ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘রিয়েল’ প্রতারণার মাধ্যমে ছিনতাইয়ে কালু-মুন্না

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩১ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭
‘রিয়েল’ প্রতারণার মাধ্যমে ছিনতাইয়ে কালু-মুন্না প্রতারণার মাধ্যমে ছিনতাইয়ে কালু-মুন্না

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া দুই ছিনতাইকারী তাদের ছিনতাইয়ের চকমপ্রদ কৌশলের তথ্য প্রকাশ করেছে।  অস্ত্র ঠেকিয়ে কিংবা জোরপূর্বক ছিনতাই তারা করে না।  তাদের কৌশল হচ্ছে প্রতারণার মাধ্যমে ছিনতাই। 

সৌদিআরবের মুদ্রা ‘রিয়েল’ দেখিয়ে প্রথমে তারা টার্গেট করা লোকটিকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে।  এরপর তার কাছ থেকে বড় অংকের টাকা ছিনতাই করে নেয়।

গোপালগঞ্জের মকসুদপুরের বাসিন্দা ইলিয়াস তাদের দলনেতা।   প্রতারণার মাধ্যমে ছিনতাইয়ের জন্য মাঝে মাঝে ইলিয়াস চট্টগ্রামে আসেন।

 

দুই ছিনতাই কারী হল, কালু শেখ (২৬) ও মো.মুন্না (৩২)।   দুজনসহ মোট ছয়জনকে গত (রোববার) রাতে গ্রেফতার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।   তাদের বাড়িও গোপালগঞ্জের মকসুদপুরে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (পশ্চিম) এ এ এম ‍হুমায়ন কবির বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রামের অনেক লোক মধ্যপ্রাচ্যে থাকে।   এজন্য রিয়েল মুদ্রাকে তারা প্রতারণার হাতিয়ার করেছে।  

সাংবাদিকদের সামনে কালু শেখ পুলিশের কাছে প্রতারণার মাধ্যমে ছিনতাইয়ের কৌশল বর্ণনা করেন।  

১০০ রিয়েলের দুইটি কিংবা তিনটি নতুন মুদ্রা পকেটে নিয়ে বের হয় কালু শেখ।   মোটামুটি কম জনবহুল এলাকায় একজনকে টার্গেট করে কম দামে রিয়েল কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ করে।   ওই ব্যক্তি রাজি হলে তার কাছে প্রথমে একটি কিংবা দুইটি রিয়েল বিক্রি করে।   আগ্রহ দেখে আরও বেশি পরিমাণ রিয়েল বিক্রির প্রস্তাব দেয়া হয়।   রাজি হলে উপরে-নিচে দুইটি ১০০ রিয়েলের নোট দিলে ভেতরে কাগজ দিয়ে দেয়া হয়।  

কালু শেখ বলেন, অনেক সময় বান্ডিল নিয়ে চলে যায়।   অনেক সময় আবার বান্ডিলের ভেতরে দেখে।   কিন্তু ভেতরে কাগজ দেখে ফেলার আগেই আমরা টাকা নিয়ে ফেলি।   অনেক সময় দ্রুত চলে যায়।   আবার প্রতিবাদ করলে আমরা হুমকি দিই, ভয় দেখায় কিন্তু টাকা ফেরত দিই না।

রিয়েল এবং কাগজের বান্ডিল ইলিয়াস সরবরাহ করে বলে জানান কালু।

১৫ রোজার দিন নগরীর চৌমুহনীতে ইলিয়াসের সঙ্গে মিলে প্রতারণার মাধ্যমে এক লাখ টাকা ছিনতাইয়ের একটি তথ্যও দিয়েছে কালু।   তিনি জানান, এক লাখ টাকার মধ্যে ইলিয়াস তাকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে।   এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা সে দেনা শোধ করেছে।  বাকি পাঁচ হাজার টাকা নিজের কাছে রেখেছে।

কালু জানান, সে ও মুন্না উভয়ই একসময় ট্রাকচালকের সহকারি হিসেবে কাজ করত।   এখন ট্রাক চালাতে পারে।   তবে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় তারা ট্রাক চালাতে পারছে না।   লাইসেন্স করার টাকার জন্যই তারা এই প্রতারণার মাধ্যমে ছিনতাইয়ে নেমেছে।

মুন্না জানায়, চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে কোন ছিনতাইয়ে সে অংশ নেয়নি।   তবে বছরখানেক আগে ঢাকার শাহবাগে সে এবং ইলিয়াস মিলে ৪০ হাজার টাকা ছিনতাই করেছিল।

গত ১০ বছর ধরে নগরীর মাদারবাড়ির বাসিন্দা কালু ও মুন্নাকে এলাকার ছেলে ইলিয়াস দুই বছর আগে এই পেশায় এনেছে বলেও জানিয়েছে তারা।

প্রতারণার মাধ্যমে ছিনতাইয়ের এই সিন্ডিকেটে চট্টগ্রামে আরও বেশ কয়েকজন আছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো.কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, কালু ও মুন্না এখানেই থাকে।   ইলিয়াস মাঝে মাঝে গোপালগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামে আসে।   স্টেশন রোডে ২০০-৩০০ টাকা ভাড়ায় হোটেলে উঠে।   সপ্তাহখানেক থেকে ৩-৪টি কাজ করে আবার চলে যায়।   এবার ঈদের আগেও তাদের বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল।

পকেটমার চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বড় ধরনের ছিনতাইয়ের পরিকল্পনার কথাও জানিয়েছে কালু ও মুন্না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।