ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ফুলে আর গানে মিহির নন্দীকে বিদায় জানাল চট্টগ্রাম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৩ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৭
ফুলে আর গানে মিহির নন্দীকে বিদায় জানাল চট্টগ্রাম ফুলে আর গানে মিহির নন্দীকে বিদায় জানাল চট্টগ্রাম। ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: কিংবদন্তিতুল্য সংগীতজ্ঞ মিহির নন্দীর মরদেহে জাতীয় পতাকা, গার্ড অব অনার, রাষ্ট্রীয় সম্মাননা, ফুলেল শ্রদ্ধা আর রবির গানে বিদায় জানাল চট্টগ্রাম।

রোববার (০৭ মে) বেলা ১১টা ৩ মিনিটে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে আনা হয় ওস্তাদজির মরদেহ। এ সময় শিল্পী, নাট্যজন, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, পেশাজীবীসহ প্রিয় গুরুর নানা বয়সী শিষ্যদের চোখে জল ছলছল করতে দেখা যায়।

‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে' গানে শুরু হয় শ্রদ্ধাঞ্জলির আনুষ্ঠানিকতা। এ সময় জাতীয় পতাকায় মরদেহটি মুড়িয়ে দেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে গার্ড অব অনার ও রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানানো হয়। এরপর পরিবেশন করা হয় জাতীয় সংগীত। কান্নায় ভেঙে পড়েন ওস্তাদজির শিষ্যরা

এরপর প্রথমে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, জেলা প্রসাশন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চবি উপাচার্যের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। তারপর একে একে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী, আর্য্য সংগীত সমিতি, উদীচী, বাংলাদেশ বেতার, সংগীত তীর্থ, সংগীত পরিষদ, সদারঙ্গ উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিষদ, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, সম্মিলিত আবৃত্তি জোট, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, ইউনাইটেড থিয়েটার ফর সোশ্যাল অ্যাকশন (উৎস), রূপক তবলা ইনস্টিটিউট, সৃজামি সাংস্কৃতিক অঙ্গন, চবি সংগীত বিভাগ, নাট্যকলা বিভাগ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, ধ্রুব পরিষদ বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম গ্রুপ থিয়েটার ফোরাম, অন্তরা হাইওয়ান গিটার শিল্পী গোষ্ঠী, নজরুল সংগীত শিল্পী সংস্থা, অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গন, বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষদ, সুকণ্ঠ সংগীত বিদ্যাপীঠ, আনন্দধ্বনি, টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন চিটাগং, চট্টগ্রাম ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অবসর সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, স্বরিৎ, কত্থক নাট্য সম্প্রদায়, পোট্রেটের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। গার্ড অব অনার দেওয়া হয় কণ্ঠযোদ্ধা মিহির নন্দীকে

নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দারের সঞ্চালনায় ওস্তাদ মিহির নন্দীর জীবন ও কর্মের ওপর স্মৃতিচারণ করেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন, কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেন, গণসংগীত শিল্পী রবীন দে, ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলাম, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী শীলা মোমেন প্রমুখ।  

ড. সেন বলেন, ওস্তাদ মিহির নন্দী শুদ্ধ সংগীতের চর্চা, প্রচারের মাধ্যমে এ জনপদের মানুষকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করেছেন, ঋদ্ধ করেছেন, মহিমান্বিত করেছেন। তিনি অসংখ্য শিষ্যকে গান শিখিয়েছেন, অসংখ্য অনুষ্ঠান করেছেন। তিনি যে আদর্শ রেখে গেছেন তার প্রচার-প্রসারে নিবেদিত হতে হবে শিষ্যদের।

আবুল মোমেন বলেন, ওস্তাদ মিহির নন্দীর চলে যাওয়া চট্টগ্রামের সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্য বিপর্যয়ের, দুঃখের, বেদনার। ষাটের দশক থেকে তার সঙ্গে পরিচয়। আমরা যখন বন্যার্তদের জন্য ত্রাণের টাকা তুলতাম তিনি আমাদের সঙ্গে যেতেন, গান গেয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের হয়ে ক্যাম্পে ক্যাম্পে গান করেছেন। স্বাধীনতার পর বাঙালি চেতনায় সংস্কৃতিকে বহমান রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছেন। সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধ এমন মানুষের বিকল্প নেই, একটিই আশার কথা তার প্রচুর শিষ্য আছেন।  

শীলা মোমেন বলেন, সাত দিন আগে আইসিইউতে আমি ওস্তাদ মিহির নন্দীকে গান শুনিয়ে এসেছিলাম। দেখতে গিয়ে বললাম, মামা আমি এসেছি। আমাকে বললেন, গান ‍গাও। আমি গাইলাম। উনিও আমার সঙ্গে কণ্ঠ মেলালেন। শব্দগুলো নির্ভুল। আঙুল উঁচিয়ে তালও দিলেন। উনি সংগীতগুণী। তার ৭০ বছরে চলে যাওয়াটা অকাল প্রয়াণ।

পণ্ডিত স্বর্ণময় চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, ওস্তাদ মিহির নন্দী ছিলেন আমার গুরু ভাই। ওস্তাদ নীরদ বরণ বড়ুয়ার কাছে আমরা তালিম নিয়েছি। মিহিরদা শাস্ত্রীয় সংগীতের পাশাপাশি রবীন্দ্রসংগীতের প্রচার-প্রসারে অসামান্য অবদান রেখেছেন। এত বড় গুণীজন হয়েও অনাড়ম্বর, বিনয়ী জীবনযাপন করেছেন। তার না ফেরার দেশে ফেরায় আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।

বেলা পৌনে ১২টায় ওস্তাদজির মরদেহটি আবার ফ্রিজার গাড়িতে তোলা হয়। দুপুর ১২টায় বলুয়ার দীঘির পাড়ের অভয়মিত্র মহাশ্মশানের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় মরদেহটি।   

জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনে শহীদ মিনারে মিহির নন্দীর মরদেহ

ওস্তাদ মিহির নন্দী আর নেই

বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৭

এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।