কয়েক মাস ধরে নগরীর বিভিন্ন স্থানে চোখে পড়ছে কয়েকটি পিকআপ। যার ওপর বসানো হয়েছে একটি ছোট্ট জেনারেটর আর সরিষার তেলের মিনি কারখানা।
কারখানার সরঞ্জাম বলতে কয়েক বস্তা সরিষা, কিছু ড্রাম, মগ, গামলা, খালি প্লাস্টিক বোতল, খৈল (খলদি) রাখার বস্তা ইত্যাদি। একেকটি গাড়িতে চার-পাঁচজন কর্মী। তাদের কেউ সরিষা ঢেলে তেল তৈরি করেন, কেউ তেল ভরেন প্লাস্টিক বোতলে, কেউ টাকা নেন।
মোমিন রোডে কথা হয় চাঁদপুরের কচুয়ার মো. হারুনুর রশিদের সঙ্গে। তিনি রেখা আলম চৌধুরীর ভ্রাম্যমাণ তেল কারখানার অন্যতম কারিগর। বললেন, তিন কেজি সরিষা থেকে প্রায় এক কেজি তেল বের হয়। প্রতি কেজি তেল আমরা ২২০ টাকা করে বিক্রি করছি। সরিষার নির্যাস মেশিন চেপে তেল করে দেওয়ার পর বাকি মণ্ড খৈলে পরিণত হয়। মেশিনের তাপেই খৈল শুকিয়ে যায়। যা মাছ, মুরগি ও গরুর উৎকৃষ্ট খাদ্য। এক কেজি খৈল পাইকারিতে ৩১-৩৩ টাকা, খুচরায় ৪০-৪২ টাকা বিক্রি হয়।
কারখানার ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সরিষার মানের ওপর নির্ভর করে তেলের পরিমাণ। মোটামুটি সরিষার তিন ভাগের এক ভাগ তেল পাওয়া যায়। আমরা উত্তরবঙ্গ থেকে উন্নতমানের সরিষা নিয়ে আসি। প্রতিকেজি সরিষা কিনি ৫৩ টাকায়।
লাভের প্রশ্নে তিনি বলেন, একটি গাড়ি যখন বের হয় তখন কারিগর-শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাবদ সাড়ে তিন হাজার টাকা, জেনারেটরের ডিজেল বাবদ ১ হাজার টাকা তো স্থির খরচ আছে। এর বাইরে সরিষা ও বোতলের দাম। হাফ লিটারের একটি বোতল খরিদ করি ৬ টাকা, ১ লিটার সাড়ে ৭ টাকা, ২ লিটার সাড়ে ১১ টাকা, ৫ লিটার ৩২ টাকা। প্রতি লিটার তেল তৈরিতে আমাদের ১৯০-১৯৫ টাকা খরচ পড়ে।
তেল কত দিন সংরক্ষণ করা যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যে বোতলে তেল বিক্রি করছি তা ঘরে তিন-চার দিনে রেখে দিলে নিচে গাদগুলো শক্ত হয়ে বসে যাবে। এরপর তেলটা আরেকটি বোতলে সরিয়ে নিয়ে রোদে দিলে কমপক্ষে ৬ মাস ভালো থাকবে। যদি কয়েক মাস পরপর একটু রোদে দেওয়া যায় তাহলে এক বছরের বেশি সময় টিকবে।
একেকটি ইউনিট তৈরিতে কত খরচ পড়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা টাঙ্গাইল থেকে প্রথম সরিষার তেলের মেশিনটি তৈরি করেছি ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকায়। এরপর ক্রমে খরচ কমতে কমতে এখন সোয়া দুই লাখে নেমে এসেছে। এর বাইরে জেনারেটর, গাড়িসহ কিছু সরঞ্জাম কিনতে হয়েছে। আমাদের তরুণ উদ্যোক্তারা মাথা খাটালে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটালে খরচ যেমন কমবে তেমনি দৃষ্টিনন্দনও হবে ভ্রাম্যমাণ কারখানাগুলো।
রেখা আলম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ইদানীং সয়াবিন বা সানফ্লাওয়ার অয়েলের ব্যবহার বেশি হলেও সরিষার তেলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। স্পেশাল রান্না, বাঙালির প্রিয় ভর্তা, চাটনি তৈরি থেকে শুরু করে শিশুদের শরীরে মাখা পর্যন্ত অনেক কাজেই সরিষার তেল অদ্বিতীয় বিবেচিত হচ্ছে। ফলে বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সরিষার তেলের পাশাপাশি নকল ও ভেজাল তেলের রমরমা অবস্থা। তাই আমি কৃত্রিম ঝাঁজ, রং, কেমিক্যাল ও প্রিজারভেটিভ তেলের ভিড়ে আসল সরিষার তেলের স্বাদটা মানুষকে দিতে চেষ্টা করছি। ক্রেতার সামনেই তেল তৈরি করে দেওয়ার প্রক্রিয়াটা ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আশাতীত সাড়া পাচ্ছি।
তিনি আশা করেন, তরুণ উদ্যোক্তারা খাঁটি সরিষার তেল তৈরির মতো নতুন নতুন ব্যবসা ডেভেলপ করতে পারে। এতে বেকারত্ব যেমন কমবে তেমনি মানুষও উপকৃত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭
এআর/টিসি