বুধবার (২৯ মার্চ) দুপুরে দামপাড়া পুলিশ লাইন মাঠে চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্যদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. সেন বলেন, আমাদের পুলিশ প্রধান ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন ‘আমরা জঙ্গি নির্মূল করতে পারিনি, কিন্তু জঙ্গি তৎপরতা আমরা কনট্রোলে রেখেছি।
স্বাধীনতাযুদ্ধে পুলিশের অনেক বিস্মৃত অধ্যায় উন্মোচিত হচ্ছে জানিয়ে ড. সেন বলেন, একাত্তরে ৩০ লাখ লোক আত্মাহুতি দিয়েছেন। সেখানে পুলিশের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে। বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে এসপি শামসুল হককে নিয়ে আসা হয়েছিল। স্বাধীনতাযুদ্ধ সংগঠিত করতে কী পরিমাণ পরিশ্রম করেছেন। আকরাম গ্রেফতার হন এবং তাকে হত্যা করা হয়। ৮১ জন পুলিশ শহীদ হন। কোতোয়ালি থানার ওসি খালিদ সাহেবকে জিপের পেছনে বেঁধে রাস্তা দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তার হাড়গোড় ছিল, তিনি জীবিত ছিলেন না। নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল তাকে। আমি নিজের চোখে দেখেছি।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহা. শফিকুল ইসলাম ও নগর পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহার। সভাপতিত্ব করেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) ফারুক আহমেদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংবর্ধনা কমিটির সদস্যসচিব ও চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিট কমান্ডার মো. সাহাবউদ্দিন, মহানগর ইউনিট কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি নিরুপম দাশগুপ্ত, এসআই আবুল কাশেম প্রমুখ। অতিথিরা ৭৬জন মুক্তিযোদ্ধা-পুলিশদের হাতে সম্মাননা স্মারক ও উপহারসামগ্রী তুলে দেন।
মো. ইকবাল বাহার বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় পূর্ব পাকিস্তান পুলিশের সদস্য ছিল ৩৩ হাজার ৯৯৫ জন। এর ভেতরে ১৪ হাজার পুলিশ পাকিস্তান সরকারের আনুগত্য পরিত্যাগ করে কর্মস্থল ত্যাগ করেছিল। ধরে নেওয়া যায় তাদের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছে। কষ্টের বিষয় আছে। এর ভেতরে ১ হাজার ১৫০ জন মুক্তিযুদ্ধে জীবন আত্মাহুতি দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা পুলিশের সংখ্যা মাত্র ৩ হাজার ১০০ জন। কারণ অধিকাংশ পুলিশ সদস্যের যেহেতু প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল না, হয়তোবা কোনো প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে উপস্থিত হননি, হয়তোবা তাদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। তাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে আজ তারা মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত। তবে খুব বেশি গর্বের বিষয় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে প্রথম যে বুলেটটি নিক্ষেপ হয়েছিল রাজারবাগ থেকে সেটি পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে হয়েছিল।
মো. সাহাবউদ্দিন বলেন, একাত্তরে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা ছিল দেশপ্রেমিকের। চট্টগ্রাম এসপি শামসুল হকসহ অনেক কর্মকর্তাকে নির্বিচারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। অধিকাংশ পুলিশ সদস্য স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন এটি পুলিশ বাহিনীর জন্য গৌরবের।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যদি ক্ষমতায় না থাকে তবে শাহ আজিজ, গোলাম আজম, সাকা চৌধুরীর গাড়িতে পতাকা দেওয়ার মতো মুক্তিযোদ্ধাদের উল্টো বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। পুলিশ একাত্তরে শুধু নয় এখনো দেশের সংকটময় মুহূর্তে জীবন দিয়েছে-দিচ্ছে। আমি পুলিশ বাহিনীকে স্যালুট জানাই।
মোজাফফর আহমদ বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে একটি স্পিড কাজ করে। বয়সের কথা ভুলে যান তারা। দেশের প্রয়োজনে ডাক পড়লে মুক্তিযোদ্ধারা আবার ঝাঁপিয়ে পড়বেন। পুলিশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবেন। মুক্তিযোদ্ধারা এখনো দেশ বাঁচাতে জীবন দিতে এক সেকেন্ড দেরি করবেন না।
নিরুপম দাশগুপ্ত বলেন, সরকার ও রাষ্ট্রকে অকার্যকর করতেই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। জঙ্গিদের হামলায় সিলেটে দুজন পুলিশ প্রাণ দিয়েছে। পুলিশ এখন দেশের অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় অবর্তীর্ণ হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৭
এআর/আইএসএ/টিসি