ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘মৃত্যুকূপ’ বেছে নেয় ভাড়ায়

সুবল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৭
‘মৃত্যুকূপ’ বেছে নেয় ভাড়ায় শতাধিক পরিবারের হাজারো নারী-পুরুষ মতিঝর্ণা, বাটালী পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করছে

চট্টগ্রাম:  ‘সীমিত আয়ের লোক আমরা। এ মতিঝর্ণা এলাকায় কম ভাড়ায় বাসা পাওয়া যায়। তাই এখানে থাকি। শহরের অন্যখানে থাকলে তো ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার নিচে কোন বাসা ভাড়া পাওয়া যায় না।’

নগরীর লালখান বাজারের মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত শাহ আলম বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন।
 
শুধু শাহ আলম নয়, এরূপ শতাধিক পরিবারের হাজারো নারী-পুরুষ মতিঝর্ণা, বাটালী পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করেই দিনাদিপাত করছেন।
তাদের সকলের একটাই চাওয়া কম ভাড়ায় কোনমতে শহর এলাকায় থাকা।
 
তবে মতিঝর্ণা এলাকার পাহাড়ি কিছু অংশ শহরের মাঝে যেন একখণ্ড গ্রাম।
গ্রাম্য পরিবেশেই তাদের বসতি। পাহাড় কেটে তৈরি করা অনেক বাসা-বাড়িতে গরু ও মুরগি পালন করতে দেখা গেছে।
 
একই এলাকার আবদুল গণি বাংলানিউজকে জানান, জন্মের পর থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে আব্বুর সাথে নোয়াখালী থেকে মতিঝর্ণা এলাকায় এসে বসবাস করছি। আগে তো এখানে পাহাড়বেষ্টিত ছিল। বর্ষা মৌসুমে মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড়ধস হতে হতে এখন খুব একটা পাহাড় নেই বললেই চলে। সব ঘর-বাড়ি। এখানে হাজারো মানুষজন বাস করছে। খুব কষ্ট করে পিডিবি থেকে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছি। স্থানীয় কয়েকজন মিলে গভীর নলকূপ বসিয়েছি। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় একটু আতঙ্ক থাকলেও পুরো সময়জুড়ে এলাকার সবাই ভালো থাকি।
 
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছিয়া খাতুন, হাবিবুল হাসান ও মাহমুদ উল্লাহ মারুফ মতিঝর্ণা ও বাটালী পাহাড় এলাকায় অভিযানে যান। এসময় তারা ওই এলাকায় বসবাসরতদের সচেতনতামূলক নানান পরামর্শ দেন এবং ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে তাদের সরে গিয়ে অনত্র চলে যেতে অনুরোধ করেন।
 
ওই এলাকায় বসবাসরত মায়া বেগম (৬০) নামে এক স্থানীয় নারীকে ডেকে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছিয়া খাতুন বলেন, ‘আপনারা এ ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে কেন বসবাস করছেন?
 
উত্তরে মায়া বেগম জানান, ‘২০-২৫ বছর আগে থেকে নোয়াখালী থেকে এসে আমরা মতিঝর্ণা এলাকায় এসে বাস করছি। আমার তিন মেয়ে এক ছেলে সন্তান ছিল। কিছুদিন আগে অসুখে আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে মারা গেছে। শুধু বর্ষা মৌসুম আসলেই ম্যাজিস্ট্রেট এসে বলে, আপনারা উঠে যান। আমরা কোথায় যাবো। আমাদের তো কোনো ভিটে বাড়ি নেই। ’
 
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুল হাসান বাংলানিউজকে জানান, সরকার প্রকৃত ভূমিহীনদের আবাসনের ব্যবস্থা করছে। এরপরেও যদি মতিঝর্ণা ও বাটালী পাহাড়ের পাদদেশ ঝুঁকিপূর্ণভাবে অসংখ্য লোকজন বসবাস করছে। বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসে এ এলাকায় বেশ কিছু প্রাণহানি হয়েছে। তবুও তারা এখানে বসতি করছে। জেলা প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে আমরা তাদের প্রথমবার সতর্ক করেছি। এভাবে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসতি না করে অনত্র গিয়ে বসতি করার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। এরপরেও তারা এখানে থাকলে পরবর্তীতে তাদের উচ্ছেদ করা হবে।
 
তবে স্থানীয় আবুল খায়ের জানালেন ভিন্নকথা। তিনি বলেন, ‘গত ৮ বছর আগে সরকারি খাসজমিতে বসবাস করার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের পরামর্শে জেলা প্রশাসনে আবেদন করেছি। অনেকবার ডিসি অফিসে আসা-যাওয়া করেছি। কিন্তু নানা অজুহাতে তারা আমাদের এখনো সঠিকভাবে কিছু জানায়নি। আমরা তো প্রকৃত ভূমিহীন। স্বল্প আয়ে সংসার চালাই। মতিঝর্ণা এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে এক হাজার টাকা থেকে তিন হাজারের মধ্যে টিনশেড বাসা ভাড়া পাওয়া যায়। তাই ঝুঁকি নিয়ে নিরূপায় হয়ে এখানেই থাকি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৭
এসবি/টিসি
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।