ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জীবনকে ‘এগিয়ে দিতে’ পে ইট ফরওয়ার্ড

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭
জীবনকে ‘এগিয়ে দিতে’ পে ইট ফরওয়ার্ড বাংলাদেশে পে ইট ফরওয়ার্ডের যাত্রা হয় বাদল সৈয়দের হাত ধরে

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক ছাত্র পড়ালেখার খরচ চালাতে না পেরে গ্রামে ফিরে গিয়েছিল।  বিভাগের অধ্যাপক ড. মহিবুল আজিজ সেই বিষয়টি জানায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকভিত্তিক পেজ পে ইট ফরওয়ার্ড-কে।  সেই পেজের কল্যাণে অবস্থাসম্পন্ন এক ব্যক্তি ওই ছাত্রকে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরিয়ে এনেছিল।  লেখাপড়ার খরচ বহনসহ তার পুরো দায়িত্ব নিয়েছিল।  সম্প্রতি প্রকাশিত স্নাতক তৃতীয়বর্ষের ফলাফলে ছেলেটা প্রথম শ্রেনিতে তৃতীয় হয়েছে।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক সাবেক ছাত্রী। যিনি খুবই অসুস্থ।

যার দুটো বাচ্চা আছে, স্বামীও মারা গেছেন। তাকে সহযোগিতার জন্য পে ইট ফরওয়ার্ডে বলা হয়েছিল।
গ্রুপটির মাধ্যমে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তার জন্য ১১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার ব্যবস্থা করে দেন। সেই টাকায় তার বর্তমানে চিকিৎসা চলছে।

পে ইট ফরওয়ার্ডের এক বছরের ‘জীবনে’ এগুলো নিতান্ত ছোট্ট দুটি উদাহরণ মাত্র।

ইতিমধ্যে পেজটির কল্যাণে ৩০০ জন ছেলেমেয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছেন সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা। দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করিয়েছেন ১১ জন জন অসহায় রোগীকে।  আগামী মাসে দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত আরও এক রোগীকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।   সঙ্গে দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে অসহায় দুটি পরিবারের ও অবসারপ্রাপ্ত একজন স্কুল শিক্ষিকার। পে ইট ফরওয়ার্ড দিবসে বৃদ্ধাশ্রমে গ্রুপের সদস্যদের কয়েকজন

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, পে ইট ফরওয়ার্ড আসলে কি? বিস্তারিত জানার আগে একবার বলা যাক। আর্থিক কষ্টে কোনো শিক্ষার্থীর পড়ালেখা বন্ধ হয় হয় অবস্থা, কেউ আবার দূরারোগ্য রোগে মৃত্যু শয্যাশায়ী, চিকিৎসার টাকা নেই-এমন কিছু চোখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে যে নামগুলো সবার আগে আসবে তাদের মধ্যে প্রথমদিকেই থাকবেন সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ।   বাদল সৈয়দ নামেই যিনি সমধিক পরিচিত।  

সিলেটের কর কমিশনার-তার পেশাগত পরিচয়।   নেশা-লেখালেখি।  আলোচিত কয়েকটি উপন্যাস-গল্পের  বইয়ের গর্বিত লেখকও তিনি।  এই দুইটা পরিচয় ছাপিয়ে তার সবচেয়ে পড় পরিচয় হয়ে গেছে ‘সাহায্যের দূত। ’ বাংলাদেশে ‘পে ইট ফরওয়ার্ড’-বিষয়টিও তার মস্তিষ্কজাত।

পে ইট ফরওয়ার্ড-এই তিন শব্দকে সহজ বাংলা করলে দাঁড়ায়-‘এগিয়ে দিতে’।

পে ইট ফরওয়ার্ডের ভাবার্থ বোঝাতে গিয়ে বাদল সৈয়দ বলেন, ‘এর মাধ্যমে যে ব্যক্তি যার মাধ্যমে সাহায্যপ্রাপ্ত হবেন সেই ব্যক্তিকে সাহায্যের অর্থ ফিরিয়ে দিতে হবে না।  কোনো একদিন যদি তিনি প্রতিষ্ঠিত হন-তাহলে ঠিক একইভাবে তিনিও আরেকজনের পাশে দাঁড়াবেন। ’পে ইট ফরওয়ার্ড

বাংলাদেশে পে ইট ফরওয়ার্ডের যাত্রা ২০১৬ সালের জুনে বাদল সৈয়দের হাত ধরে।   অবশ্য তারও আগ থেকেই সাহায্যের বার্তা নিয়ে ফেসবুকে সক্রিয় বাদল সৈয়দ।  তিনি পে ব্যাক সোসাইটি নামে একটি ফেসবুকভিত্তিক পেজের মাধ্যমে সাহায্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতেন। কিন্তু যখন জানলেন পে ইট ফরওয়ার্ড নামে সারাবিশ্বে একটি আন্দোলন আছে তখনি তার সঙ্গে অর্ন্তভুক্ত হতে এই পেজের নাম রাখলেন পে ইট ফরওয়ার্ড।

বর্তমানে এই পেজের অন্তর্ভুক্ত ৭ হাজার ৬৫৩ জন সদস্য আছেন। প্রায় প্রতিদিনই এখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্যের আর্তি আসে।  বাদল সৈয়দসহ অন্যরা  তার সত্যতা নিশ্চিত করেন।   নিশ্চিত হওয়ার পর সামর্থ্যবানদের জানান।  তারা পাশে এসে দাঁড়ান। এভাবে পাল্টে যায় একজন অসহায় শিক্ষার্থীর জীবন, ফিরে আসে একজন দূরারোগ্য রোগীর মুখে হাসি।

বাদল সৈয়দ বলেন, পে ইট ফরওয়ার্ড নিজেরা অর্থ সাহায্য গ্রহণ করে না।  সাহায্যদাতা ও প্রার্থী উভয়ের মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। আমাদের আশেপাশে অনেক সামর্থ্যবান মানুষ আছেন। তাদের কাছে আমরা বিভিন্নজনের সমস্যা তুলে ধরি। তারা এগিয়ে আসেন।

বিভিন্ন দেশে পে ইট ফরওয়ার্ডের ১৫০টি শাখা রয়েছে।  এর মধ্যে বাংলাদেশের কার্যক্রমটাই অন্যতম সেরা বলে জানানো হয়েছে মূল শাখা থেকে।  শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) সারাবিশ্বে পালিত হয়েছে পে ইট ফরওয়ার্ড দিবস।  

এদিনের পর জানানো হবে কারা এই কাজের ক্ষেত্রে সবথেকে সেরা।  হয়তো বাংলাদেশের জন্য সারা দুনিয়ায় আরেকটি ক্ষেত্রে প্রথম হওয়ার সৌভাগ্য অপেক্ষা করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৭

টিএইচ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।