ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সোয়া কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, কাস্টমস কর্মকর্তা আটক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৮ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৭
সোয়া কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ, কাস্টমস কর্মকর্তা আটক আটক রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল মমিন মজুমদার। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: অবৈধভাবে ১ কোটি ২৬ লাখ ৬৬১ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নগরীর আগ্রাবাদ থেকে আবদুল মমিন মজুমদার (৫৫) নামে কাস্টমসের এক রাজস্ব কর্মকর্তাকে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দ‍ুদক)।

শুক্রবার (১৯ মে) সকাল ১০টায় তাকে আটকের পর ডবলমুরিং থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের চিওড়া-নেতরা এলাকার আবদুল গণি মজুমদারের ছেলে মমিন মজুমদার ঢাকা উত্তর রাজস্ব সার্কেল-৪ এ (বাড়ি নম্বর ২ সড়ক নম্বর ২, আমতলা, মহাখালী, ঢাকা) কর্মরত।

দুদক চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোশাররফ হোসেন মৃধা জানান, মমিন ও তার স্ত্রী সেলিনা জামানের বিরুদ্ধে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ছাড়াও ৪০ লাখ ২৩ হাজার ৮৫৮ টাকার সম্পদ গোপনের অভিযোগ রয়েছে। তার স্ত্রীকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

মমিনের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে হলেও চট্টগ্রামের হালিশহরে তার একটি ছয়তলা ভবন রয়েছে। সেখান থেকে তাকে আটক করা হয় ।

দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক সাধন চন্দ্র সূত্রধরের দাখিল করা কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার এজাহারে বলা হয়েছে, সেলিনা জামানের দাখিল করা সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে দেখা যায় নিজ নামে ২০০৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর হালিশহর এল ব্লকে (লেন ৩, সড়ক ২, প্লট ১৩) তিন কাঠা জমি ও আংশিক দালানগৃহ ২০ লাখ টাকায় কেনেন। এরপর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ছয় তলা বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন নিয়ে সাড়ে ছয় তলা ভবন তৈরি করেন। যার নির্মাণ ব্যয় ৬৫ লাখ ৪২ হাজার ৯৮০ টাকা। তিনি নিজ নামে ৫৯/২ আরকে মিশন রোডে ৭৮০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট (পার্কিংসহ) কেনেন ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায়। ঘোষণা অনুযায়ী তার অর্জিত স্থাবর সম্পদের মূল্য ৮৯ লাখ ১২ হাজার ৯৮০ টাকা। আটক রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল মমিন মজুমদার

কিন্তু সম্পদ যাচাইকালে নিরপেক্ষ প্রকৌশল টিম দেখতে পায়, সেলিনা জামান ছয় তলা ভবনের অনুমোদন নিয়ে চিলেকোঠাসহ আটতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। ভবনটির সিভিল, স্যানিটারি, পয়োপ্রণালি ও পানি সরবরাহ এবং বৈদ্যুতিক কাজের মূল্য ১ কোটি ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৮৩৮ টাকা। অর্থাৎ গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক নিরূপিত নির্মাণব্যয় অপেক্ষা বাড়িটির নির্মাণব্যয় ৪৩ লাখ ২৩ হাজার ৮৫৮ টাকা কম দেখিয়ে আসামি সেলিনা জামান দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছেন যা দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

অনুসন্ধানকালে সেলিনা জামানের আয়কর নথি পর্যালোচনায় ২০০৪-০৫ করবর্ষ হতে ২০১১-১২ পর্যন্ত মোট তার আয় পাওয়া যায় ৭৪ লাখ ২৭ হাজার ১৯ টাকা। এর মধ্যে গৃহ সম্পত্তি, ডিপিএস ভাঙানো ( সোনালী ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংক হতে প্রাপ্ত), বাবার পেনশন ও মা’র জমি বিক্রি থেকে প্রাপ্ত ২২ লাখ ৬৪ হাজার ৯০০ টাকা বৈধ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় সেলিনা জামান ১ কোটি ২৯ লাখ ৩৬ হাজার ৮৩৮ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৫ কোটি ৬৩ লাখ ৪৯৭ টাকার অস্থাবর সম্পদ মিলে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৩৩৫ টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন এবং একই সময়ে তিনি ২৩ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয় করেছেন। সেলিনা জামানের নামে আয়কর নথি থাকলেও তিনি প্রকৃতপক্ষে কোনো বৈধ উপার্জন করেন না। তার স্বামী কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল মমিন মজুমদার তার অবৈধ উপার্জনের দ্বারা আসামি সেলিনা জামানকে অসাধু উপায়ে এই সম্পদ অর্জনে সহায়তা করেছেন মর্মে যুক্তিযুক্তভাবে অনুমিত হয়।

তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় একটি মামলা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৭

এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।