ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘খাল ছাফর নামে মশকারি’

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
‘খাল ছাফর নামে মশকারি’ চাক্তাই খালের শাখা বির্জা খাল থেকে হাস্যকর ভাবে বালতি দিয়ে ময়লা তোলা হচ্ছে। ছবি: উজ্জ্বল ধর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ‘বালতি কাডি অর (কাদা) হতাগ্গিন তুলি পাড়ত রাখের। ঝর এক লাছা আইলে আবার যেডর মাল এডে পড়িবু। এগিন খাল ছাফর নামে মশকারি। টেঁয়ার শ্রাদ্ধ গরন।’

(বালতি কেটে কাদা কিছু তুলে পাড়ে রাখছ। একপশলা বৃষ্টি হলেই যেখান থেকে তোলা হয়েছে সেখানে নেমে যাবে।

এগুলো খাল পরিষ্কারের নামে মশকরা। টাকা খাওয়ার ফন্দি।
)

সোমবার (২৪ এপ্রিল) সকালে চাক্তাই খালসংলগ্ন বির্জা খালে (ম্যাচ ফ্যাক্টরি এলাকা) বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রমে দেশে এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেন।

সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে দুই গ্রুপে ১৯ জন নারী-পুরুষ শ্রমিকের কাজ তদারকি করছিলেন নওয়াব মিয়া। নিজেকে মাঝি পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত খালের মাটি অপসারণের কাজ চলবে। আজ ২০জন শ্রমিক কাজ করছেন।

খালে ২০জন দেখা যাচ্ছে না এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নওয়াব মাঝি  দুই দফা গুণে নিলেন। পেলেন ১৯ জন। তারপর বললেন, ‘আমিসহ ২০ জন!’

ময়লা তুলে আবার খালপাড়ে রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পানি সরে গেলে ময়লাগুলো সিটি করপোরেশনের গাড়ি এসে নিয়ে যাবে।
চাক্তাই খালের শাখা বির্জা খাল থেকে হাস্যকর ভাবে বালতি দিয়ে ময়লা তোলা হচ্ছে।   ছবি: উজ্জ্বল ধর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
দেয়াল ঘেঁষে রাখা ময়লা ট্রাকে তোলার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি চুপ করে থাকেন।  

নূরজাহান বেগমও (৩৫) পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বালতি এগিয়ে দিচ্ছেন অন্যকে। বললেন, পুরুষদের বেতন বেশি। আমরা পাই ৩৫০ টাকা। তারা পায় ৪০০ টাকা। তারপরও খুশি, কাজ করে খাই। আমার স্বামীও একই সঙ্গে খাল কাটার কাজ করছেন। ঘরে দুই ছেলে, দুই মেয়ে আছে।

শুধু বির্জা খাল নয়, আবুল হোসেনের বক্তব্য অনুযায়ী একই ‘মশকারি’ চলছে বদর খালেও। টেরিবাজারের আগে কাজ দেখভাল করছেন আব্বাস কন্ট্রাক্টরের কর্মকর্তা সৌরভ। তিনি বলেন, এখানে ২৫ জন নারী শ্রমিক কাজ করছেন। তবে বিস্তারিত আমি কিছু জানি না।

মিয়াখান সওদাগর পুল এলাকায় কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা অজিত দত্তের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, খাল খনন বলেন আর বর্জ্য পরিষ্কার বলেন সত্যিকার অর্থে কাজের কাজ করতে হলে আন্তরিকতা দরকার। পাকা খালের তলা এক যুগে একবারও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। দখলদারদের উচ্ছেদ করা হলো না। পূর্ব পাড়ের মতো পশ্চিম পাড়েও রাস্তা করার জন্য ভবন ভাঙা হয়েছিল। কই রাস্তা তো কেউ করলেন না।
চাক্তাই খালের শাখা বির্জা খাল থেকে হাস্যকর ভাবে বালতি দিয়ে ময়লা তোলা হচ্ছে।   ছবি: উজ্জ্বল ধর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাকলিয়া শহীদ এনএমজে কলেজের একজন ছাত্র বলেন, খালের অবস্থা বেহাল এটা বলার জন্য বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। ভাটার সময় ব্রিজে দাঁড়ালে যে কেউ দেখবে লক্ষ লক্ষ টন বর্জ্য চাক্তাই খালে জমে আছে।

মিয়াখান সওদাগর পুল এলাকায় হন্তদন্ত হয়ে রিকশায় উঠছিলেন মোহাম্মদ ইসহাক। শুধু একটি বাক্যই বললেন, ‘বর্ষাকালে অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোয়ারে পুরো এলাকা পানিতে ডুবে থাকে। ’

ওই এলাকাতে চকরিয়ার মাওলানা সাহেদ দোকান করছেন অনেক দিন। বললেন, চাক্তাই খালকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কঠোর নজরদারির মাধ্যমে খালের বর্জ্য অপসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। নয়তো উদ্বেগ আতঙ্ক কাটবে না এলাকাবাসীর। স্বস্তি মিলবে না চট্টগ্রামবাসীর।

জোয়ার আইলে ধড়ফড়াই ঘুমুত্তুন উডি যাই

বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪৩ ঘন্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।