ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘মাটির মানুষ তো, মাটির জিনিসই বেশি টানে’

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৭
‘মাটির মানুষ তো, মাটির জিনিসই বেশি টানে’ জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে লালদীঘি মাঠকে ঘিরে এক কিলোমিটার এলাকায় বসেছে বৈশাখী মেলা। ছবি: উজ্জ্বল ধর, বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: এক বিঘত থেকে কয়েক হাত পর্যন্ত লম্বা-একেকটা মাটির ফুলদানি ও টব। হালকা আর গাঢ় রঙে পোড়ানো ‘তাদের’ শরীর। কোনটার গায়ে লেগেছ খোদাই আর রিলিফের কাজ। আবার কোনটার ওপর জরির অসমান্য ছোঁয়া।

তা দেখিয়ে বিক্রেতার বক্তব্য, ‘কেউ চাইলে ফুলদানিতে কৃত্রিম ফুলও রাখতে পারেন। আবার পানি দিয়ে তাজা ফুলও।

ইচ্ছে হলে টবেও ফুল রাখতে পারেন, না রাখলেও সমান সৌন্দর্য। শোবার ঘর থেকে বসার ঘর—যেকোনো স্থানেই শোভা পেতে পারে ‘তারা’।

উপরের মাটির ফুলদানি-টবের চিত্রটি লালদীঘি মাঠের প্রবেমুখের সামনে অবস্থিত ফিলিং স্টেশনের ভেতরের খোলা স্থানের।

কাগজে কলমে ঐতিহাসিক জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হবার কথা সোমবার (২৪ এপ্রিল) থেকে। তবে তার আগেই বেজে গেজে মেলার ঢাকঢোল। রোববার (২৩ এপ্রিল) লালদীঘিকে ঘিরে দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেখা গেছে উপরের চিত্র। জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে লালদীঘি মাঠকে ঘিরে এক কিলোমিটার এলাকায় বসেছে বৈশাখী মেলা।  ছবি: উজ্জ্বল ধর, বাংলানিউজ

শুধু মাটির তৈরি ফুলদানি-টব নয়, মাটির তৈরি জিনিসের তালিকায় আছে  টেরাকোটা, শোপিস, মাটির ব্যাংক, অ্যাশট্রে, বড় চাড়ি ছোট বাটি, ঘণ্টি
আয়না, মাটির থালা-বাসন আরও কত কি। সবমিলিয়ে ১০০ এর উপর পদ। আর সেসব কিনতে মেলাপ্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেছেন ক্রেতারা। আধুনিকতার এই যুগে মাটির জিনিস যে এখনও যে সমান জনপ্রিয়।

মাটির ফুলদানি ও টব কিনতে এসেছেন, হালিমা বেগম নামের একজন গৃহবধু।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সারাবছর এই মেলাটির জন্য অপেক্ষা করি। মেলা পুরোদমে শুরু হয়ে গেলে মানুষের জটের কারণে দুর্ভোগ হতে পারে এমন আশঙ্কায় আগেভাগে চলে আসলাম। এসেছি ফুলদানি-টব কিনতে। ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে ফুলদানি-টব কে না পছন্দ করে। আর আমার কাছে মাটির ফুলদানি-টব তো ধ্রুপদি সৌন্দর্য। ’জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে লালদীঘি মাঠকে ঘিরে এক কিলোমিটার এলাকায় বসেছে বৈশাখী মেলা।  ছবি: উজ্জ্বল ধর, বাংলানিউজ

হাসতে হাসতে বললেন, ‘মাটির মানুষ তো, মাটির জিনিসই বেশি টানে। ’

পোড়ামাটির জিনিসপত্র নিয়ে মেলায় আসা বেশিরভাগ বিক্রেতাই বৃহত্তর কুমিল্লার। তাদের পাশাপাশি আছেন ‘উত্তারাধীকার সূত্রে’ প্রায় প্রতিবছরই এই মেলায় আসায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসায়ীরা।

তাদেরই একজন ষাটোর্ধ্ব আলী আশরাফ। গভীর মমতায় একটা ফুলের টবে রিলিফের কাজ করছিলেন এই প্রবীণ।

তার ফাঁকে বললেন, ‘আমরা ১০০ পদের পোড়ামাটির ‘পাহাড়’ নিয়ে এসেছি। বিক্রি রোববার থেকে শুরু হয়ে গেছে। মেলার মূল তিন দিন যদি বৃষ্টি না ভোগায় তাহলে আশা করছি সব বিক্রি করেই ঘরে ফিরতে পারবো। ’জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে লালদীঘি মাঠকে ঘিরে এক কিলোমিটার এলাকায় বসেছে বৈশাখী মেলা।  ছবি: উজ্জ্বল ধর, বাংলানিউজ

মিন্টু নামের আরেকজন বিক্রেতা জানালেন তার দোকানেও একশর উপর পোড়ামাটির তৈরি পদ আছে।

তিনি বলেন, ‘৫০ থেকে ১৫০০ দামের জিনিস আছে আমার দোকানে। মেলা উপলক্ষে সারাবছর আমরা কুমিল্লায় এসব মাটির জিনিস তৈরি করি। প্রায় দশবছর ধরে মেলায় পোড়ামাটির জিনিস নিয়ে আসতেছি। বৈশাখ মাসের শুরুতেই আমরা চট্টগ্রাম শহরে চলে আসি। তারপর অপেক্ষা করি মেলার শুরুর জন্য। এবারই একইরকমভাবে চলে আসলাম আগেভাগে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৭

টিএইচ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।