২৫ বছর আগে নিজের চোখে দেখা জামায়াত-শিবিরের নৃশংসতার বর্ণনা দিয়ে এভাবে ক্ষোভের কথা আদালতে বলেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। ১৯৯২ সালের ৮ মে ঘটনার সময় তিনি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
চট্টগ্রামের সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফেরদৌস আরার আদালতে দেয়া সাক্ষ্যে মোশাররফ যখন নৃশংসতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন আসামির কাঠগড়ায় ছিলেন শিবির ক্যাডার নাছির উদ্দিন ওরফে শিবির নাছির।
জবানবন্দিতে মোশাররফ জানান, ঘটনার দিন ফটিকছড়ি উপজেলার আজাদী বাজারে উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হয়ে তিনি গিয়েছিলেন।
থানায় বসা অবস্থায় শিবির ক্যাডার নাছিরের নেতৃত্বে আনুমানিক ১০০-১৫০ জনকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল করতে দেখা যায় বলে জানান মোশাররফ।
এরপর জবানবন্দিতে মোশাররফ তার গাড়ি আক্রান্ত হওয়া এবং নিজের চোখের সামনে রাজনৈতিক সহকর্মী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হারুন বশর হত্যা এবং নিজের বেঁচে যাবার কাহিনী বর্ণনা দেন।
মোশাররফের পর চাঞ্চল্যকর মামলাটির বাদি ও তার গাড়িচালক মো.ইদ্রিস মিয়া আদালতে সাক্ষ্য দেন। দুজনকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জেরা করেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট মো.ফখরুদ্দিন চৌধুরী, জেলা পিপি একেএম সিরাজুল ইসলাম ও বিভাগীয় বিশেষ পিপি মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী এবং অতিরিক্ত জেলা পিপি স্বরুপ পাল রাষ্ট্রপক্ষে মামলার কার্যক্রমে অংশ নেন। বাদিপক্ষে ছিলেন সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম ও ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রায় অর্ধশত আইনজীবী।
ওই আদালতের অতিরিক্ত পিপি স্বরুপ পাল বাংলানিউজকে জানান, মোশাররফ ও বাদিসহ এই পর্যন্ত মামলার সাতজন সাক্ষীর সাক্ষ্য সম্পন্ন হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণের পর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে।
১৯৯২ সালের ৮ মে ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে পন্ড করে দেয় জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এতে সম্মেলনস্থলে জমির উদ্দিন নামে একজন নিহত হয়। সম্মেলনের প্রধান অতিথি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের গাড়িতে হামলা চালিয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হারুন বশরকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। মোশাররফের বুকে রাইফেল ঠেকানোর পরও তিনি কোনমতে আত্মরক্ষা করেন।
এই ঘটনায় মোশাররফের গাড়িচালক ইদ্রিস বাদি হয়ে ফটিকছড়ি থানায় মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ৩৪২, ৩০২, ৩২৪, ৩২৩ ও ৪২৭ ধারায় মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এতে ৩১ জনকে আসামি করা হয়েছিল। আটজনের মৃত্যুর পর এখন আসামি আছেন ২৩ জন। এর মধ্যে একমাত্র শিবিরের দুর্ধর্ষ ক্যাডার নাছির উদ্দিন ওরফে শিবির নাছির জেলে আছেন।
২০০২ সালের ২৫ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর গত ১৫ বছরে সাতজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে আদালতে আসেন আওয়ামী লীগ নেতা ইউনূস গণি, জসিম উদ্দিন শাহ, বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৭
আরডিজি/টিসি