ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পরীক্ষায় বসার অধিকার চান প্রতিবন্ধী সুদীপ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
পরীক্ষায় বসার অধিকার চান প্রতিবন্ধী সুদীপ কেন আমি আবেদন করেও পরীক্ষা দিতে পারছি না? প্রশ্ন সুদীপ দাসের

চট্টগ্রাম: বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে এলএলবি (অনার্স) ও এলএলএম সম্পন্ন করেও বিজেএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সুদীপ দাশ।

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বাংলানিউজে মেইল পাঠিয়ে তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান। সুদীপের বাবা প্রদীপ চন্দ্র দাস।

মা মীরা দাস। বাবা বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত একজন রেলওয়ে কর্মকর্তা আর মা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
তিন ভাই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

তিনি বলেন, গত ১৫ এপ্রিল বিজেএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে অনলাইনে ফরম পূরণ করি। এরপর কাগজপত্র জমা দিয়ে শ্রুতিলেখকের অনুমতির জন্য আবেদন করি। ২৪ এপ্রিল বেলা ২টায় জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক রাশেদুল আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তিনি আমাকে সরাসরি ‘২০০৭ সালের নিয়োগসংক্রান্ত বিধির তৃতীয় তফসিল অনুযায়ী সকল ধরনের প্রতিবন্ধী মানুষ বিজেএস পরীক্ষা প্রদানে বিবেচ্য নয়। ’ এ বিধিটি প্রদর্শন করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিগত কয়েক বছর আগে সোহেল নামের একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষ আবেদন করেন (তার পায়ে সমস্যা ছিল)। তাকে জুডিসিয়ারি পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুদীপ দাস বলেন, আমি আইনের ছাত্র হয়ে আইন থেকে ডিগ্রি নিয়েও আইন বিষয়ক এই পরীক্ষায় কেন অংশ নিতে পারব না? আইন আমার পক্ষে বলে, আমাদের দেশের ২০১৩ এর প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন অনুযায়ী প্রতিবন্ধী মানুষের সব ধরনের সুরক্ষা অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।

এখন আমার প্রশ্ন হলো এ অধিকার কোথায়? আমার প্রতিবন্ধিতাই কি এর মূল কারণ? নাকি আমরা বৈষম্যমুক্ত হতে পারিনি? আমি আমার যোগ্য অধিকার চাই। আমার প্রতিবন্ধিতা এতদিন আমাকে কোন কিছুতে আটকে রাখতে পারেনি। সুতরাং আমি এখনো হেরে যাবো না। আমি আমার অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করে যাবো। আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক এবং আমাদের সংবিধানে রয়েছে রাষ্ট্রের সব নাগরিকের জন্য সমান অধিকার প্রযোজ্য। তাহলে কি আমি রাষ্ট্রের নাগরিক নই? নাকি আমি প্রতিবন্ধী মানুষ বলে আমাকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। কেন তাহলে প্রতিবন্ধী মানুষের সাথে এরূপ বৈষম্য, প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার ও সুরক্ষা কি তবে মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ? যদি তা নাই হবে তাহলে কেন আমি আবেদন করেও পরীক্ষা দিতে পারছি না?

যেখানে প্রতিবন্ধী মানুষ সব ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে, এমন কি বিসিএস পরীক্ষায় পর্যন্ত তারা অংশ নিতে পারে তাহলে বিজেএস পরীক্ষায় কেন তারা অংশ নিতে পারবে না?

তিনি বলেন, জন্মের পর থেকেই আমার একটি চোখ ছিল পুরোপুরি দৃষ্টিহীন, আরেকটি চোখ দিয়ে আমি পুরোপুরি দেখতে পেতাম না। ছোটবেলা থেকেই আমাকে খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হতো। ক্ষীণদৃষ্টি হওয়ায় আমাকে ১০০ পাওয়ারি বাল্ব দেওয়া টেবিল ল্যাম্প চোখের সামনে নিয়ে পড়ালেখা করতে হতো। বাল্বের প্রচণ্ড তাপে মাথা গরম হয়ে যেত। মাথায় খুব যন্ত্রণা করত। তবুও আমি থেমে থাকিনি। কেবল নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস আর মা-বাবার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই আজ আমি এতটুকু আসতে পেরেছি। আমার স্বপ্ন ছিল বিজেএস পরীক্ষা দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করা।  

সহকারী জজ নিয়োগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুক্রবার

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭

এআর/টিসি  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।