিএমপির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজনের মতে, নগরীতে প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
ছিনতাই ‘পুরোপুরি’ রোধ করা যায়নি বলে স্বীকার করেছেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) সালেহ মো.তানভীর। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি, কিন্তু নগরবাসীকে স্বস্ত্বি দেওয়ার জন্য যতটুকু দরকার ছিল ততটুকু বোধহয় হয়নি।
‘ছিনতাইকারীদের বিভিন্ন গ্যাংয়ের প্রায় ৫০-৬০ জনকে গ্রেফতার করেছি। আরও কয়েকটি গ্যাং আছে। নতুন কোন গ্যাং গজিয়ে উঠেছে কি না সেটা আমাদের বিশেষ টিম দেখছে। ’
সূত্রমতে, ছিনতাইকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এবার রমজানে দুই ভাগে নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্যোগ নেয় সিএমপি। প্রথম ১৫ রোজা পর্যন্ত ১০০৮ জন মাঠে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ১১০২ জন পুলিশ সদস্য মাঠে থাকছে। ছিনতাই প্রতিরোধে এবার প্রথমবারের মতো নগর গোয়েন্দা পুলিশের মাধ্যমে দুটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।
এসব উদ্যোগের পরও ছিনতাই প্রতিরোধ করতে না পারার বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ইফতারির পর সন্ধ্যায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যানজট ও লোডশেডিং হচ্ছে। প্রতি বছরের মতো সড়কবাতি সংস্কার করে অন্ধকার এলাকাগুলোকে আলোকিত করার উদ্যোগ এবার সিটি করপোরেশন নেয়নি। এর সুযোগ নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা।
তাদের মতে, প্রতিবছরের মতো ছিনতাইকারীদের তালিকা হালনাগাদ না হওয়ায় কারা জেলে আছে, কারা বাইরে আছে এসব বিষয়ে কোন কাজ হয়নি। এছাড়া সিএমপির মাঠ পর্যায়ে দক্ষ ও চৌকস অফিসারের সংকট চলছে। নগরীর ১৬ থানার মধ্যে কমপক্ষে ১২ জন নতুন ওসির চট্টগ্রামের অপরাধীদের বিষয়ে কোন ধারণাই নেই।
পুলিশ সূত্রমতে, সন্ধ্যার পর নগরীর জামালখান, সার্সন রোড, লাভলেইনের মোড় থেকে সাত রাস্তা, কাজীর দেউড়ি, লালখানবাজার, টাইগারপাস, আমবাগান, চৌমুহনী, দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের নিচে নির্জন স্থানে, বারিক বিল্ডিং মোড়, জিইসি থেকে এ কে খান মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন স্পট, মিমি সুপার মার্কেটের সামনে, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, পাঁচলাইশে শেভরনের সামনে, বায়েজিদের শেরশাহ, ওয়াজেদিয়া মোড়, অক্সিজেন মোড়, কর্ণফুলী থানার ডাঙ্গারচর স্পটে প্রতিদিনই অন্তত দুয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর) মো.কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, মোবাইল, মানিব্যাগ, ভ্যানিটি ব্যাগ, পকেট থেকে টাকাপয়সা এসব ছোটখাট ছিনতাই যে বিভিন্ন স্পটে হচ্ছে না, সেটা বলা যাবে না। তবে বড় ধরনের পাঁচ লাখ-দশ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের কোন ঘটনা রোজা শুরুর পর থেকে হয়নি। আশা করি হবেও না।
সূত্রমতে, রোজা শুরুর পর গত ৫জুন বায়েজিদে পোশাক কারখানার দুই লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় চারজন গ্রেফতার হয়েছে। ৬জুন ও ১৩জুন দেওয়ানহাট ওভারব্রিজের নিচে পৃথক দুটি মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ১৫জুন আগ্রাবাদে শারমিন আক্তার নামে এক তরুণীর মোবাইল ছিনতাইয়ের সময় হাতেনাতে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। ১৬জুন কর্ণফুলী থানায় পাঁচজন ছিনতাইকারী হাতেনাতে আটক হয়। খুলশী থানায় রোববার গ্রেফতার হয়েছে জাহিদ খান ওরফে লিটন নামে ছিনতাইকারী দলের এক নেতা। সোমবার ডবলমুরিং থানার পোস্তারপাড়ে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ৬ জনকে আটক করা হয়েছে।
তবে এর মধ্যে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৩ জুন রাতে। নগরীর জামালখানে আইডিয়াল স্কুলের সামনে ছিনতাইকারী ব্যাগ টান দেওয়ায় চলন্ত রিকশা থেকে পড়ে মারা গেছেন শিরিন আক্তার নামে এক তরুণী। এই ঘটনার সাতদিন পরও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
নগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, জামালখানে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটিয়েছে আওয়ামী লীগের এক মন্ত্রীর অনুসারী পরিচয় দিয়ে চলা বিতর্কিত একজনের গ্রুপের ছিনতাইকারীরা। এজন্য পুলিশ ওই ছিনতাইয়ে জড়িতদের নাম-ঠিকানা পাবার পরও তাদের গ্রেফতার করছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
আরডিজি/আইএসএ/টিসি