ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

১৮ ফুটের চাক্তাই খাল মিয়াখান নগরে এসে ৫ ফুট

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
১৮ ফুটের চাক্তাই খাল মিয়াখান নগরে এসে ৫ ফুট চাক্তাই খাল। ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: চাক্তাই খালের উপর মাস্টারপুলের নিচে তিনটি পাইপের জন্য আটকে থাকে ময়লা।  কিন্তু মাস্টারপুল থেকে আনুমানিক তিন কিলোমিটার দক্ষিণে মিয়াখান সওদাগরের ব্রিজের নিচে কোন পাইপ নেই।  এরপরও সেখানে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনার কমতি নেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরে একবার শুধুমাত্র বর্ষার আগে কয়েকদিন ‘লোক দেখানো’ বর্জ্য পরিস্কার করে সিটি করপোরেশন।   সারা বছরে আর খাল থেকে বর্জ্য অপসারণের কোন উদ্যোগ নেয়না সংস্থাটি।

  এর ফলে আবর্জনা জমতে জমতে ১৮ ফুট গভীরতার চাক্তাই খাল মিয়াখান নগরে এসে হয়ে গেছে মাত্র ৬ থেকে ৭ ফুট।   কোথাও কোথাও ৪ থেকে ৫ ফুট।

অবশ্য মাস্টারপুলের উত্তর-দক্ষিণেও চাক্তাই খালের গভীরতা মিয়াখান নগরের চেয়ে খুব বেশি নেই।

মিয়াখান নগরের পাকা সেতুটি তৈরি হয়েছে চার বছর আগে।   এর সঙ্গে মিয়াখান সড়কটিও কমপক্ষে পাঁচ মিটার উঁচু করা হয়েছে।   উঁচু সড়কের কারণে মিয়াখান সড়কে সেভাবে পানি না জমলেও অল্প বৃষ্টিতে এবং জোয়ারে প্লাবিত হয়ে পড়ে আশপাশের হাজী মনছুর আলী লেইনসহ পূর্ব বাকলিয়ার বিস্তির্ণ এলাকা।
চাক্তাই খাল।  ছবি: উজ্জ্বল ধর
মিয়াখান সওদাগরে ব্রিজের পাশে ৪৫ বছর ধরে ভাসমান ছোট একটি দোকান নিয়ে আছেন মুচি সত্যরঞ্জন দাশ (৬০)।   তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নিয়মিত যদি আবর্জনা পরিস্কার করা হত, তাহলে খাল দিয়ে পানি ঠিকভাবে যেত।  

মিয়াখান নগরের ওই এলাকায় বেশকিছু ঝুট কাপড়ের গুদাম আছে।   সেতুর নিচে দেখা গেছে ফেলে দেওয়া ঝুট কাপড়ের বস্তা, ছোট-বড় কাপড়, মশারি, গৃহস্থালি বর্জ্য, পলিথিন, চটের ব্যাগ।   আবর্জনা জমতে জমতে কোথাও কোথাও উঁচু মাটির স্তর সৃষ্টি হয়েছে।   এর উপরে জন্ম নিয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাক।

মিয়াখান নগরের সেতুর পূর্বদিকে দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডের কোরবানিগঞ্জে চাক্তাই খালের উপর আছে বালির টাল।   সেখান থেকে বালি পড়তে পড়তে সেতুর নিচের একাংশে বালি আর মাটির উঁচু আস্তরণ তৈরি হয়েছে।  

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর জামাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পাড়ের গাইড ওয়াল থেকে পাকা তলা পর্যন্ত চাক্তাই খালের গভীরতা ১৮ ফুট।   এখন পাড়ে দাঁড়ালে গভীরতা ৬ ফুটের বেশি হবে না।   বাকিটা পুরোটাই আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে।   ২০০৮ সালেও মিয়াখান সওদাগরের ব্রিজের নিচ দিয়ে নৌকা চলত।   এখন নৌকা দূরের কথা, মানুষ হেঁটে পার হয়ে যেতে পারবে।

তিনি জানান, ওয়ান ইলেভেনের সময় চাক্তাই খালের দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।   ভেঙ্গে ফেলা পাকা দেয়াল, ইট, জমাট বাঁধা সিমেন্টের বড় বড় টুকরা, পাথর পড়ে আছে এখনও খালের ভেতরে।   খালের দুই পাড়ের ‍আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য সরাসরি পড়ছে খালের মধ্যে।   নিয়মিত আবর্জনা অপসারণ হয় না।   চাক্তাই খালের অস্তিত্ব যে আছে, সেটাই বেশি।

প্রাথমিকভাবে সমাধানের পথও বাতলে দেন জামাল হোসেন।   তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চাক্তাই খালের দুই পাড়ের বাসিন্দাদের সেটা আবাসিক হোক কিংবা বাণিজ্যিক হোক, সব বর্জ্য ডোর টু ডোর অপসারণ করতে হবে।   নিয়মিত খালের বর্জ্য তুলে ফেলতে হবে।   এতে হয়ত আপাতত কিছুটা সমাধান মিলবে।
চাক্তাই খাল।  ছবি: উজ্জ্বল ধর
ভ্যানগাড়ি চালক জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, জোয়ার হলে মিয়াখান সওদাগরের ব্রিজের নিচে সেভাবে পানি উঠেনা।   তবে মিয়াখান নগর থেকে কালামিয়া বাজার পর্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন কলোনি এবং দোকানে পানি ঢুকে যায়।  

স্থানীয়রা জানালেন, চাক্তাই খালের সঙ্গে বিভিন্ন নালা-নর্দমার সংযোগমুখগুলো আবর্জনার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।   এতে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।   এছাড়া বদরখাল, বির্জাখালসহ চাক্তাই খালের সঙ্গে সংযুক্ত আশপাশের ৪-৫টি খালও দখলে ক্রমেই সংকুচিত হয়ে প্রায় নালায় পরিণত হয়েছে।   বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি টানতে পারে না সেই খালগুলোও।  

বাংলাদেশ সময়: ১১২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।