গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর আলোচনায় আসা চার বোনের রোগ শনাক্তের উদ্যোগ নিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক অধ্যাপক ডা.নাসির উদ্দীন মাহমুদ। তবে রোগ শনাক্তের মূল কাজটি সম্পন্ন করেন সুইজারল্যান্ডের লসন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল জেনেটিক ল্যাবের প্রধান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডা.জহিরুল আলম ভূঁইয়া।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) নগরীর একটি অভিজাত ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে চার বোনের রোগ শনাক্তের বিষয় প্রকাশ করেন তারা। বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) উদ্যোগে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে জন্মান্ধ তৃতীয় বোন উম্মে তাসলিমা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা.নাসির উদ্দীন মাহমুদ বলেন, ছয় মাস ধরে পরীক্ষানিরীক্ষার পর আমরা তাদের লিবার কনজেনিটাল অ্যামারোসিস শনাক্ত করতে পেরেছি। বাংলাদেশে এই ধরনের রোগী অতীতেও ছিল, এখনও অনেকে হয়ত আছে। কিন্তু তারা কখনও ফোকাস হয়নি। সম্ভবত এরা চার বোন বলে বিষয়টি নজরে এসেছে। এজন্য প্রথমবারের মতো জন্মান্ধ হওয়ার রোগ শনাক্ত করা গেছে।
ডা.জহিরুল আলম ভূঁইয়া বলেন, আমাদের প্রত্যেকের শরীরে ২২ থেকে ২৩ হাজার জিন আছে। সিঙ্গাপুরের ল্যাবে ২৩ হাজার জিন স্ক্রিনিং করার পর এসপিএটিএ-৭ নামে একটা জিন পেলাম যেটা নন ফাংশনাল। এই জিন চোখের রেটিনা থেকে ব্রেইনের মধ্যে সিগন্যাল দেওয়ার যে ক্ষমতা সেটা নষ্ট করে দিয়েছে।
‘তারা বাবার কাছ থেকেও খারাপ জিনটা পেয়েছে। মায়ের কাছ থেকেও খারাপ জিনটা পেয়েছে। কারণ তাদের বাবা-মা আপন খালাতো তারা হয়ত জন্ম থেকে অথবা জন্মাবার মাস দুয়েকের মধ্যে অন্ধ হয়ে গেছে। ’ বলেন জহিরুল আলম
এই ধরনের রোগি পাকিস্তান এবং ভারতেও অতীতে পাওয়া গেছে বলে জানান জহিরুল।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান মো.আল ফোরকান বলেন, পরিবেশগত প্রভাবের কারণে জিনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য বিয়ের আগে পুরুষ কিংবা মহিলা সবার স্ক্রিনিং আউট করে নেয়া উচিৎ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাবে মাত্র ২-৩ হাজার টাকা খরচে আমরা এটা করে দিচ্ছি।
নাসির উদ্দীন মাহমুদ জানান, সাংবাদিক রেজা মুজাম্মেলের মাধ্যমে চার বোনের পরিবারকে খুঁজে নেন তিনি। এরপর চার বোনসহ তাদের পরিবারের সাতজনের রক্ত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সুইজারল্যান্ডে জহিরুলের কাছে পাঠান।
সংবাদ সম্মেলনে উম্মে তাসলিমা চৌধুরী বলেন, আমাদের কখনোই ইচ্ছা ছিলনা যে আমরা এটাকে শনাক্ত করাব। কারণ আমরা অন্ধত্বকে জয় করেছি। তবে রোগ শনাক্ত হওয়াটা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যথেষ্টভাবে কাজ করবে। রাষ্ট্রের কাছে আবেদন, আমাদের জন্য চলাচলের পথগুলো যদি সহজ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা.লায়লা আরজুমান্দ বানুও উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ১৬ মার্চ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমে ‘জন্মান্ধ তিন বোন, ছড়াচ্ছে আলো’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। জন্মান্ধ চার বোনের সবাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী। তিনজন পটিয়ার তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৭
আরডিজি/টিসি