ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘গরিবের চালের দামই বেড়েছে’

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৭
‘গরিবের চালের দামই বেড়েছে’ চরলক্ষ্যা মৌলভিবাজারের মুদি দোকানি নাছির উদ্দীন বললেন, এ চাল কিনেছি ৩৬ টাকা কেজি দরে

চট্টগ্রাম: ‘সিন্ডিকেট’র কারণে সপ্তাহখানেকের মধ্যে গরিবের চালের দামই বেড়েছে বলে মনে করছেন খুচরা বিক্রেতারা। তবে আমদানিকারক ও আড়তদারের (পাইকার) দাবি সরকার যদি চাল আমদানির ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স কমান তবে মোটা চালের দাম কমবে।

দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ে সরেজমিন পরিদর্শনে এসব কথা বলেন সংশ্লিষ্টরা।

নতুন চাক্তাইয়ের একটি পাইকারি দোকানে চাল কিনতে আসেন কর্ণফুলী থানাধীন চরলক্ষ্যা মৌলভিবাজারের মুদি দোকানি নাছির উদ্দীন।

পাইকারি দোকানের টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখা চালের একটি নমুনা দেখিয়ে বললেন, ৩৬ টাকায় এ চাল কিনেছি। আগে ছিল ৩৪ টাকা।
এ চালের পেছনে ১ টাকা খরচ। আট আনা (৫০ পয়সা পলিথিন), ৫০ পয়সা শ্রমিকের মজুরি। নদীর ওপারে ৩৮ টাকায় বিক্রি করবো। খুচরায় তো ৪০ পেরিয়ে যাবে।

তিনি জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে মোটা চাল বস্তাপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা বেড়েছে। আমাদের চট্টগ্রামের খুচরা ক্রেতাদের বেশিরভাগই মোটা আতপ কেনেন। বাইরের কিছু জেলার মানুষ সিদ্ধ চাল কেনেন। গরিবদের চালের দামই বেড়েছে। বিশেষ করে ভারত থেকে আমদানি করা চাল।

তিনি জানান, চরলক্ষ্যায় এখনো লেদু মাঝির বোটে করে চাক্তাই থেকে চাল নিয়ে যান তিনি। এক বস্তা চালের নৌকা ভাড়া ১৫ টাকা, এ পাড়ে ৭ টাকা শ্রমিকদের মজুরি, ওপারে ৮ টাকা। সড়কপথে হলে বস্তাপ্রতি ৪০ টাকা ভাড়া পড়ত। মোটা চালের দামই বেড়েছে বেশি

মেসার্স ব্রাদাস এন্টারপ্রাইজের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, কয়েক মাস আগে যে চিনিগুঁড়া চালের ৫০ কেজির বস্তা ছিল ৩ হাজার ৮০০ টাকা এখন তা ৩ হাজার টাকায় ঠেকেছে।  

তিনি জানান, মোটা ইরি আতপ ৩৬-৩৮ টাকা, মোটা সিদ্ধ ৩৫-৩৬ টাকা, চিকন স্বর্ণা সিদ্ধ ৩৮ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৩৬ থেকে বেড়ে ৩৮ টাকা হয়েছে। বালাম সিদ্ধ ৩৮ টাকা। নতুন ইরি ১ হাজার ৭৫০ টাকা। দেশি বেতি ১ হাজার ৯০০ টাকা। দিনাজপুরি পাইজাম আতপ ৪১ টাকা, মিনিকেট ৪৭ টাকা। জোড়া শঙ্খ মার্কা সুগন্ধি কাটারি ভোগ ৫৪ টাকা। সুগন্ধ ছাড়া হলে ৪৮-৫০ টাকা।  

পাইকারি চাল বিক্রেতা গৌতম রায় বাংলানিউজকে বলেন, তিনটি কারণে চালের দাম বেড়েছে। প্রথমত চাল আমদানির ওপর সরকার অস্বাভাবিক ভ্যাট-ট্যাক্স বসিয়েছে। দ্বিতীয়ত দেশে ধানের মৌসুমের শেষ সময়। তৃতীয়ত সিন্ডিকেট প্রচুর চাল মজুদ করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। চাক্তাইতে দেখুন চালের পাইকারি দোকানে ক্রেতা নেই। আমি বসে বসে মোবাইল টিপছি।

চাল আমদানিকারক মেসার্স মক্কা এন্টারপ্রাইজের কর্মকর্তারা জানান, ১০০ টন চাল আমদানিতে ৯ লাখ, ১ টনে ৯ হাজার, ১ কেজিতে ৯ টাকা ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। এরপর হিলি ও ভোমরা বন্দর থেকে চট্টগ্রামে চাল আনতে ট্রাকভাড়া দিতে হচ্ছে ৪০ হাজার টাকা। প্রতি ট্রাকে লোড হয় ১৮-২০ টন।

একজন আড়তদার বাংলানিউজকে জানান, একসময় চাক্তাই চালের পাইকারি বাজারের জন্য বিখ্যাত হলেও এখন বিভিন্ন স্থানে পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে পাহাড়তলীর চালের বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে। এ ছাড়া বহদ্দারহাট, কাঠগড়, আতুরার ডিপো, ইশান মিস্ত্রির হাট, কামাল বাজারসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট আড়ত গড়ে উঠেছে। যেখানে নওগাঁ, দিনাজপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, ময়মনসিংহের (মুক্তাগাছা) বিভিন্ন মোকাম থেকে সরাসরি চাল আসছে।

মোকামে নজর দিলেই চালের দাম কমবে

বাংলাদেশ সময়: ১২৫১ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৭

এআর/টিসি

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।