ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘৪০ বছরের মধ্যে দেশের এক-তৃতীয়াংশ সমুদ্রে হারাবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৭
‘৪০ বছরের মধ্যে দেশের এক-তৃতীয়াংশ সমুদ্রে হারাবে’ ৩০ লক্ষ শহীদ স্মরণে সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শাহরিয়ার কবির। ছবি: সোহেল সরওয়ার-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে আগামী ৪০ বছরের মধ্যে দেশের এক-তৃতীয়াংশ সমুদ্রে হারিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সভাপতি, লেখক-সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবির।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের পিএইচপি ভিআইপি লাউঞ্জে '৩০ লক্ষ শহীদ স্মরণে ৩০ লক্ষ বৃক্ষরোপণ’ কর্মসূচি নিয়ে সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ মন্তব্য করেন ‍তিনি।

শাহরিয়ার কবির বলেন, বিশ্বে তাপ-উষ্ণতা বাড়ছে।

এর এক নম্বর ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ৪০ বছরে দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ গৃহহীন হবে।
এর একমাত্র প্রতিষেধক গাছ লাগানো। বৃক্ষ উষ্ণায়নকে প্রতিরোধ করে। আমাদের মোট আয়তনের ২৬ ভাগ বনভূমি দরকার। আছে ১১ ভাগের কম। প্রতিবেশী দেশ ভারতের ২২ ভাগ, মিয়ানমারে ৪৮ ভাগ, ভুটানে ৬৯ ভাগ বনভূমি আছে।

তিনি বলেন, এতদিন একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ, সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, মৌলবাদী সন্ত্রাস, গণহত্যা ইত্যাদি সামাজিক-মানবিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে নির্মূল কমিটি। এখন তার সঙ্গে প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধে বছরে ৩০ লাখ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি। এসব গাছ হবে শহীদদের নামে। তাহলে গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণে মানুষ যত্নবান হবে। যার জমিতে গাছ লাগানো হবে তিনিই হবেন গাছের মালিক। তবে শর্ত থাকবে ২০-৩০ বছরের আগে ওই গাছ কাটা যাবে না এবং একটি গাছ কাটলে দুটি লাগাতে হবে। ৩০ লক্ষ শহীদ স্মরণে সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে শাহরিয়ার কবির

আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের সুযোগ বাংলাদেশ হারিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমাদের উচিত একাত্তরের নয় মাসের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য সরকার, আমাদের মতো সংগঠন ও প্রবাসী বাঙালিদের সম্মিলিত উদ্যোগ ও কৌশল নির্ধারণ করা। ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস করার জন্য আমরা ইউনুস্কোকে চিঠি দিয়েছিলাম প্রায় ১৫ বছর আগে। ২০১৫ সালে আর্মেনিয়া থেকে জানতে চাইল, তোমরা যে জাতিসংঘকে অনুরোধ জানিয়েছ ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ঘোষণার জন্য, তোমরা সরকারিভাবে দিবসটি পালন করো কিনা। তখন তো আমরা পালন করতাম না। ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার ব্যাপারে বাংলাদেশ জাতিসংঘে বসে সম্মতি জানিয়ে সই করেছিল। এখন যদি ২৫ মার্চকে ঘোষণার দাবি জানাই তবে সেটি হাস্যকর হবে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি যতটা সহজে পেয়েছি গণহত্যা দিবসের ক্ষেত্রে পাকিস্তান, আমেরিকা, তথাকথিত মুসলিম উম্মাহ বিরোধিতা করবে। তাই আমাদের যারা একাত্তরে গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছিল সেই পরীক্ষিত বন্ধু দেশগুলোর সম্মতি নিয়ে প্রস্তাব দিতে হবে। এক্ষেত্রে ভারত একাত্তরের ২৭ মার্চ রেডিওতে বলেছে বাংলাদেশে গণহত্যা-গৃহযুদ্ধ চলছে বলে খবর প্রচার করেছিল। নেপাল, ভুটান, প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন, বুলগেরিয়া, সোমালিয়া এসব দেশ একাত্তরে গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়েছিল।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক লেখক-সাংবাদিক শওকত বাঙালির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিট কমান্ডার মো. সাহাবউদ্দিন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার ও সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি সহকারী কমিশনার ইশতিয়াক আহমদ প্রমুখ।

মো. সাহাবউদ্দিন বলেন, আমাদের শহীদ মিনার, বধ্যভূমি, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজনকে নিয়ে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে। শহীদ স্মরণে গাছ লাগানোর উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয় তবে গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট কাঠামো, পরিকল্পনা থাকতে হবে।

উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, ইতিহাসের খসড়া সম্পাদক মুহাম্মদ শামসুল হক, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, যুবনেতা হেলাল উদ্দিন, সাতকানিয়ার পৌর মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের, যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, অর্থ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক প্রমুখ।

২৫ মার্চ গণভবনে গাছ লাগিয়ে '৩০ লক্ষ শহীদ স্মরণে ৩০ লক্ষ বৃক্ষরোপণ' কর্মসূচির উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৭
এআর/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।