ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হালদায় ডিম ছেড়েছে মা-মাছ

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
হালদায় ডিম ছেড়েছে মা-মাছ ঐতিহ্যবাহী হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ার পর তা সংগ্রহ করা হচ্ছে। ছবি : উজ্জ্বল ধর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: এক বছর বিরতি দিয়ে অবশেষে আবারও ঐতিহ্যবাহী হালদা নদীতে ডিম ছেড়েছে কার্প জাতীয় মাছ। শুক্রবার (২১ এপ্রিল) বিকেল পাঁচটার দিকে ‘নমুনা ডিম’ ছাড়ার পর মধ্যরাতে বহুল প্রত্যাশিত ডিমের দেখা পান সংগ্রহকারীরা। শনিবার (২২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশ মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের উৎসবে মেতে ওঠেন অভিজ্ঞ সংগ্রহকারীরা।

হালদা বিশেষজ্ঞ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনজুরুল কিবরীয়া বাংলানিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ডিম ছাড়ার খবর পেয়ে ভোররাতেই হালদায় ছুটে যান জানিয়ে তিনি বলেন, রাতে নাপিতের ঘোনা এলাকায় প্রথমে মা-মাছের ডিম দেখতে পান বিশেষ ধরনের জাল, বালতি, নৌকা, সার্চ লাইট নিয়ে অপেক্ষমাণ ডিম সংগ্রহকারীরা।

এরপর ক্রমে খলিফার ঘোনা, রামদাশ মুন্সির হাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেন তারা। একেকটি নৌকা গড়ে এক বালতি (১৬ কেজি) করে ডিম আহরণ করতে পেরেছে।
 

কার্প জাতীয় মাছের নিষিক্ত পোনা সংগ্রহ করছেন অভিজ্ঞ ডিম সংগ্রহকারীরা।  ছবি: উজ্জ্বল ধর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ড. মনজুরুল কিবরীয়া জানান, ডিম সংগ্রহকারীরা বংশ পরম্পরায় শিখে আসা কৌশলে মাটির গর্তে পানি দিয়ে ডিমগুলো থেকে রেণু তৈরি করবে চার দিনে। এরপর সেই রেণু ছোট ছোট পুকুরে ছেড়ে দিয়ে পোনা তৈরি হবে। ওই সময় বোঝা যাবে কোনটি কোন মাছের পোনা। হালদার পোনা দ্রুত বড় হওয়ায় সারা দেশের মৎস্যচাষিদের কাছে বিশেষ কদর আছে। দামও হ্যাচারির কৃত্রিম পোনার চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি।  

এ হালদা গবেষক উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, গতবার দুই শতাধিক নৌকা মাছের ডিম সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করেছিল দিনের পর দিন। ডিম না পেয়ে অনেকে হতাশ হয়ে পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। অনেকে লোকসানের মুখে পড়েছেন। সেবার নমুনা ডিম ছাড়লেও দখল-দূষণে বিপর্যস্ত হালদাকে মা-মাছ ডিম ছাড়ার উপযোগী মনে করেনি। এবার মাত্র ১০৫টি নৌকা ডিম আহরণ করেছে। যা আমাদের জন্য অশনি সংকেত।

হাটহাজারী মদুনাঘাটের একটি  হ্যাচারীতে  পোনা সংরক্ষণ করা হচ্ছে।  ছবি: উজ্জ্বল ধর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মনজুরুল কিবরীয়া বাংলানিউজকে বলেন, সরেজমিন দেখে এবং পোনা সংগ্রহকারীদের তথ্য অনুযায়ী প্রাথমিক হিসাবে ১ হাজার ৬৮০ কেজি মাছের ডিম আহরণ করা সম্ভব হয়েছে এবার। এর মধ্য থেকে মাত্র ২৮ কেজি রেণু পাওয়া যাবে। সব ডিম থেকে রেণু ফুটবে না, অনেক ডিম নষ্ট হবে। প্রতি কেজি রেণুতে চার-পাঁচ লাখ মাছের পোনা জন্মাবে। স্বাভাবিকভাবে এবার হালদার পোনার দাম বেশি হবে।

হাটহাজারী ও রাউজানের ডিম সংগ্রহকারী মো. শফিউল, মো. লোকমান, কামাল সওদাগর, সজল বড়ুয়াসহ বেশ কয়েকজন জানালেন ভাটার সময় ডিম ছেড়েছে মা-মাছ। ভাটার স্রোতের সঙ্গে সঙ্গে মা-মাছও ডিম দিতে দিতে মদুনাঘাটের দিকে চলে আসে। একেকজন ডিম সংগ্রহকারী আধা বালতি থেকে কয়েক বালতি ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন। তবে রাতের বেলা হওয়ায় ডিম সংগ্রহ করে সুবিধা করতে পারেননি অনেকে।  

হাটহাজারীর মদুনােোটের একটি হ্যাচারীতে হালদা থেকে সংগৃহিত ডিম সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই হালদা নদী পরিদর্শনে যাবেন জানিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মমিনুল হক বাংলানিউজকে জানান, ডিম ছাড়ার পর মা-মাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সুযোগে অতীতের মতো যাতে কেউ মা-মাছ শিকার করতে না পারে সে জন্য হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে হালদা নদীতে টহল দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় পুলিশকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।

নমুনা ডিম ছেড়েছে হালদার মা-মাছ

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭

এআর/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad