১০মে বায়েজিদ বোস্তামী থানার কুঞ্জছায়া আবাসিক এলাকায় ১১ বখাটে মিলে রাতভর দুই পোশাক কর্মীকে ধর্ষণ করে। ওই বাসায় অবৈধ কার্যকলাপ চলছে এমন অভিযোগ তুলে তারা সেখানে প্রবেশ করে।
১৯মে রাতে বাকলিয়া থানার তুলাতলি জামাইবাজারে ২৫-৩০ জন কিশোর-তরুণ মিলে স্কুলছাত্র ও কিশোর ক্রিকেটার ইসমাইল গণি (১৪) নামে একজনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।
নগরজুড়ে বিভিন্ন অলিগলিতে, পাড়া-মহল্লায় এমন দাপট চলছে কিছু কিশোর-তরুণের যারা পুলিশের ভাষায় উঠতি বয়সের অপরাধী। পাড়ায়-পাড়ায় এসব অপরাধীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চলছে। দৃশ্য-অদৃশ্য চাপের কারণে তাদের ওপর কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণও নেই পুলিশের।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বাংলানিউজকে বলেন, সিএমপির সব থানার ওসিদের কিশোর অপরাধীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটা পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ।
গত জানুয়ারিতে রাজধানীর উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবির খুন হওয়ার পর সিএমপি ১৬ থানাকে কিশোর অপরাধীদের তালিকা করার নির্দেশ দেয়। তবে গত পাঁচ মাসেও এই ব্যাপারে কোন পূর্ণাঙ্গ তালিকা সিএমপি তৈরি করতে পারেনি বলে সূত্র জানিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোমিন রোড ঝাউতলায় সংঘর্ষে জড়িতরা নিজেদের কখনও ছাত্রলীগ, কখনও যুবলীগ বলে পরিচয় দেয়। তাদের সংঘর্ষ এবং পিস্তল উঁচিয়ে গুলি করার ফুটেজ সিসি ক্যামেরায় সংরক্ষিত আছে। বিভিন্ন মাধ্যমে এই ফুটেজ এসেছে বাংলানিউজের কাছেও। তবে গত প্রায় এক মাসেও কোতোয়ালি থানা পুলিশ এই ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেনি। এমনকি এই ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ কিংবা অস্ত্র উদ্ধারেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো.আব্দুর রউফ বলেন, ঘটনাটি আমরা শুনেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
জামাইবাজারে ইসমাইলের ওপর হামলাকারীরা মোবাইল ছিনতাই, ছিঁচকে চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত বলে জানান বাকলিয়া থানার ওসি প্রণব চৌধুরী।
বায়েজিদের কুঞ্জছায়া আবাসিক এলাকায় ধর্ষণের সঙ্গে জড়িতরাও নিজেদের ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মী বলে পরিচয় দেয়। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তাদের বিভিন্ন মিছিল, সভা-সমাবেশে নিয়ে যাওয়া হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিন বাংলানিউজকে বলেন, ১১ বখাটের সবাই বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা আছে। অশিক্ষিত এসব ছেলে রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকায় হিরোগিরি করে বেড়ায়।
সূত্রমতে, বাকলিয়া থানার প্রায় সব গলি-পাড়া, চান্দগাঁও, চকবাজার, বাদুরতলা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের আশপাশ, চট্টেশ্বরী রোড, শিল্পকলা একাডেমির সামনে, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজের গলি, হাজারীলেইন, রাজাপুর লেইন, কেসিদে রোড, নন্দনকানন, হালিশহর, পোর্ট কলোনি, এনায়েত বাজার, শুলকবহর, এমইএস কলেজ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আশপাশের এলাকাসহ প্রায় পুরো নগরজুড়েই এসব উঠতি বয়সের অপরাধীদের দাপট চলছে।
তাদের অপরাধের ধরন-রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে দোকান থেকে চাঁদাবাজি, রিকশা যাত্রী মহিলাদের ব্যাগ টান দেয়া, ইয়াবা সেবন-বিক্রি, বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের উত্যক্ত করা, ঝগড়া-মারামারি, অস্ত্রের মহড়াসহ আরও বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর পুলিশের উর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, কিশোর-তরুণদের প্রায় সব গ্রুপই রাজনৈতিক দলের নেতা, পাতিনেতার আশীর্বাদে চলে। মিছিল-মিটিংয়ে তাদের কদর বেশি। তদবিরে অতিষ্ঠ হয়ে থানার ওসিরাও তাদের দমনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৯ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৭
আরডিজি/আইএসএ/টিসি