ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চোখের সামনে সহকর্মী খুনের বর্ণনা দিয়ে কাঁদলেন মন্ত্রী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৪ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
চোখের সামনে সহকর্মী খুনের বর্ণনা দিয়ে কাঁদলেন মন্ত্রী

চট্টগ্রাম: ২৫ বছর আগে চোখের সামনে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে রাজনৈতিক সহকর্মী খুনের বর্ণনা দিতে গিয়ে আদালতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।  এসময় আদালতে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) চট্টগ্রামের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফেরদৌস আরার আদালতে সাক্ষ্য দেন মোশাররফ হোসেন।   ১৯৯২ সালের ৮ মে ফটিকছড়িতে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হারুন বশরকে হত্যা এবং নিজে আক্রান্ত হওয়ার মামলায় সাক্ষ্য দেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের তখনকার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

ঘটনার দিন ফটিকছড়ি উপজেলার আজাদী বাজারে উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হয়ে যাবার স্মৃতিচারণ করে জবানবন্দিতে মোশাররফ জানান, শেষ পর্যায়ে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে গুলি করে পন্ড করে দেয়।   তখন মোশাররফসহ নেতারা ফটিকছড়ি থানায় গিয়ে আশ্রয় নেন।

এরপর মোশাররফ থানার সামনে দিয়ে শিবির ক্যাডার নাছির ওরফে নাছিরের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দুটি বাসে উঠে স্লোগান দিতে দিতে চলে যেতে দেখার কথা জানান।  

জবানবন্দিতে মোশাররফ জানান, থানা থেকে তারা ফটিকছড়ির নানুপুরে সাবেক সাংসদ রফিকুল আনোয়ারের বাড়িতে যান।   আসরের নামাজের পর নানুপুর-গহিরা (রাউজান) সড়ক দিয়ে মোশাররফের গাড়ি শহরের দিকে রওনা দেয়।   নিশান পেট্রল গাড়িতে সামনের সিটে ছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হারুন বশর।   পরের সিটে ছিলেন মোশাররফ ও আওয়ামী লীগ কর্মী আবু আহমেদ।   পেছনের সিটে ছিলেন ‍উত্তর জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ইউনূস গণি, রাজনৈতিক কর্মী জসিম উদ্দিন শাহ এবং সাজ্জাদ (বর্তমানে বিটিভিতে কর্মরত সাংবাদিক)।   গাড়ি চালাচ্ছিলেন ইদ্রিস।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গাড়ি ফটিকছড়ির মোহাম্মদ ত্বকীর হাটে পৌঁছার পর হঠাৎ ইদ্রিস গাড়ি থামিয়ে দেন।   আবছা আলোয় মোশাররফ দেখতে পান, নাছিরের নেতৃত্বে আর্মি কিংবা পুলিশের মতো একই পোশাক পরা ৪০-৫০ জন সশস্ত্র লোক তাদের ঘিরে ফেলেছে।   তারা গাড়ি ভাংচুর শুরু করে।   ততক্ষণে ইদ্রিস গাড়ি থেকে নেমে যান।

মোশাররফ গাড়ি থেকে নেমে তাদের সামনে গিয়ে বলে, আমি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।   তোরা কি ‍চাস।   তখন নাছির হারুন বশরকে দেখে বলে, এই হারুন্যা...(ছাপার অযোগ্য গালি) তুই আইজু বাঁচি আছস না ? (হারুন, তুই এখনও বেঁচে আছিস ?)।  তখন তারা হারুনকে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে।   মোশাররফ হারুনকে পঙ্গু উল্লেখ করে তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য বলেন।

কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মোশাররফ বলেন, এই নিষ্ঠুর সন্ত্রাসীরা আমার চোখের সামনে ব্রাশফায়ার করে বশরকে হত্যা করল।   এরা সবাই স্বাধীনতা বিরোধী, বিএনপির মদদপুষ্ট ছিল তারা।

তিনি জানান, বশরকে খুন করার পর নাছির মোশাররফের বুকে অস্ত্র ঠেকিয়ে বলে, এই মোশাররফ্যা, আমি নাছির, চিনে রাখিস।

‘আমি দেখলাম আমার সামনে খুব সুন্দর এক যুবক।   আমাকে হুমকি দিয়ে বলছে তোর জীবন, তোর রাজনীতি সব আমি শেষ করে দেব। ’

মোশাররফ জানান, তখন গাড়ির পেছনের সিটে বসা ইউনূস গণি, জসিম শাহ ও সাজ্জাদ নামেন।   তাদের দেখে নাছির ইউনূস্যারে ধর বলে চিৎকার দেয়।   তারা তিনজন দৌঁড়ে চলে যেতে সক্ষম হয়।   এসময় মোশাররফ লাফ দিয়ে একটি বেতের ঝোঁপে লুকিয়ে পড়ে।   সন্ত্রাসীরা বেতের ঝোঁপ লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়ে।

আবেগাক্রান্ত মোশাররফ বলেন, ঝোঁপের মধ্যে আমি শুয়ে ছিলাম।   ব্রাশফয়ারের গুলি যদি আরেকটু নিচ দিয়ে যেত আমি সেখানে মরে পড়ে থাকতাম।   আল্লাহর কি ইচ্ছা !  

সন্ত্রাসীরা চলে যাবার পর মোশাররফ ক্রলিং করে বিস্তির্ণ ধানক্ষেত পাড়ি দিয়ে আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের একটি বাজারে পৌঁছেন।   সেখানে ইউনূস গণির সঙ্গে দেখা হয়।   পরদিন মোশাররফ এবং ইউনূস গণি একটি অটোরিকশায় করে শহরে পৌঁছান।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।