সেই ক্যাপ-ফিরে এসে কারও কারও হাতের গন্তব্যে পৌঁছালেও কারও কারওটা ছিটকে পড়লো আশপাশে। কুড়িয়ে আনা সেই ক্যাপ আবারও জায়গা পেল মাথায়।
এই শিক্ষার্থীরা এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) বিভিন্ন বিভাগ থেকে সদ্য স্নাতক শেষ করেছেন। সংখ্যায় ওরা ৮৫ জন।
সবার গায়ে গাউন, মাথায় ক্যাপ। সবখানেই উৎসবের আমেজ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শেষবারের মতো তাদের জীবনে এই উপলক্ষ এনে দিয়েছে পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠান।
এদের মধ্যে ৩৮ জন বাংলাদেশের। বাকিকের কেউ এসেছেন ভারত থেকে। কেউ কেউ এসেছেন নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিস্তান, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, মায়ানমার, চীন, কম্বোডিয়া, শ্রীলংকা ও ভুটান থেকে।
এর আগে সাউন্ড সিস্টেমে সমাবর্তনের সুর বেজে উঠতেই একে একে তারা সারিবদ্ধভাবে মিলনায়তনে প্রবেশ করতে থাকেন। এরপর শিক্ষক-শিক্ষার্থী, আমন্ত্রিত অতিথি ও অভিভাবকদের উষ্ণ অভ্যার্থনা পেতে পেতে তারা বসে পড়েন নির্দিষ্ট আসনে।
সমাবর্তন অনুষ্ঠান পর্ব শেষে কথা হয় সানজিদা আফরিনের সঙ্গে। বিদায়ী শিক্ষার্থীদের পক্ষে যিনি সুযোগ পেয়েছেন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার।
একদিকে এর মাধ্যমে আরও উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার হাতছানি, আবার অন্যদিকে বন্ধুদের ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট। আনন্দ-কান্না যেন মিশে আছে অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করা সানজিদা আফরিনের পুরোটা জুড়েই।
সেই আবেগ লুকিয়ে সানজিদা আফরিন বললেন, ‘স্নাতক শেষ হলো আমাদের। এখন আমি দেশের বাইরে থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চাই। ডিগ্রি শেষে ফিরে এসে দেশের সেবা করতে চাই। দুঃস্থ মানুষদের নিয়ে কাজ করতে চাই। ’
মেয়ের এই স্নাতক শেষের অনুষ্ঠানে সঙ্গী হয়েছেন বাবা হুমায়ুন কবির ও মা রেহেনা কবির।
হুমায়ুন কবির বললেন, ‘আমরা মধ্যবিত্ত। দেশের বাইরে হলে মেয়েকে পড়াতে পারতাম না। কিন্তু এখন দেশের মধ্যেই আমার মেয়ে বিদেশী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার মতো সুবিধা পেল। ’
মা রেহেনা কবিরও দারুণ উচ্ছ্বাসিত। তিনি বললেন, ‘আমাদের একমাত্র সন্তান ও। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণেই সে হংকংয়ে ইন্টার্ন করতে পারলো। এখন আশা করছি আরও ভালো কিছু করতে পারবে। ’
শুধু সানজিদা আফরিন নন, বাংলাদেশী প্রায় সবার মুখেই একই কথা। তাদের একজন ফাহমিদা নুর। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি, দর্শন ও অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেছেন।
ফাহমিদা নুর বলেন, ‘কিছু পারিবারিক কারণে আমার স্নাতক শেষ করতে সাত-আট বছর লেগেছে। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে এই সময় অপচয়টা তুচ্ছ ব্যাপার। আজ অনেক আনন্দের দিন। এখন লক্ষ্য উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া। আর শেষ ইচ্ছাটা হলো দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কিছু করা। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৭
টিএইচ/টিসি