দৃশ্যটি গত মঙ্গলবার (২৩ মে) নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের বন্দর বিতানের এক নম্বর পাখির গলির। সেলিম স্টোরের বাজেরিগর পাখিটির মত তীব্র দাবদাহে হিট স্ট্রোকসহ বিভিন্ন ধরনের অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে খাঁচার পাখিরা।
একই গলির আলী স্টোরের কর্মচারী মিজান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ও বুধবার দুইদিনে গরমে আক্রান্ত হয়ে তার দোকানের ৫টি কোয়েল পাখি এবং ২টি খরগোশ মারা গেছে।
ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ চিটাগং বার্ড ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাডমিন শাহ শোয়েব জানান, তীব্র দাবদাহের কারণে বিভিন্ন বাসায় খাঁচায় পোষা বিদেশি পাখিগুলোর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কিউরেটর ডা.শাহাদাৎ হোসেন শুভ জানান, চিড়িয়াখানায় প্রায় ৪০ প্রজাতির পাখির মধ্যে ময়না, টিয়াসহ কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির পাখি গরমে কাহিল হয়ে পড়ছে। পানিস্বল্পতা পূরণ করে পাখিগুলোকে বাঁচাতে তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
এই অবস্থায় চিড়িয়াখানা, বাসা এবং দোকানে খাঁচায় পোষা পাখিগুলোর প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডা.ওমর ফারুক মিয়াজী।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের এই সহযোগী অধ্যাপক বাংলানিউজকে বলেন, খাঁচায় পোষা পাখি ৩০ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রা কোনভাবেই সহ্য করতে পারে না। গরমের মধ্যে পাখি হিট স্ট্রোক, পাতলা পায়খানা, হাঁপিয়ে উঠা, মুখের ভেতরে ফেনা সৃষ্টি হওয়া এবং গ্যাংগ্রিন ও ইনফেকশনে আক্রান্ত হয়।
‘এজন্য গরম ৩০ ডিগ্রির বেশি হলে পানি ছিটিয়ে সহনীয় পরিবেশ তৈরি করতে হবে। গরম না কমা পর্যন্ত পানির সঙ্গে স্যালাইন মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। মাঝে মাঝে ভিটামিন-সি দিতে হবে। ’
রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাখির গলিতে মান্নান স্টোরে গিয়ে দেখা গেছে, কবুতরের চোখে ড্রপ দেওয়া হচ্ছে। কর্মচারী আজিজ জানালেন, তীব্র গরমের কারণে বিদেশি জাতের চুল্লি কবুতরগুলোর চোখে সমস্যা হচ্ছে। সেজন্য চোখের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
ডা.ওমর ফারুক মিয়াজী বলেন, মূলত হিট স্ট্রোকের কারণে কবুতরসহ কয়েকটি প্রজাতির পাখির চোখে এই সমস্যা দেখা যায়।
পাখির গলিতে বিভিন্ন দোকানে রাখা লাভ বার্ড, বাজেরিগর, ককাটেইল, ফিঞ্চ, লরিকেতসহ বিদেশি পাখিগুলোকে তৃষ্ণার্ত হয়ে ধুঁকতে দেখা গেছে। টিয়া পাখি, তিত মুরগি, চিনা মুরগিকেও ঝিমুতে দেখা গেছে।
বিক্রেতাদের মতে, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে কোয়েল পাখি এবং খরগোশ। লাভ বার্ড কিছুটা গরম সহ্য করতে পারলেও কোয়েল পাখির অবস্থা খারাপ।
বিক্রেতা মোহাম্মদ সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, পানি হিসেবে শুধুমাত্র স্যালাইন পানিই দেওয়া হচ্ছে। ফেলন ডাল বরফ পানিতে ভিজিয়ে খেতে দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে শুকনো খাবার তেমন দেওয়া হচ্ছে না।
তবে খাঁচায় পোষা পাখিকে গরমের মধ্যে প্রতিদিন সকালে সবুজ শাকসবজি খাওয়ানো দরকার বলে জানিয়েছেন চিটাগং বার্ড ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের অ্যাডমিন শাহ শোয়েব।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পাখিকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। গোসল করাতে হবে। যেসব পাখি গোসল করে না সেগুলোকে স্প্রে করতে হবে। হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত পাখিকে তৎক্ষণাৎ একটি বাটিতে পানি নিয়ে মাথা ছাড়া শরীর ডুবিয়ে রাখতে হবে। পাখির ঘরের তাপমাত্রা যে কোনভাবে ২৫ থেকে ২৮ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৭ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭
আরডিজি/আইএসএ/টিসি