ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

তীব্র গরমে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দিদের ‘নরক যন্ত্রণা’

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৭ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭
তীব্র গরমে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দিদের ‘নরক যন্ত্রণা’ তীব্র গরমে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দিদের ‘নরক যন্ত্রণা’। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ‘ফ্যান আছে দুইটা কিন্তু বাতাস নাই।  অসহ্য গরম।  সারারাত ঘুমাতে পারি না।  ভাল করে গোসলও করতে পারি না।  পানি দেয় কম।  খুব কষ্টে আছি। ’

জ্যৈষ্ঠ মাসের তীব্র গরমে নিজেদের দুর্ভোগের কথা বাংলানিউজের কাছে এভাবে তুলে ধরেছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আব্দুল কাদের।   কর্ণফুলী ভবনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বন্দি থাকা কাদেরকে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়।

  সেখানেই কথা হয় তার সঙ্গে।

কাদেরের মতো বেশ কয়েকজন বন্দি গরমের মধ্যে কারাগারের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও সেলে দুঃসহ অবস্থার কথা জানিয়েছেন।

গরমে বন্দিদের দুর্দশার কথা স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মুজিবুর রহমান।   তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গরমে সারাদেশের মানুষের অবস্থা কাহিল।   বন্দিদের অবস্থাও তেমনই।   কারাগারে ধারণক্ষমতার তিনগুণ বেশি বন্দি আছে।   সমস্যা আছে সেটা অস্বীকার করা যাবে না। আদালতে হাজির করা হয় বন্দিদের

সূত্রমতে, চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দির ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৭৫৩ জন।   মঙ্গলবার কারাগারে বন্দি ছিল ৫ হাজার ৯৫২ জন।  

কারাগারে ছয়টি বন্দি ভবন হলো- পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, সাঙ্গু, কর্ণফুলী ও হালদা।  প্রতিটি ভবনে ১২০টি ওয়ার্ড আছে।  এছাড়া ভয়ঙ্কর আসামিদের রাখতে ৩২ সেল, ১২ সেল ও ৬ সেল নামে তিনটি বন্দি সেল এবং একটি নারী ভবন আছে।

প্রতিটি ওয়ার্ডে বন্দির ধারণক্ষমতা ১২ জন।   সেখানে বর্তমানে ৩০ জনেরও বেশি রাখতে হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

আদালতে হাজিরা দিতে যাবার পথে মেঘনা ভবনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বন্দি আবুল কাশেম বাংলানিউজকে বলেন, গাদাগাদি করে আমাদের থাকতে হচ্ছে।   গরমের মধ্যে কেউ ঘুমাতে পারি না।   সারারাত পায়চারি করতে হয়।  

একই ওয়ার্ডের আরেক বন্দি আব্দুল আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের খাবার যেগুলো দেয় গরমের কারণে প্রায়ই সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়।   সেগুলো আমাদের খেতে হচ্ছে।   অনেকে ওয়ার্ডের ভেতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

জেলার মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বন্দিদের বাসি খাবার দেয়ার সুযোগ নেই।   এর বাইরে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে সেগুলো অস্বীকার করছি না।   বন্দিরা যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে সেজন্য আমরা সচেতন আছি। তীব্র গরমে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দিদের ‘নরক যন্ত্রণা’

চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের হাজতখানার পুলিশ পরিদর্শক মো.শাহ্ জাহান বাংলানিউজকে জানান, কারাগার থেকে আদালতের হাজতে আনার পর অনেক বন্দি অসুস্থ বোধ করেন।   গত রোববার হাজতের ভেতর চারজন বন্দি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়।   সোমবার প্রিজন ভ্যানের মধ্যে তিনজন অসুস্থ হয়ে পড়ে যায়।

‘কারাগার থেকে বয়স্ক যেসব বন্দি আনা হচ্ছে তাদের ফ্যানের নিচে রাখছি।   ঠান্ডা পানি খেতে দিচ্ছি।   যে গরম পড়ছে তাতে হিটস্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি।   এজন্য আমরা হাজতিদের ব্যাপারে সতর্ক আছি। ’ বলেন শাহ্ জাহান

এদিকে চট্টগ্রাম কারাগারে পানি সরবরাহেও মাঝে মাঝে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্দিদের কয়েকজন।  

পদ্মা ভবনের ৫ নম্বর বন্দি বিল্লাল হোসেন আদালতে বাংলানিউজকে বলেন, সবসময় গোসলের জন্য যে পানি দেওয়া হয় এখন তা-ও দেয়া হচ্ছে না।   অথচ গরমের মধ্যে বেশি পানি দরকার।   ভালভাবে গোসল করতে না পারায় চর্মরোগ হয়ে যাচ্ছে।

সূত্রমতে, কারাগারে আটটি পাম্পের মধ্যে তিনটি পাম্প মাঝে মাঝে নষ্ট হয়ে পড়ছে।   পানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত চাপের কারণে এই সমস্যা হচ্ছে।   এর ফলে গোসল ও খাবার পানি চাহিদামতো পাওয়া যাচ্ছে না বলে সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৭ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৭

আরডিজি/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।