ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘আগে সাম্পান যাইতো চকবাজার, এহন চাক্তাইর মুখ’

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
‘আগে সাম্পান যাইতো চকবাজার, এহন চাক্তাইর মুখ’ চাক্তাই থেকে চকবাজার। ছবি: সোহেল সরওয়ার- বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: খাতুনগঞ্জের ইসহাকের পুল এলাকায় পিকআপ থেকে মালামাল নামাচ্ছিলেন বছর পঞ্চাশের দিদারুল আলম। অন্যদের সঙ্গে পেয়াজ-রসুনের বস্তা একে একে পৌঁছে দিচ্ছেলেন অদূরের আড়তে। তার ফাঁকে পাঁচ মিনিট সময় বের করলেন।

কতদিন ধরে এই পেশায়-প্রশ্নটা মুখ থেকে ফেলতেই যেনো কথার সিন্দুক বের করে আনলেন দিদারুল।

আফসোসের বললেন, ‘এক সময় সাম্পান চালাইতাম।

কর্ণফুলী হয়ে মালামাল পৌঁছে দিতাম চাক্তাই থেকে চকবাজার। এখন সেটা কেবল সুখস্মৃতি।
নদী ভরাটে সেটা এখন স্বপ্নই। তাই অর্ধযুগ আগ থেকে পিকআপের শ্রমিক সেজেছি। কি আর করা। এটাই নিয়তি। ’

আফসোস শেষ হয় না দিদারুলের।

‘১০ বছর আগেও চাক্তাই খালটা কেমন পরিস্কার ছিল। এখন ভরাটের কারনে নদী তার নাব্যতা হারিয়েছে। আবর্জনা ফেলার কারণে দুই পাড়ে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে ছোট হয়ে গেছে খালও। যার কারণে নৌকা তো দূরে থাক সাম্পান চলাও দূর্লভ ব্যাপার। ’
চাক্তাই থেকে চকবাজার।  ছবি: সোহেল সরওয়ার- বাংলানিউজ
এর আগে চকবাজারের ধনিরপুল থেকে খালপাড়-মিয়াখনগর হয়ে চাক্তাই খালের মোহনা পর্যন্ত এসে দিদারুলের কথার প্রমাণ পাওয়া যায়।

ধনিরপুল এলাকায় আবর্জনা পড়তে পড়তে খালের মাঝখানে পানি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে খালপাড়-রসুলবাগ আবাসিক এলাকার পুরোটাজুড়ে খালের উপর বসানো ছোট্ট ছোট্ট ব্রিজগুলো যেন এক একটা প্রতিবন্ধকতা।

অপরিকল্পিতভাবে দু পাশের সড়কগুলো উঁচু করায়, ব্রিজগুলো পড়ে গেছে সড়কের কয়েকহাত নিচে। ফলে ব্রিজগুলোর নিচে আটকে আছে ময়লা-আবর্জনা। যার ফলে পানি স্বাভাবিকভাবে চলতে না পেরে বৃষ্টির সময় পুরো এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া চাক্তাই খালে মিলিত হওয়া মেস ফ্যাক্টরি খালটির প্রায় একই হাল। ভরাট হতে হতে খালটির নিম্মস্থল পাশের ঘরবাড়ির সঙ্গে প্রায় মিলে গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চাক্তাই খালের পাশে পাড় দখল করে গড়ে উঠা ছোট ছোট দোকানপাট। দোকানের কারনে খাল কিছুটা ভরাট হওয়ায় নিচে জমা হয়েছে ময়লা-আবর্জনা।
চাক্তাই থেকে চকবাজার।  ছবি: সোহেল সরওয়ার- বাংলানিউজ
চাক্তাই খালের পাড় হয়ে খাতুনগঞ্জে ঢুঁকে পড়া ছোট্ট সড়কটিতে দেখা গেল পিক-আপের মিছিল। বিভিন্ন মালামাল উঠানামার কাজে জড়িত এসব পিকআপ। অথচ ৭-৮ বছর আগে পিকআপের চাহিদা মেটাতো নৌকা-সাম্পান। এখন নৌকা-সাম্পান খাতুনগঞ্জ পর্যন্ত ভিড়তে পারে না। তাই পিকআপই ভরসা।

চাক্তাই খালের মোহনায় কথা হয় বেশ কয়েকজন নৌকা ও সাম্পানের মাঝির সঙ্গে।

তাদেরই একজন শফি মাঝি। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এই  তো কয়েকবছর আগেও খাতুনগঞ্জের ইসহাকের পুল এলাকা পর্যন্ত জিনিসপত্র নিয়ে সবসময় নৌকা-সাম্পান ভেড়ানো যেত। এখন জোয়ারের সময়ও যাওয়া যায় না। তাই মোহনা পর্যন্ত আমাদের দৌড়। তাই এখান থেকে জিনিস নামাই, এখানেই জিনিস তুলি। আর পিকআপ এখান থেকে জিনিস নিয়ে যায়। আবার খাতুনগঞ্জ থেকে পিকআপে করে জিনিস এই পর্যন্ত আনতে হয়। তারপর নৌকা-সাম্পানে তোলে আনোয়ারা, রাউজান, বোয়ালখালীতে পৌঁছিয়ে দিই। ’

তাই আবর্জনা দখলে চাক্তাই খাল ভরাট হওয়ায় শুধু জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে না, নৌকা-সাম্পান চলতে না পারার মতো আক্ষেপগুলোও এখানে ঝরে নিয়মিত।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৭
টিএইচ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।