ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘বড় পুকুরটি বাঁচানোর কেউ নেই!’

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭
‘বড় পুকুরটি বাঁচানোর কেউ নেই!’ ‘বড় পুকুরটি বাঁচানোর কেউ নেই!’

চট্টগ্রাম: ‘হাজার হাজার মানুষ এ পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে প্রতিদিন গোসল করতেন। বাচ্চারা সাঁতার শিখত। মুসল্লিরা অজু করত। সেই পুকুরটি মেরে ফেলা হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন কেউ পুকুরটি বাঁচানোর উদ্যোগ নিচ্ছে না।’

বুধবার (২৪ মে) বিকেলে মুরাদপুরের মোহাম্মদ পুর বড় পুকুরের (চৌধুরী পুকুর) দক্ষিণ পাড়ে হজরত আবদুল্লাহ শাহ (র.) মাজার জেয়ারতে এসে করিম শেখ বাংলানিউজকে এভাবেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান।

সরেজমিন দেখা গেছে, বড় পুকুরটি এখন হাজামজা ছোট্ট পুকুরে পরিণত হয়েছে।

চারপাশেই চলছে ভরাটের প্রতিযোগিতা। পূর্ব পাড়ে সম্প্রতি তোলা একটি দেয়াল নজরে পড়বে যে কারও।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে এখনো পুকুরের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে ছোট্ট একটি ঘাটলা। জার্মানি লতা ও আগাছায় ভরে যাওয়া পুকুরটির ওই ঘাটলায় স্বচ্ছ পানি দিচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্যের সাক্ষ্য।    

পুকুর পাড়েই রয়েছে মোহাম্মদীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শত শত শিক্ষার্থীর মেলা। কিন্তু তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সবার। পঞ্চম শ্রেণির একজন ছাত্রী বললেন, আগে মাজারের পাশে বিশাল ঘাটলা ছিল। গ্রীষ্মে যেমন হাত-মুখ ধুয়ে আরাম পেতাম, তেমনি বর্ষায় কাদা মাড়িয়ে এসে পরিষ্কার করে শান্তি পেতাম। এখন অনেক কষ্ট। হাজার হাজার মানুষ এ পুকুরের স্বচ্ছ পানিতে প্রতিদিন গোসল করতেন।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইসমাইল বাংলানিউজকে জানান, বড় পুকুরটি ছিল এলাকাবাসীর হৃদপিণ্ডের মতো। ওয়াসার পানি নেই বড় পুকুরে ছোটো। অজু করতে হবে বড় পুকুর। গোসলে বড় পুকুর। আগুন লেগেছে ফায়ার সার্ভিসের নির্ভরতা বড় পুকুর। সেই বড় পুকুর এখন নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসের নিষেধ সত্ত্বেও ভরাট করা হচ্ছে। দেয়াল তুলে, চোখ রাঙিয়ে, ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে পুকুরের পানি ব্যবহারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

জানা গেছে, ঠাণ্ডা মিয়া চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা ইতিমধ্যে পুকুরটিতে বাঁশ দিয়ে ভাগবাটোয়ারার কাজ সম্পন্ন করেছেন। চার পাড়েই চলছে ভরাট করে দোকানপাট, বাসা বাড়ি তৈরির কাজ। পূর্ব পাড়ে যেটুকু পথ অবশিষ্ট ছিল তা-ও দেয়াল তুলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

জার্মানি লতা ও আগাছায় ভরে যাওয়া পুকুরটির ওই ঘাটলায় স্বচ্ছ পানি দিচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্যের সাক্ষ্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এলাকাবাসী বলেন, পুকুরটি পরিষ্কার না করায় একদিকে এলাকায় ডেঙ্গু মশার উৎপাত বেড়েছে অন্যদিকে অল্প বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ডুবে যাচ্ছে। একসময় পুরো এলাকার বৃষ্টির পানি ধারণ করত পুকুরটি।

৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী বাংলানিউজকে বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই বড় পুকুরসংলগ্ন মাজারের পাশের ঘাটলা ভরাট করে দেওয়া হয়। আমি নিজে ওই জায়গায় জানাজা পড়েছি। এখন প্রকাশ্যে ভরাট করা হচ্ছে না। সিটি করপোরেশন এলাকার কোনো পুকুর ব্যক্তি মালিকানায় হলেও ভরাটের সুযোগ নেই। যারা ভরাট করেছেন তাদের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে।

তিনি বলেন, এখন হয়তো দোকানপাট ও বাসাবাড়ির আড়ালে ভরাট হচ্ছে। বিষয়টি আমরা নজরদারিতে রাখব। পুকুরটির ব্যবহারকারীরা যদি পুনরায় ব্যবহারের আবেদন করেন তবে মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (মেট্রো) মো. আজাদুর রহমান মল্লিক বাংলানিউজকে বলেন, বড় পুকুরটি ভরাটের প্রমাণ আমরা পেয়েছি। আসামিদের বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে মামলাও করেছি। বিষয়টির তদন্ত চলছে। সমস্যা হচ্ছে, স্থানীয় লোকজন অজানা কারণে সাক্ষী হতে চাইছে না। দু-একজন সাক্ষী পেলে শিগগির চার্জশিট দিয়ে দেব।

তিনি বলেন, জলাধার নিয়ন্ত্রণ আইনে বলা হয়েছে সিটি করপোরেশন এলাকার কোনো পুকুর ভরাট করা যাবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭

এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।