বুধবার (২৯ মার্চ) চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ও শিশু বিষয়ক বিশেষ আদালতের বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস একুশকে জিম্মার এই আদেশ দেন। আদেশে বিচারক চার দফা শর্তও উল্লেখ করেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি অতিরিক্ত মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট এম এ ফয়েজ বাংলানিউজকে জানান, শর্তের মধ্যে আছে, জিম্মায় পাওয়া আবেদনকারীকে শিশুটির নামে ১০ লাখ টাকার শিক্ষাবীমা করতে করে প্রমাণপত্র ৫ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে জমা দিতে হবে। তাকে ১৫ দিন পর পর আদালতে এসে শিশুটির সর্বশেষ শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানাতে হবে।
এছাড়া শিশুটির প্রকৃত মা-বাবা পাওয়া গেলে প্রমাণসাপেক্ষে তাদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য থাকবেন বলে আদালত আদেশে উল্লেখ করেছেন।
আদেশ দেয়ার সময় শিক্ষাবীমার বিষয়ে আদালতের কাছে জানতে চান জেষ্ঠ্য আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী। জবাবে আদালত বলেন, শিক্ষাবীমা অবশ্যই শিশুর নামে হবে। অন্য কেউ এই বীমার উপর কোন ধরনের দাবি রাখতে পারবে না।
শিশু একুশকে জিম্মায় পেতে মোট ১৬ জন আবেদন করেছিলেন। চারজন অনুপস্থিত থাকায় ১২ জনের শুনানি গ্রহণ করেন আদালত। আদেশ দেয়ার সময় ৯ জন আবেদনকারী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে ৮ জনই নি:সন্তান।
আবেদনকারী ১২ জনের মধ্যে ১১ জন নি:সন্তান উল্লেখ করে আদালত আদেশ দেয়ার সময় বলেন, এর মাঝেও আমাকে একজন নি:সন্তান খুঁজে পেতে হয়েছে। সবার মাঝে একজনকে খুঁজতে গিয়ে আমি নিজেও ব্যথিত হয়েছি। আমার কাছে যদি অনেক শিশু থাকত তাহলে আমি সবার জিম্মায় একটি করে সন্তান দিতাম।
আদেশ দেয়ার সময় বিচারক বলেন, আমি কোন মহামানব নয়। হয়ত এই আদেশে আমি আপনাদের সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারব না। তবে আল্লাহকে যেন সন্তুষ্ট করতে পারি। মানুষের বিচার করবে আল্লাহ।
বিচারক বলেন, এই আদেশ দিতে গিয়ে আমাকে খুনের মামলা থেকেও বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে। অনেক আবেদনকারী শিশুটিকে সম্পত্তি দেয়ার বিষয়ে অনেক কিছুই উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয়েছে শিশুটির সামগ্রিক কল্যাণই মূল বিষয়। এজন্য সব আবেদনকারীর মধ্যে শাকিলার জিম্মায় শিশুটিকে দেয়ার বিষয় আমার কাছে সমীচীন মনে হয়েছে।
আদালত আদেশ পাঠ করার সময় উপস্থিত আবেদনকারী নারীদের প্রায় সকলেই কান্না করছিলেন। ঘোষণার পর শাকিলা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
শাকিলার আইনজীবী জাহিদ মো.আল ফয়সাল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আদালত যেসব শর্ত দিয়েছেন সেগুলো যথাযথভাবে প্রতিপালন করে শিশুটিকে জিম্মায় নেয়া হবে।
আদালত থেকে বেরিয়ে শাকিলা সাংবাদিকদের বলেন, একজন মা সন্তানকে যেভাবে লালনপালন করেন আমি সেভাবেই তাকে বড় করে তুলব। আমি খুব খুশি। এর চেয়ে বড় পাওয়া আমার কাছে আর কিছু নেই।
শাকিলার স্বামী ডা.মো.জাকিরুল ইসলাম বলেন, আমার অনেক আনন্দ হচ্ছে। এটা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। মনে হচ্ছে দীর্ঘদিনের খরার পর বৃষ্টি হয়েছে। আমি এই বাচ্চার দায়িত্ব পেয়েছি, এজন্য নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে যারা একুশকে পাবার জন্য আবেদন করেছিলেন, তাদের প্রতিও আমাদের সহানুভূতি থাকবে। যেহেতু তারাও একুশকে পাবার জন্য আবেদন করেছিলেন, তারা যদি একুশকে ভালবাসতে চান আমাদের কাছে এসে আমরা সাদরে গ্রহণ করব।
‘আমরা একুশকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই যেন সে রাষ্ট্রের সম্পদ হতে পারে। ’ বলেন জাকিরুল
গত ২০ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) রাত ১২টার দিকে নগরীর কর্ণেলহাট এলাকার লাইফ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার সংলগ্ন ড্রেন থেকে নবজাতকটিক উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আছে।
একুশের রাতে উদ্ধার হওয়ায় আকবর শাহ থানার ওসি আলমগীর মাহমুদ এর নাম রাখেন ‘একুশে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৭
আরডিজি/টিসি