ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

গরম থেকে বাঁচতে ‘পেশা’ বদল !

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৬ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭
গরম থেকে বাঁচতে ‘পেশা’ বদল ! গরম থেকে বাঁচতে ‘পেশা’ বদল !

চট্টগ্রাম: কাজির দেউড়ি থেকে লাভ লেইনের দিকে যাওয়ার পথে।  একটু এগুতেই মাথার উপর শাখা মেলে দাঁড়িয়ে থাকা গাছেদের সারি।  সেখানকার একটি গাছের ছায়ার নিচে বসে বছর পয়তাল্লিশের ছগির আহমেদের হাঁকডাক-‘তালের শাঁস খেয়ে যান, দাম মাত্র ১৫ টাকা।’

কাছে গিয়ে আলাপচারিতা জমলে এক ফাঁকে ছগির আহমেদকে জিগ্যেস করা হলে, ‘তালের ব্যবসা তো মৌসুমি।   বাকি সময় কি করেন।

হাসতে হাসতে বললেন, ‘তালের ব্যবসা কি আর শখ করে করছি।   আমি ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজে সহযোগি হিসেবে কাজ করি।

 কিন্তু এখন যে গরম পড়ছে এসব কষ্টসাধ্য কাজ চালিয়ে নেওয়া আরও দুঃসাধ্য বিষয়।   তাই এই সময়টা তালের ব্যবসা করে পার করে দিতে চাচ্ছি।   গরম বলে এই তালটাও এখনও মোটামোটি ভালো চলছে। ’

‘দিনশেষে টাকা একটু কম আয় হোক, কাঠফাঁটা গরম থেকে তো বাঁচা যাচ্ছে। ’ হাসির রেশ থামে না ছগিরের চোখে-মুখে।

প্রায় অর্ধমাস ধরে চারপাশটা জুড়ে কেবল কাঠফাটা রোদ্দুরের মাখামাখি। মাঝারি মাত্রার তাপদাহ আর ভ্যাপসা গরমে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতেও ঝর ঝরিয়ে ঝরছে ঘাম।  তার সঙ্গে ‍যুক্ত হয়েছে বিদ্যুতের লুকোচুরি।  সবমিলিয়ে প্রচণ্ড গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণ।   এমন গরম মাথায় নিয়ে কষ্টসাধ্য কাজ চালিয়ে নেওয়া যে কি পরিমাণ দুঃসাধ্য তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন।

তাই শুধু ছগির নন, গরম থেকে বাঁচতে দিনমজুর হিসেবে যারা কাজ করছেন এমন অনেক মানুষ ঝুঁকেছেন কম কষ্টসাধ্য কাজের দিকে। তাদের কথা গরম মৌসুমটা যাক, তারপর পুরোনো পেশায় ফিরে যাবো।  গত কয়েকদিনে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন অসংখ্য মানুষকে পাওয়া গেল। গরম থেকে বাঁচতে ‘পেশা’ বদল !

তাদেরই আরেকজনের সঙ্গে কথা হয় আন্দরকিল্লা এলাকায়। শিশুসন্তানকে নিয়ে লেবুর শরবত বিক্রি করছিলেন আবদুল্লাহ।

আবদুল্লাহ বলেন, ‘চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বিভিন্ন জিনিসপত্র উঠানামা করার কাজ করি। কিন্তু অতিরিক্ত গরম বলে গত দুই সপ্তাহ ধরে সেটি আর চালিয়ে নিতে পারছি না। অসহ্য গরমে এতো কষ্টসাধ্য কাজ করার ফলে অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তাই ভাবছি গরম মৌসুমটা শরবত বিক্রি করেই কাটিয়ে দিই।   কষ্টও কম।   গরমও কম পোহাতে হচ্ছে। ’

যারা প্রতিদিনের হিসেবে ভাড়া করে প্যাডেলচালিত রিকশা চালাতেন তাদের অনেকেও পেশা বদল করেছেন।

তিনি আবদুর রহিম।   রিকশা চালানোটা তার নিয়মিত পেশা।  কিন্তু এখন তিনি প্রতিদিন নগরীর দিদারমার্কেট এলাকায় একটি ভবনের ছায়ার আড়ালে দাড়ান ভ্যানভর্তি শাক-সবজি নিয়ে।

দুই সন্তানের জনকের বক্তব্যও ওই একই-‘রিকশা চালানোটা খুবই কষ্টের।   এই গরমে সেটা রূপ নিয়েছে ডাবল কষ্টে।  কিন্তু মানুষজন তো আমাদের বাড়তি টাকা দেবেন না।  গরম বলে কয়েক সপ্তাহ ধরে আপাতত শাক-সবজি বিক্রি করছি।  গরমে তো শান্তিতে একটু দাঁড়াতে হলেও পারছি। ’

তবে আবদুর রহিমের মতো পেশা বদল করেন নি শাহাদাত।   তিনি আগের মতো রিকশাই চালাচ্ছেন। কিন্তু তাকে এখন প্যাডেল ঘুরাতে হয় না।   তিনি গত দুই সপ্তাহ ধরে পুলিশ এড়িয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাচ্ছেন কাজির দেউড়ি থেকে চকবাজার-দিদার মার্কেট-এই সড়কে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭

টিএইচ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।