ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ওস্তাদ মিহির নন্দী

চট্টগ্রাম প্রতিদিন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৭
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ওস্তাদ মিহির নন্দী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ওস্তাদ মিহির নন্দী

চট্টগ্রাম: সূরের সাধক স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম কণ্ঠ সৈনিক ওস্তাদ মিহির নন্দী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। সঙ্গীতের এই অনন্য সাধকের সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে আশির্বাদ চেয়েছেন তার পরিবারের সদস্য স্বজন ও সুহৃদরা।

বেশ কিছু দিন ধরেই দূরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত দেশের শুদ্ধসূরের প্রতিথযশা সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ মিহির নন্দী। চিকিৎসক জানিয়েছেন তার অবস্থার উন্নতি হবার সুযোগ খুব কম।

প্রাণের মানুষ, শিল্পী ও সূর শ্রষ্ঠা পণ্ডিত মিহির নন্দী উপমহাদেশের বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী, বোদ্ধা ও প্রশিক্ষক। শুদ্ধসূরের এই সাধক ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম কণ্ঠ সৈনিক।

একাত্তরে যুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলোতে কণ্ঠে তুলেছেন উদ্দীপনামূলক সূর। ঘুরেছেন ভারতের শরনার্থী শিবিরগুলোতে। বাংলার স্বাধীনতাকামী মানুষ ও মুক্তি সংগ্রামীদের করেছেন উজ্জীবিত।  

দেশমাতৃকার প্রয়োজনে ওস্তাদ মিহির নন্দী জীবন বাজি রেখে অংশ নেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। কণ্ঠে সূরের অস্ত্রধারণ তথা সাংস্কৃতিক বিপ্লবে তাঁর ভূমিকার কথা  দেশ ও জাতি শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করবে।

চট্টগ্রামের শিল্পাঙ্গণ তথা দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই রবীন্দ্র সূরের সাধক প্রতিষ্ঠা করেন সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আনন্দধ্বনি। দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ শিল্পকলা পদকে ভূতি করা হয় ওস্তাদ মিহির নন্দীকে। সঙ্গীতের অঙ্গনে তাঁর হাতে গড়া অসংখ্য মেধাবী, গুণি সূরের পূজারি শিক্ষার্থীরা শিল্পের অঙ্গনে ছড়াচ্ছেন আলোকদ্যুতি।

ওস্তাদ মিহির নন্দী তার বর্ণাঢ্য সঙ্গীত সাধানায় চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেছেন নানাভাবে। দেশের প্রতিটি প্রান্তে রবীন্দ্র সঙ্গীতে আলোর ধারায়, সূরের ধারায় উচ্ছসিত রেখেছেন। বরেণ্য এই সঙ্গীতজ্ঞকে নিজেদের মাঝে সুস্থ্য ফিরে পেতে চান তার শিক্ষার্থী, অনুসারীরা।

ওস্তাদ মিহির নন্দী আনুষ্ঠানিকভাবে শিল্পী হন ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রাম বেতারের তালিকভুক্ত হয়ে। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত ও রবীন্দ্র সঙ্গীতে শিক্ষকতা শুরু করেন ১৯৬৪ সালে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের খন্ডকালীন শিক্ষক ও বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিশেষ শ্রেনীর শিল্পী, সঙ্গীত পরিচালক, সূরকার ও বিচারকমন্ডলীর অন্যতম সদস্য।

রবীন্দ্র সঙ্গীত মিহির নন্দীর ধ্যান জ্ঞান হলেও আধুনিক, নজরুল ও অতুল প্রসাদ ছাড়াও উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে বিশেষ দক্ষতা রয়েছে তাঁর। বর্তমানে তিনি আনন্দধ্বনীর অধ্যক্ষ, রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সহ-সভাপতি।

১৯৪৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কেউচিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন সূরশ্রষ্টা ওস্তাদ মিহির নন্দী। পিতা ফনীন্দ্র লাল নন্দী। মাতা মল্লিকা রানী নন্দী। লেখাপড়ায় হাতেখড়ি বাজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুলে পড়েছেন মাধ্যমিক। এরপর চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। চাকরি জীবনে তিনি বাংলাদেশ ক্যামিকেল ইন্ড্রাসট্রিজ করপোরেশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন।

সঙ্গীতে হাতেখড়ি অবশ্য বাবার কাছেই। এরপর দীক্ষা নেন বরীন্দ্র শিক্ষাগুরু ওয়াহিদুল হক ও আচার্য শৈলদা রঞ্জন মজুমদারের কাছে। বেহালা শিখেছেন ওস্তাদ নিরোধ বরণ বড়ূয়া, পণ্ডিত অশোক দাশগুপ্তের কাছে। তার ধ্র“পদ শিক্ষাগুরু সঙ্গীতাচার্য সৌমিত্র লাল দাষ গুপ্ত। তবলা, সেতার ও এসরাজে হাত পাকিয়েছেন ওস্তাদ আদিত্য নারায়ণ দাসের কাছ থেকে।

গত ৫২ বছরে জীবনে ওস্তাদ মিহির নন্দী বহু সঙ্গীত বিষয়ক প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। যুক্ত রয়েছেন সাংস্কৃতিচর্চার অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের সাথে। অনন্য এই সঙ্গীত সম্রাট মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সঙ্গীত বিষয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামে গণ-আন্দোলনমুখী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের প্রথমসারির একজন সংগঠক। চট্টগ্রামে প্রথমবার পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয় তারই হাত ধরে।

১৯৭৪ সালে গাঁটছড়া বাঁধেন সঙ্গীতপ্রেমী প্রিয় মানুষ নন্দিতা নন্দীর সাথে। এই দম্পতির এক ছেলে সুতনু নন্দী বাবুন ছিলেন প্রখ্যাত গীটারবাদক। সঙ্গীত সম্রাট বাবাকে ছেড়ে অকালেই না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। রয়েছে একমাত্র মেয়ে সুহা। তার রয়েছে দু’টি সন্তান বুবুন ও বুনন। পরিবারের এই ছোট্ট গন্ডি আর খুব কাছের প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে জীবন সায়াহ্নেও সরগরম মিহির-নন্দীতা দম্পতির সুখের নীড়।

চট্টগ্রামে রবীন্দ্র সঙ্গীতের এই মহিরূহের গানের সাথে ৫২বছর পূর্ণ করে জাতীয় পুরস্কার ‘শিল্পকলা’ পদকে ভূষিত হন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৭

টিএইচ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।