সাংগঠনিক দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে না পারায় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীমকে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ওঠার পর গত সোমবার রাতে চট্টগ্রামের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে বৈঠকে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেন।
বুধবার দলের সহ-দফতর সম্পাদক বেলাল আহমদ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েল ও উত্তর জেলার সদস্যসচিব কাজী আবদুল্লাহ আল হাসানকে গঠনতন্ত্রের ৫(গ) ধারা মোতাবেক দলের সব পর্যায়ের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তারা দু’জনই দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকতে পারবেন না। ’
এছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবুর রহমান শামীমকে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে সতর্কতার সঙ্গে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২মে নাসিমন ভবনের সামনে উত্তর জেলা বিএনপির কর্মীসভায় গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর সমর্থকরা মঞ্চ দখল করে রাখলে যুগ্ম মহাসচিব ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরীর সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। সভা পণ্ড হয়ে যায়।
পরদিন ৩মে পটিয়ার হল টুডেতে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কর্মী সমাবেশে দু’গ্রুপের রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষে সভা পণ্ড হয়ে যায়। এতে গাজী শাহজাহান জুয়েল অনুসারীদের হামলায় বিএনপি নেতা এনামুল হক এনামসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। সভাস্থলের মাঝপথ থেকে ফিরে আসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
দলীয় সূত্র জানায়, সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে দেশব্যাপী কর্মী সমাবেশের সিদ্ধান্ত নেন চেয়ারপারসন। কেন্দ্রীয় নেতাদের বিভিন্ন দলে ভাগ করে সমাবেশে পাঠান। চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্ব পান খন্দকার মোশারফ হোসেন। চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ জেলার কর্মী সমাবেশ পণ্ড হওয়ায় দায়ীদের শনাক্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন।
সোমবার (১৫মে) চট্টগ্রামের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন খালেদা। বৈঠকে উত্তর-দক্ষিণ জেলার কর্মীসভা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এসময় তিনি সংঘর্ষে দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলায় ঘটনায় দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান জুয়েলকে দায়ী করেন।
তিনি বলেন, দলের দুঃসময়ে দেশে থাকো না। এখন আসছো নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করতে। একইভাবে উত্তর জেলা বিএনপির সভা পণ্ড হওয়ার জন্য আবদুল্লাহ আল হাসানকে দায়ী করেন।
বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নেতা জানান, উত্তর-দক্ষিণে সভা পণ্ড হওয়ায় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মাহবুবুর রহমান শামীমকে ‘অযোগ্য’ আখ্যায়িত করেন চেয়ারপারসন। সভাস্থলে না যাওয়ায় তাকে তিরস্কারও করেছেন। উত্তর জেলার সভা পণ্ড হওয়ার জন্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দায়ী করে সতর্ক করা হয়েছে।
৪মে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় প্রসংশা করেছেন খালেদা জিয়া। এসময় সুষ্ঠুভাবে সভা সম্পন্ন করার ব্যাখ্যা দেন নগর বিএনপির সভাপতি ডা.শাহাদাত হোসেন।
তিনি বলেন, দলের স্বার্থে সভায় ব্যক্তির নামে স্লোগান, প্লেকার্ড, মিছিল নিষিদ্ধ করে কেবল চেয়ারপারসন, জিয়াউর রহমান, তারেক জিয়ার নামে স্লোগান দেওয়া নির্দেশ দিয়েছি। না মানলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব বলে জানিয়ে দিয়েছি। উত্তর-দক্ষিণে এক পক্ষ মঞ্চ দখল না করে সমন্বয় করলে সমস্যা হতো না। এখানে সভাপতি-সম্পাদকের সমন্বয় ছিল না। একইভাবে মাহবুবুর রহমান শামীম সকাল থেকেই সমাবেশস্থলে থাকলে সংঘর্ষ হতো না।
দলের চেয়ারপারসন আমাদের সাধুবাদ জানিয়েছেন। আগামীতেও সুন্দরভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৭
এমইউ/আইএসএ/টিসি