ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ওস্তাদ মিহির নন্দী আর নেই

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৩ ঘণ্টা, মে ৬, ২০১৭
ওস্তাদ মিহির নন্দী আর নেই

চট্টগ্রাম: সুরের সাধক খ্যাতিমান সংগীতজ্ঞ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম কন্ঠযোদ্ধা ওস্তাদ মিহির নন্দী পরলোক গমন করেছেন।

দীর্ঘদিন দুরারোগ্য ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে শনিবার (০৬ মে) রাত ১২টায় তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিসিইউতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ। মৃত্যুকালে তার বসয় হয়েছিলো ৭২ বছর।

রোববার (০৭ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় শহীদ মিনার চত্বর তার মরদেহ সর্বস্তরের জনগণের সম্মান জানানোর জন্য রাখা হবে। সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেওয়ার পর দুপুরে অভয়মিত্র ঘাট তার শেষ কৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।

বেশ কিছু দিন ধরেই দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত দেশের শুদ্ধসূরের প্রতিথযশা সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ মিহির নন্দী।

প্রাণের মানুষ, শিল্পী ও সুর শ্রষ্ঠা পণ্ডিত মিহির নন্দী উপমহাদেশের বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী, বোদ্ধা ও প্রশিক্ষক। শুদ্ধসুরের এই সাধক ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম কণ্ঠ সৈনিক। একাত্তরে যুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলোতে কণ্ঠে তুলেছেন উদ্দীপনামূলক সুর। ঘুরেছেন ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোতে। বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষ ও মুক্তি সংগ্রামীদের করেছেন উজ্জীবিত।

দেশমাতৃকার প্রয়োজনে ওস্তাদ মিহির নন্দী জীবন বাজি রেখে অংশ নেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। কণ্ঠে সুরের অস্ত্রধারণ তথা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে তার ভূমিকার কথা দেশ ও জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করবে।

চট্টগ্রামের শিল্পাঙ্গণ তথা দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই রবীন্দ্র স‍ুরের সাধক প্রতিষ্ঠা করেন সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আনন্দধ্বনি। দেশের সংগীতাঙ্গণে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ শিল্পকলা পদকে ভূষিত করা হয় ওস্তাদ মিহির নন্দীকে। সংগীতের অঙ্গনে তার হাতে গড়া অসংখ্য মেধাবী, গুণি সুরের পূজারী শিক্ষার্থীরা শিল্পের অঙ্গনে ছড়াচ্ছেন আলোকদ্যুতি।

ওস্তাদ মিহির নন্দী তার বর্ণাঢ্য সংগীত সাধানায় চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেছেন নানাভাবে। দেশের প্রতিটি প্রান্তে রবীন্দ্র সংগীতে আলোর ধারায়, সুরের ধারায় উচ্ছসিত রেখেছেন।

ওস্তাদ মিহির নন্দী আনুষ্ঠানিকভাবে শিল্পী হন ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রাম বেতারের তালিকাভুক্ত হয়ে। উচ্চাঙ্গ সংগীত ও রবীন্দ্র সংগীতে শিক্ষকতা শুরু করেন ১৯৬৪ সালে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের খন্ডকালীন শিক্ষক ও বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিশেষ শ্রেণীর শিল্পী, সংগীত পরিচালক, সুরকার ও বিচারকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য।

রবীন্দ্র সংগীত মিহির নন্দীর ধ্যান জ্ঞান হলেও আধুনিক, নজরুল ও অতুল প্রসাদ ছাড়াও উচ্চাঙ্গ সংগীতে বিশেষ দক্ষতা ছিলো তার। তিনি আনন্দধ্বনীর অধ্যক্ষ, রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের সহ-সভাপতি ছিলেন।

১৯৪৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কেউচিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সুরস্রষ্টা ওস্তাদ মিহির নন্দী। পিতা ফনীন্দ্র লাল নন্দী। মাতা মল্লিকা রানী নন্দী। লেখাপড়ায় হাতেখড়ি বাজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলে পড়েছেন মাধ্যমিক। এরপর চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। চাকরি জীবনে তিনি বাংলাদেশ ক্যামিকেল ইন্ড্রাসট্রিজ করপোরেশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন।

সংগীতে হাতেখড়ি অবশ্য বাবার কাছেই। এরপর দীক্ষা নেন বরীন্দ্র শিক্ষাগুরু ওয়াহিদুল হক ও আচার্য শৈলদা রঞ্জন মজুমদারের কাছে। বেহালা শিখেছেন ওস্তাদ নিরোধ বরণ বড়ূয়া, পণ্ডিত অশোক দাশগুপ্তের কাছে। তার ধ্রুপদ শিক্ষাগুরু সংগীতাচার্য সৌমিত্র লাল দাষ গুপ্ত। তবলা, সেতার ও এসরাজে হাত পাকিয়েছেন ওস্তাদ আদিত্য নারায়ণ দাসের কাছ থেকে।

গত ৫২ বছরে জীবনে ওস্তাদ মিহির নন্দী বহু সংগীত বিষয়ক প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। যুক্ত রয়েছেন সাংস্কৃতিচর্চার অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। অনন্য এই সংগীত সম্রাট মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সংগীত বিষয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামে গণ-আন্দোলনমুখী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রথমসারির একজন সংগঠক। চট্টগ্রামে প্রথমবার পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয় তারই হাত ধরে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৭
এসবি/জিপি/টিসি

** জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ওস্তাদ মিহির নন্দী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।