ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ইফতার

ধনী-গরিব এক পাতে, দুই হাজার মানুষ একসঙ্গে

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৩ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭
ধনী-গরিব এক পাতে, দুই হাজার মানুষ একসঙ্গে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে ইফতার গ্রহণের অপেক্ষায় রোজাদাররা। ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: মোহাম্মদ ইসমাইল ও ইলিয়াস আলী। প্রথমজন পেশায় ব্যবসায়ী, মোটামোটি বিত্তবান। দ্বিতীয়জন রিকশাচালক, দিনমজুর। রোববার (২৮ মে) সন্ধ্যায় এই দুইজন পাশাপাশি ইফতারির জন্য বসেছিলেন নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের টানা বারান্দায়।

সামনে ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, জিলাপি, খেজুর, শরবতসহ মোট নয়টি পদ। মাইকে ইফতারি গ্রহণের ঘোষণা আসতেই এক পাত থেকে খাচ্ছেন ইফতারি।

ধনী-গরিবের বিভাজন মিটিয়ে দেওয়ার এই চিত্র প্রতিবছরের মতো এবারও রমজানের প্রথমদিন থেকে শুরু হয়েছে এই মসজিদে। পুরো রমজানে একটানা চলবে এভাবে।

এখানে কে ধনী, কে গরিব-তার কোনো ভেদাভেদ নেই। বেশি সওয়াবের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দিনভর রোজা শেষে ইফতার গ্রহণের জন্য জড়ো হন এখানে।

কথা হয় মোহাম্মদ ইসমাইল ও ইলিয়াস আলী। মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘পরিবারের সবাই চান ঘরে তাদের সঙ্গে ইফতার করি। কিন্তু এখানে আসলে আলাদা একটা শান্তি পাই। প্রতিবছর প্রায় সময় এখানে ইফতার করি। এবছরও শুরু করলাম। ’আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে ইফতারের চিত্র।  ছবি: উজ্জ্বল ধর, বাংলানিউজ

অন্যদিকে ইলিয়াস বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। কিন্তু এখানে এসে যে আতিথিয়তা পাই-নিজেকে খুবই গর্বিত লাগে। আশা করছি প্রতিদিন এখানে ইফতার করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। ’

রোববার সন্ধ্যায় দেখা যায়, মসজিদের বারান্দায় শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। এই শামিয়ানার নিচে লম্বালম্বি মুখোমুখি তিনটি সারি। মূল মসজিদের ভেতরের পরিবেশও একই। সেখানে ৮-১০ করে করে গোলকারভাবে বসেছেন অনেকেই। সংখ্যায় সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার মানুষ।

মসজিদ সূত্র জানায়, সৌদি আরবের মক্কা-মদিনার আদলে এভাবে ইফতারের রেওয়াজ চালু করা যায় কিনা সেই বিষয়ে ১৯৯৭ সালের দিকে প্রথমবারের মতো চিন্তাভাবনা এবং মসজিদ কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করতে থাকেন মসজিদের খতিব সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল-মাদানী।

আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে ইফতার গ্রহণের অপেক্ষায় রোজাদাররা।  ছবি: উজ্জ্বল ধরতার সেই চিন্তা থেকেই ২০০১ সাল থেকে ছোট আকারে চালু হয় ভিন্নধর্মী এ ইফতার। তবে ২০০৭ সাল থেকে জমে যায় এই মিলনমেলা। ওই বছর থেকে রমজানের প্রতিদিন দুই হাজার থেকে চার হাজার মানুষ জমায়েত হয় এখানে।

খতিবের একান্ত সচিব হাসান মুরাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতিবছরই ইফতারের জন্য পাঁচজন বিত্তবান সহযোগিতা করে আসছেন। তবে ওই বিত্তবানরা কেউই নিজেদের পরিচয় জানাতে আগ্রহী নন। তাদের সহযোগিতা এবং হুজুরের (খতিব) একান্ত উদ্যোগে প্রতিবছর এটি বাস্তবায়ন করা হয়। এই কর্মযজ্ঞে ইসলামী ফাউন্ডেশন তত্ত্বাবধান ও শাহী জামে মসজিদ মুসল্লি পরিষদও সহযোগিতা করে। ’

হাসান মুরাদ আরও বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল থেকেই চলে ইফতার তৈরির প্রস্তুতি। মোট ১২ জন বাবুর্চি ও তাদের সহযোগী মিলিয়ে প্রায় ৩০ জন মানুষ একটানা বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তৈরি করেন ইফতার সামগ্রী। মসজিদের একপাশের রান্নাঘরে বড় বড় পাতিলে পাকানো হয় এসব। এছাড়া রোজাদারদের ইফতার সামগ্রী বন্টনের জন্য আছেন ১২ জন কর্মচারী। ’

আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে ইফতার গ্রহণের অপেক্ষায় রোজাদাররা।  ছবি: উজ্জ্বল ধরকয়েকজন বাবুর্চি জানান, ‘মোট নয় পদের ইফতার সামগ্রী রোজাদারদের দেওয়া হয়। এর মধ্যে চানাবুট, পেঁয়াজু, জিলাপি, সমুচা, আলুর চপ তৈরি হয় রান্নাঘরে। জিলাপি, মুড়ি ও শরবত বানানো হয় অন্য জায়গা থেকে। খেজুরও আনা হয় বাইরে থেকে। মসজিদের নিজস্ব ডিপ টিউবওয়েল থেকে সরবরাহ করা হয় পানি। ’

রমজানের প্রথমদিন আসরের নামাজের পর রমজানের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা ও মোনাজাত পরিচালনা করেন  মসজিদের খতিব সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল-মাদানী।

তিনি তার আলোচনায় মসজিদে ইফতার গ্রহন করতে আসা রোজাদারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা এখানে আসায় আমরা খুবই আনন্দিত। আপনারা আমাদের মেহমান। প্রতিদিন আমাদের সঙ্গে শরিক হোন। আপনাদের দাওয়াত। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৭

টিএইচ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।