ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বেতন পেল সন্ধ্যায়, আগুন নিয়ে গেল রাতে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০২ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৭
বেতন পেল সন্ধ্যায়, আগুন নিয়ে গেল রাতে আগুনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: গার্মেন্টস কর্মী মরিয়ম বেগম বৃহস্পতিবারই হাতে পেয়েছেন মে মাসের বেতন।  বেতনের সেই ১০ হাজার টাকাসহ আরও নগদ ৩০ হাজার টাকা একসঙ্গে করে ঘরের ওয়্যারড্রোবের এক কোনায় খুব যত্ন করে রেখেছিলেন। সামনে রমজানের ঈদ। ছেলেমেয়েদের নতুন কাপড়-চোপড় কিনে দেওয়াসহ নিত্য প্রয়োজনীয় খরচপাতি তো আছেই।  এই টাকাটা সেজন্যই।

কিন্তু মধ্যরাতে মরিয়মের সেই কষ্টের টাকাসহ সব নিয়ে গেছে আগুন।   ঘড়ির কাঁটা তখন তিনটা ছুঁইছুঁই।

  মরিয়ম ও তার সন্তানরা সবে তখন সেহেরি খাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে ব্রাশের মধ্যে টুথপেস্টটা লাগিয়েছেন।  ঠিক তখনই ‘আগুন আগুন’ শব্দে কোনোমতে মোবাইলটা সঙ্গে নিয়ে বের হতে পেরেছিলেন।
কিছুই করার ছিল না আর।  এরপর দূর থেকে দেখেছেন এতদিনের জমানো সম্পদ, বেতনের টাকাসহ সব গ্রাস করে নিয়েছে আগুন।

বৃহস্পতিবার দিনগত রাতের এই ঘটনা নগরীর আতুরার ডিপোর করিম জমিদার লেইন এলাকার।   আগুনে মরিয়মদের পরিবারকে পথে বসতে হয়েছে।  উপোস রোজা রাখলেও শুক্রবার ইফতার কী দিয়ে করবেন তাও জানেন না তারা।

স্থানীয়রা ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ওই এলাকার ভান্ডারি জুটমিল নামের একটি কারখানায় বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকেই আগুনের সূত্রপাত। কারখানার সঙ্গে লাগোয়া ছিল মরিয়মদের দুই কক্ষের টিনের ঘরটি।  সেখানে এক মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে থাকতেন মরিয়ম। আগুনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়

আকস্মিক দুর্ঘটনায় সব হারিয়ে কান্না থামছে না মরিয়মের।   একটু পর পর জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি।   শুক্রবার (৯ জুন) দুপুর ১২টায় মরিয়মের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে কথাও বলা যায়নি। তখনও তিনি বেহুঁশ।

তার মেয়ে ফাতেমা আক্তার বলেন, সেহেরি খেতে ঘুম থেকে উঠে মুখ-ধোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।   তখন হঠাৎ করে পাশের জুটমিলে লাগা আগুন আমাদের বাসাতেও ধরে যায়।   আমরা কোনোমতে মোবাইলটা নিয়ে বের হতে পেরেছি। আর কিছু সঙ্গে নিতে পারিনি।   আগুনে আমাদের সব পুড়ে গেছে। নগদ ৪০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে ডেকচি-পাতিল সব পুড়ে গেছে।

মুহূর্তের আগুনে গচ্ছিত সব চলে যাওয়ায় চোখে ঘোর অন্ধকার দেখছে নিম্ন আয়ের এই পরিবারটি।  

ফাতেমা বলেন, ‘রান্না করা ভাত-তরকারি পুড়ে যাওয়ায় সেহেরি খেতে পারিনি। উপোস রোজা রাখতে হয়েছে। এখন এই ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে উঠবো জানি না।   আগুন আমাদের সবকিছু নিয়ে গেছে। কীভাবে জীবন চলবে জানি না। ’

এদিকে জানতে চাইলে আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার এনামুল হক বাংলানিউজকে জানান, জুটমিলে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়।   এতে পাশের একটি বাসাও পুড়ে গেছে।   এই আগুনে প্রায় দেড় লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৭

টিএইচ/আইএসএ/টিসি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।