চট্টগ্রাম একাডেমি আয়োজিত স্বাধীনতার বইমেলার তৃতীয় দিনে শনিবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় ‘মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি ও সমকালীন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মইনুল বলেন, এ ইতিহাসটা যদি আমরা ঠিকমতো ধারণ না করি এবং আমাদের সমরপ্রভু জিয়াউর রহমান ও এরশাদের শাসনকে যদি ঠিকমতো চিহ্নিত করতে না পারি সরলভাবে সোজাভাবে না বলি ৩০ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবো না।
বেগম জিয়া কিছুদিন আগে ৩০ লাখ শহীদ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন উল্লেখ করে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, লজ্জা আর কাকে বলে। তিনবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া একজন নেত্রী বলছেন, বাংলাদেশে ৩০ লাখ হয়তো নিহত হয়নি।
ড. মইনুল বলেন, হামুদুর রহমান কমিশনের কথা, বাংলাদেশের হানাদার বাহিনীর ঘাতকদের কথা আর আমার সেই বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার কথা যখন মিলে যায় তখন বড় লজ্জা হয়। আজকের এ মঞ্চ থেকে আমি আবারও ধিক্কার জানাচ্ছি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের প্রধান বিরোধীদলটি এখনো যেভাবে ইতিহাস বিকৃতির আশ্রয় নিয়ে চলেছে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, তাদের দেশপ্রেম নিয়ে আমার সন্দেহ হয়।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশ পাকিস্তান হয়ে গিয়েছিল। জয় বাংলা এখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল চলে এসেছিল পাকিস্তান জিন্দাবাদ। বাংলাদেশ বেতার নামটা পছন্দ হয়নি, রেডিও পাকিস্তান চলে এসেছিল। প্রতিটা জায়গায় আপনারা দেখবেন জিয়াউর রহমান অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে তার আমলে এদেশকে পাকিস্তানে রূপান্তর করেছিল। শুধু তাকে বঙ্গবন্ধু হত্যার সুবিধাভোগী বললে হবে না।
খালেদা জিয়ার মিথ্যা জন্মদিন পালনের সমালোচনা করে ড. মইনুল বলেন, জিয়াউর রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার প্রচণ্ড ভুলবোঝাবুঝি হয়েছিল। খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টে অবরুদ্ধ ছিলেন। দুই দুইবার রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন ভারতে যাওয়ার। উনি যাননি। জিয়া যখন দেশে ফিরে আসেন, ছয় মাস ঘরে তোলেননি। স্ত্রীর মর্যাদা দেননি। উনি গিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসায় বসে থাকতেন। কান্নাকাটি করতেন। অতিষ্ঠ হয়ে তখন বঙ্গবন্ধু জিয়াকে ডেকে বলেন, ‘বৌমাকে এখনি তুমি বাসায় নিয়ে যাবে। ’ এরপর জিয়াউর রহমান ক্যান্টনমেন্টের বাসায় তুলেছেন। তাদের দাম্পত্যজীবন রক্ষার জন্য বঙ্গবন্ধুর অবদান খালেদা জিয়া ভুলে গেছেন। তিনি একটা মিথ্যা জন্মদিন পালন করেন ওই বঙ্গবন্ধুর হত্যা দিবসে। আমার কান্না আসছে বলতে। এ কী ধরনের মানুষ। কী ধরনের অকৃতজ্ঞ। তার তিনটি জন্মদিন আছে। প্রতিটি আমার গবেষণায় উঠে এসেছে।
সুপ্রভাত বাংলাদেশের উপদেষ্টা সম্পাদক কবি আবুল মোমেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন।
প্রধান অতিথি বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ কালো রাত থেকে দীর্ঘ নয় মাস যারা এদেশে গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচারের দাবিতে আন্তর্জাতিকমহলে জোরালো তৎপরতা চালাতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ বিশ্বের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। সেই ভাষণে তিনি স্বাধীনতার বার্তা দেশবাসীকে দিয়েছিলেন। ঐ ভাষণে একতরফা তথা সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল না। যদি থাকত নিয়মানুযায়ী বিশ্বের স্বীকৃতি পাওয়া যেত না। বঙ্গবন্ধু এটা জানতেন বলেই তিনি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন পরিচালনা করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু একমাত্র নেতা যিনি প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যারা লিখছেন অনেকের লেখায় বস্তুনিষ্ঠতার অভাব রয়েছে।
কবি মর্জিনা আখতারের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন সরকারি চারুকলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রীতা দত্ত। সূচনা বক্তব্য দেন একাডেমির পরিচালক সৈয়দা রিফাত আকতার নিশু।
বিকেলে ডিসি হিলে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে কয়েকশ শিশু-কিশোর রংতুলিতে মূর্ত করে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা আর বঙ্গবন্ধুকে।
** পাঠ্যবই নিয়ে বিরক্তি ও অশ্রদ্ধা তৈরি হয়ে যায়: পবিত্র
** চট্টলার ২৩ মনীষীর নামে কর্নার ডিসি হিলে
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৭
এআর/টিসি