ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সাংবাদিকতা ছেড়ে পুলিশে যোগ দেন ডিআইজি মনির

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
সাংবাদিকতা ছেড়ে পুলিশে যোগ দেন ডিআইজি মনির পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মনির-উজ-জামান

চট্টগ্রাম: সত্তরের দশকের শেষদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অনার্সের ছাত্র ছিলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মনির-উজ-জামান। প্রগতিশীল বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকা মনির-উজ-জামান সেসময় শুরু করেছিলেন সাংবাদিকতা। ভেবেছিলেন সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ার গড়বেন। 

কিন্তু নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের নানা টানাপড়েন আর ঘাত-প্রতিঘাতে সাংবাদিকতায় থিতু হতে পারেননি মনির-উজ-জামান, যার আক্ষেপ তিনি বয়ে বেড়িয়েছেন আরও কয়েক বছর।

গত ৬ এপ্রিল চট্টগ্রামে যোগ দেওয়া ডিআইজি মনির-উজ-জামান বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে নিজেই তার জীবনের এই সত্যটি অকপটে তুলে ধরেছেন।

আলাপে উঠে আসে জীবনের নানা প্রসঙ্গ। কথা বলেন জঙ্গিবাদ নিয়েও।

মনির-উজ-জামানের বাড়ি গোপালগঞ্জের মকসুদপুরে। বাবা চাকরি করতেন জনস্বাস্থ্য বিভাগে। সেই সূত্রে পাকিস্তান আমলে গোপালগঞ্জ সদরেই স্থায়ী হন। চার ভাই, চার বোনের মধ্যে মনির দ্বিতীয়।

১৯৭১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন মনির-উজ-জামান। তখন তিনি নবম শ্রেণির ছাত্র। মে মাসে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন। সেপ্টেম্বরে ফিরে ঝাঁপিয়ে পড়েন রণাঙ্গনে।

মনির বলেন, ১৯৭৭ সালে আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম, তাদের তো দেশ নিয়ে নানা স্বপ্ন ছিল, আবেগ ছিল। সেই আবেগ থেকেই সাংবাদিকতা শুরু করি। আমরা যারা প্রগতিশীল বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, আমাদের কাছে সাংবাদিকতা মানে তখন দেশের জন্য কিছু করা। আদর্শিক একটা ব্যাপার ছিল।

‘আমরা কয়েকজন মিলে ‘ডাক’ নাম দিয়ে একটা সাপ্তাহিক বের করেছিলাম। আমি ছিলাম সম্পাদক। কয়েকজন মিলে কাজ করতাম। কিন্তু প্রধান দায়িত্বটা আমাকেই পালন করতে হত। মোটামুটি প্রত্যেক সপ্তাহে ডাক বের করতাম। আশির দশকে সাপ্তাহিক রোববার পত্রিকায় লিখতাম। এরপর বিচিত্রায় লিখতাম। গণমাধ্যম নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কিছু রিসার্চের কাজ করতাম। ’

‘এভাবে ছাত্রজীবনেই সাংবাদিক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলাম। সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে নেব ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে সেটা আর হয়নি। সমস্যা হলো আমি ছিলাম নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ’পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মনির-উজ-জামান

মনির জানান, বাবা-মা, চাচা, আট ভাইবোনসহ তাদের একান্নবর্তী পরিবার ছিল। প্রচুর জমিজমা ছিল। কিন্তু গোপালগঞ্জসহ বৃহত্তর ফরিদপুরে প্রতিবছর বন্যায় ফসল ভাসিয়ে নিত। এতে পরিবারে সবসময় টানাপড়েন লেগেই থাকত।  

‘তখন সাংবাদিকতা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের জন্য খুব ভাল পেশা ছিল না। আমাদের যেহেতু আর্থিক টানাপড়েন ছিল, অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতার একটা প্রত্যাশা তো ছিলই। নিম্ন-মধ্যবিত্ত জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে পড়ে একসময় আমাকে সাংবাদিকতায় ইতি টানতে হয়। ’

মনির জানান, সাংবাদিকতা ছেড়ে ১৯৮২ সালের দিকে তিনি সোনালী ব্যাংকে যোগ দেন। দুই বছর চাকরি করার পর শিক্ষা ক্যাডারে বিসিএস পাস করেন। এরপর দুই বছরের মতো একটি সরকারি কলেজে শিক্ষকতা করেন। ১৯৮৬ সালে অষ্টম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পুলিশ সার্ভিসে অর্ন্তভুক্ত হন। যোগ দেন ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর।

‘সোনালী ব্যাংকে আর কলেজে চাকরি করতে গিয়ে সাংবাদিকতার জন্য খারাপ লাগত। খুব মন খারাপ হত। পরে যখন পুলিশ সার্ভিসে যোগ দিই, তখন অবশ্য একটা অন্য ধরনের অনুভূতি হল। দেশকে ভালোবেসে যুদ্ধে গিয়েছিলাম, পুলিশ বিভাগ হচ্ছে দেশের সেবা করার অনেক বড় একটা ক্ষেত্র। একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে আমি গর্ববোধ করি। ’

‘আত্মগোপনে থেকে  জঙ্গিবাদে জামায়াত-শিবির’

দেশজুড়ে গোপন আস্তানা গড়ে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সবাই জামায়াত-শিবিরের সদস্য বলে মনে করেন ডিআইজি এস এম মনির-উজ-জামান। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রতিরোধের চেষ্টার মতো সরকারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতেই জামায়াত-শিবির এই কর্মকাণ্ড করছে বলে মনে করেন তিনি।

আলাপকালে ডিআইজি বলেন, ২০১৩-১৪ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করতে তাদের নাশকতা সবাই দেখেছে। কিন্তু পুলিশ এবং জনগণের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে তারা পরাজিত হয়েছে। এরপর তারা বিদেশি রাষ্ট্রদূত, ধর্মীয় ও সংখ্যালঘু ব্যক্তিত্বদের ওপর আঘাত করে আর্ন্তজাতিক চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করল। সেটাও আমরা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছি।  

‘এখন তাদের আর আগের মতো আঘাত হানার শক্তি নেই। এজন্য তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে আস্তানা গড়ে ঘাপটি মেরে আছে। গোপন আস্তানায় অস্ত্র-বিস্ফোরক মজুদ করছে যাতে আবারও শক্তি সঞ্চয় করে আঘাত হানতে পারে। আমরা খুঁজে খুঁজে তাদের আস্তানাগুলো বের করছি। এবারও তারা পরাজিত হবে। ’

ডিআইজি বলেন, জামায়াত-শিবিরের মতো জঙ্গিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে আমরা অভিযান অব্যাহত রাখব। পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনগণকে সোচ্চার করব। গণমাধ্যম দিয়ে জনগণকে সচেতন করব। জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধও চলবে।

‍বাংলাদেশ সময়: ১০০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭

আরডিজি/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad