ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কুতুবদিয়া রক্ষা করবে ‘ঝিনুকবাঁধ’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৯ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৭
কুতুবদিয়া রক্ষা করবে ‘ঝিনুকবাঁধ’ কুতুবদিয়া রক্ষা করবে ‘ঝিনুকবাঁধ’

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের উদ্যোগে কক্সবাজার জেলার উপকূলবর্তী দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো ‘কুতুবদিয়ার রক্ষা বাঁধ কস্তুরা (ঝিনুক)’ শীর্ষক সেমিনার।

বৃহস্পতিবার (১৮ মে) এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনার শেষে উপজেলার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ‘চল সাগরকে জানি’ শীর্ষক সমুদ্র বিষয়ক সচেতনতামূলক সমুদ্র সাক্ষরতা অভিযান বা ওশান অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয়।

‘চল সাগরকে জানি’ শীর্ষক প্রতিযোগিতায় বিজ্ঞান প্রদর্শনী ও ওশান অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক ।

‘কুতুবদিয়া রক্ষায় কস্তুরা বাঁধ’ শীর্ষক সেমিনারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের পরিচালক এম জাহেদুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।

এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক সাংসদ জহিরল ইসলাম, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক কামাল উদ্দিন চৌধুরী, ক্রেল প্রকল্পের চকরিয়া উপজেলা সমন্বয়কারী মো. আবদুল কাইয়ুম, উপজেলার নির্বাহী অফিসার সুজন চৌধুরী প্রমুখ।

এতে স্বাগত বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের অধ্যাপক ড. এম. শাহাদাত হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একই ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ও নেদারল্যান্ডের ওয়াজেনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মোহাম্মদ শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী।

গবেষক মোহাম্মদ শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী সমুদ্রের ভাঙন ঠেকাতে কস্তুরা শামুকের ব্যবহার এবং এর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষা ও সুষ্ঠু বাস্তুতন্ত্রের জন্য কস্তুরার উপযোগিতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার এলাকার উপকূলবর্তী কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, মহেশখালী, কলাতলী এবং হিমছড়ি অঞ্চল ব্যাপকভাবে ভাঙনের সম্মুখীন। প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনের ফলে এই জনপদের অসংখ্য মানুষ আজ গৃহহারা। তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মাছের খামার। বছরের পর বছর প্রচুর অর্থ ব্যয়ে গতানুগতিক প্রকৌশল ও প্রযুক্তি যেমন কনক্রিট ব্লক, বালির বস্তা/টিউব অথবা মাটির বাঁধ নির্মাণ করে  ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও তা ক্ষণস্থায়ী হওয়ায় এর সুফল উপকূলের মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছে না। উপকূলবাসীর প্রত্যাশিত দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের লক্ষ্যে বিকল্প অভিযোজন কৌশল উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে কস্তুরাকে কাজে লাগানো যায়। ’

সেমিনারে স্থানীয় সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, বঙ্গোপসাগরের মধ্যে অবস্থিত এই কুতুবদিয়া উপজেলার চারিদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত ৪০ কিলোমিটার বাঁধ থাকলেও রোয়ানুর আঘাতে ২৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গৃহহীন হয়েছে ৩০ হাজার মানুষ। অন্যদিকে বেড়িবাঁধ নির্মাণে কোটি কোটি অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। সাময়িকভাবে এসব বাঁধ কিছুদিনের জন্য উপকূলকে রক্ষা করলেও যুতসই ও পরিবেশ উপযোগী না হওয়ায় অচিরেই জলোচ্ছ্বাস ও অন্যান্য কারণে বাঁধ ভেঙে বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। তবে মূল সুরক্ষা প্রাচীরকে রক্ষা করে মূল ভূখণ্ডকে অক্ষত রাখতে কস্তুরা বা ঝিনুক নির্মিত প্রাকৃতিক প্রাচীর কার্যকরী হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, উপকূল রক্ষায় সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণে সাশ্রয়ী এবং টেকসই ব্যবস্থা হিসেবে কস্তুরা বাঁধ নির্মাণ নিঃসন্দেহে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। একই সাথে মানুষের খাদ্যাভাসে কস্তুরা যুক্ত হলে তা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদাও মেটাবে।

চবির ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহ্ নেওয়াজ চৌধুরী পিএইচডি গবেষণার লক্ষ্যে প্রাকৃতিক শক্তি নির্ভর ইকো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে সমুদ্র ভাঙন রোধে টেকসই ও প্রতিবেশবান্ধব জৈব প্রযুক্তি উদ্ভাবনে এই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৭

টিএইচ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।